মদ খেলে পাপ, ঘুষ খেলে কি?
স্বাধীন পাকিস্তানের বয়স প্রায় ৪৮ বছর হতে চলেছে। বৃহৎ ভারতবর্ষের সঙ্গে থাকাকালীন সময়ে ওই অঞ্চলটি যতটা প্রতিক্রিয়াশীল ছিল, বর্তমানে তার তুলনায় অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীল দেশটি। ধর্মীয় জীবনযাপন থেকে শুরু করে রাজনীতির একেবারে নিচুস্তর পর্যন্ত এই প্রতিক্রিয়াশীলতাকে দেখা যায়। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে কিছুটা বের হওয়ার চেষ্টা করলেও, তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্নও স্তব্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে একের পর এক কালো কানুন ঘিরে ধরছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের যাপিত জীবন।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, পাকিস্তানে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয় সকল প্রকার মদের উৎপাদন এবং এর ব্যবহার। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত যে আইন প্রচলিত আছে তা মূলত ব্রিটিশদের প্রণীত আইন। আমরা দলিলগতভাবে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হলেও সার্বিক দিক দিয়ে কি তাদের কাছ থেকে স্বাধীন হতে পেরেছি, সেই প্রশ্নটি এখন নতুন করে তোলা প্রয়োজনীয়। কিন্তু হাজারো আইনের মাঝে আজও ফল দিয়ে মদ উৎপাদন করে যাচ্ছেন উত্তর পাকিস্তানের পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠি।
সমতলের মানুষের কাছে যা মদ হিসেবে স্বীকৃত, তা পাহাড়ের মানুষের কাছেও স্বীকৃতি কিনা সেটা বুঝে নিতে হবে আগে। জলবায়ু এবং ভৌগোলিক কারণে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই মদ তৈরির প্রচলন আছে। যেমনটা আমরা উত্তর পাকিস্তানে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়। চাষী আহসান বেলা থাকতে থাকতেই চলে যান পাহাড়ের উপরে যেখানে যত্নে করা হয়েছে আঙ্গুরের চাষ।
প্রতিবছর শরৎকাল অর্থাৎ ইংরেজি বছরের হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আহসান ও তার মতো অনেক তরুণ দলবেধে পাহাড়ে যায় আঙ্গুর তুলতে। লোকচক্ষুর আড়ালে অনেক কষ্ট করে এই আঙ্গুরের চাষ করতে হয়েছে তাদের। কেউ যদি জেনে যায় এবং সরকারি কর্মকর্তাদের খবর দেয়, তাহলে আর্থিক জরিমানা থেকে শুরু করে কারাগারেও যেতে হতে পারে আহসানদের।
সবুজ এবং কিছুটা লাল হয়ে আসা আঙ্গুরগুলোকে তুলে নিয়ে যায় আহসানরা। এরপর সেই আঙ্গুরগুলোকে ঝর্নার শীতল পানি দিয়ে ধুলে একটি সিমেন্টের ট্যাঙ্কে রাখা হয়। সেই ট্যাঙ্কে থাকাকালীন সময়েই আঙ্গুরগুলোকে থেতো করে দেয়া হয় এর ভেতরের রস বের করার জন্য। এভাবে সবগুলো আঙ্গুর থেতো করার পর বাড়তি অংশগুলো তুলে নির্ধারিত কিছু গাছগাছরা দিয়ে পাহাড়ের খুব গভীরে এবং গোপন স্থানে রেখে আসা হয় ওই মদ। বনের মধ্যে মাটির তলায় থাকা ট্যাঙ্কে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে একটা সময় পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়ে যায় মদ।
আমরা আমাদের বাবা এবং দাদাদের কাছ থেকে মদ বানানো শিখেছি। তারা সর্বদাই এই মদ বানাতো।’ মুখে হাসি নিয়ে হাত দিয়ে আঙ্গুর থেতো করতে করতে এই কথাগুলো বলছিলেন আহসান। তার যখন মাত্র আট অথবা নয় বছর বয়স তখনই তিনি মদের স্বাদ গ্রহন করেন। আহসানদের গ্রামের অধিবাসীরা প্রায় সকলেই ধর্মে মুসলিম। ১৬ শতকের দিকে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এর আগে মূলত তারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিল। সেই আমল থেকেই মূলত তারা মদ তৈরি করতে শেখে। এরপর তাদের ধর্ম বদল হলেও, বদলায়নি তাদের মদ বানানোর কৌশল।
৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ হাসান। এই বয়সেও তিনি নিজের হাতে মদ বানানোর কাজ করেন। এটা যে তিনি অর্থের জন্য করছেন তা নয়, বরংচ অতীত ঐতিহ্য এবং বাহিরের কেমিক্যালজাত মদ যেন তাদের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যও তিনি প্রাকৃতিক উপায়ে বানানো মদ ধরে রেখেছেন। হাসানের ভাষায়, আগে আঙ্গুর তোলার সময় হলে আগে একটি পশু বলি দেয়া হতো। বলি দেয়ার পর প্রার্থনা শেষ করার পরেই তবে গাছ থেকে আঙ্গুর তোলা হতো। হাসান আরও বলেন, ‘আঙ্গুরের রস গাজন শেষ হয়ে গেলে আমরা মাটির তলায় পাথুরে ট্যাঙ্কে রেখে দেই। যে কেউ চাইলেই কিন্তু মদ খেতে পারে না। অনেকেই আছেন যারা এটা হজম করতে পারে না এবং অনেকেই এর জন্য লড়াই করতেও চায়। ওয়াইন এবং মদ মানুষের মধ্যে ভালোবাসা এবং বিনম্রতাকে পরিপুষ্ট করে।’
শেষ করছি আনোয়ার নামের এক গ্রামবাসীর বক্তব্য দিয়ে। আনোয়ার হলো ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে দরবেশসম একজন ব্যাক্তি। গীত-বাদ্য এবং নৃত্যকে উপজীব্য করে তার জীবন কাটে। তার ভাষায়, ‘আপনারা বলেন যে মদ খাওয়ার কারণে আমার প্রার্থনা পূরণ হচ্ছে না, কিন্তু আপনি যে ঘুষ খাচ্ছেন তাতে কিছু হচ্ছে না?’
বয়স ১২০ পেরিয়ে তবুও কেন ভিক্ষা করছে এই বৃদ্ধা?
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন