মধ্যপ্রাচ্যে নানামূখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি বাংলাদেশ
বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনায় এই শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
সৌদি-কাতার দ্বন্দ্বের মত আন্তর্জাতিক রাজনীতির পাশাপাশি অবৈধ প্রবাসী রুখতে সৌদি আরবের কঠোর ভূমিকা, দালাল-অপহরণ চক্রসহ নানা রকম সমস্যা মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের সম্ভাবনাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সুকৌশলে এই সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করা না হলে একদিকে যেমন শ্রমবাজার ধ্বংস হবে, অন্যদিকে কমবে প্রবাসী আয়।
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সংকট সৌদি-কাতার দ্বন্দ্ব। কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ এনে দেশটির সাথে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরবসহ চারটি মুসলিম দেশ। আর এতেই শংঙ্কার মধ্যে পড়েছে কাতার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ। কাতারে বর্তমানে ৩ লাখ ২৫ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছে। তার মধ্যে অধিকাংশই ব্যবসায়ী।
আর কাতারের এই ব্যবসায়ীরা কাঁচামালের জন্য অধিকাংশ সময়ই নির্ভর করে সৌদি আরবের ওপর। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ফলে স্থল্পপথে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দেয় তারা। ফলে বিপাকে পড়েছেন এই ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী ছাড়াও অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে কাতারে। বিশেষ করে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে অনেক দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক পাড়ি জমাচ্ছেন কাতারে। কিন্তু নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই সম্ভাবনায় ভাটা পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জোটভূক্ত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ যদি সৌদি আরবের পক্ষে অবস্থান নেয় তাহলে কাতারের সাথে সম্পর্কে অবনতি হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এর প্রভাব শ্রমিক নিয়োগে অবশ্যই পড়বে। আবার কাতারের পক্ষ নিলে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের রোষানলে পড়বে বাংলাদেশিরা। এমনিতেই আমিরাতের শ্রমবাজার দীর্ঘ দিন ধরেই প্রায় বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য, সৌদি আরবের শ্রমবাজারও দীর্ঘসময় বন্ধ থাকার পর মাত্র গত বছর থেকে খুলে দেয়া হয়েছে। তাই এই ইস্যুতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতার কঠিন পরীক্ষা হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, সৌদি আরবেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রবাসীরা। অবৈধ অভিবাসী এবং নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সৌদি সরকার। অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়ার সুযোগ না দিয়ে তাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে জুন মাসের মধ্যে দেশ ত্যাগে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও কঠোর হয়েছে তারা।
সম্প্রতি কর্মী নিয়োগে নিয়োজিত ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। বাকি ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশিদের ওপরও। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বাংলাদেশিরা এখন কাজের বৈধতা হারাবে। বৈধ শ্রমিক থেকে অবৈধ শ্রমিকে পরিণত হবে তারা। ফলে সৌদি সরকারের এসব সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির শ্রমবাজারে ক্রমশ নিজেদের অবস্থান হারাতে হতে পারে বাংলাদেশকে।
এর সাথে সাথে বিভিন্ন সংঘবদ্ধ চক্রের কারণেও প্রবাসে বিপদে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি অসাধু চক্র সে দেশে কর্মরত নিরীহ বাংলাদেশিদের নানাভাবে অপহরণ করছে। শুধু অপহরণই নয়, যাদের অপহরণ করছে তাদের থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করছে তারা।
আর যারা তাদের মুক্তিপণের টাকা দিতে পারছে না তাদের নেমে আসছে অকল্পনীয় অত্যাচার। এর ফলে একদিকে যেমন প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশে বসবাসরত তাদের আত্মীয়স্বজনরা। এর ফলে নানাবিধ আশংকায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা। আবার এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে সেই দেশগুলোতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের শ্রমবাজারে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এইসব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে আধিপত্য ধরে রাখা এখন একটা চ্যালেঞ্জ সেটা স্বীকার করছেন বিশেষজ্ঞরা। এইসব বহুমুখী প্রতিকূলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটুকু কূটনৈতিক দক্ষতা দেখাতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
যে কারনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্মেলন স্থগিত
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপিরবিস্তারিত পড়ুন
ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে চাপ !
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়েবিস্তারিত পড়ুন
বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার শ্রমিক নেবে সৌদি আরব
চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজারবিস্তারিত পড়ুন