মনোবিদদের মতেঃ মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য ১০ অভ্যাস একান্ত আবশ্যক !
আমরা প্রায়ই শারীরিক স্বাস্থ্যের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করি। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আপনি প্রতিদিনের কাজকর্ম ভালোভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হবেন। আর হঠাৎ কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও আপনি ভড়কে যাবেন না। মনোবিদদের মতে, নিচের কিছু অভ্যাস প্রাত্যহিক মেনে চললে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে।
* অভীষ্ট লক্ষে জেগে উঠুন : দৈনন্দিন একটি রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রুটিন মেনে চলুন। সবচেয়ে ভালো উপায়, আপনার প্রতিদিনের লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী কর্মপন্থার ওপর একটি ইতিবাচক নোট নিবন্ধ করে দিন শুরু করুন। যখন আপনি আপনার তালিকাবদ্ধ প্রতিটি কাজ শেষ করবেন তখন আপনি সফল এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বোধ করবেন। যারা নিয়মিত রুটিন অনুসরণ করে জীবনযাপন করেন তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকে।
* ব্যায়াম করুন : নিয়মিত ব্যায়াম করলে সব ধরনের রোগ-বালাই থেকেই মুক্ত থাকা যায়। গবেষকদের মতে, শারীরিক ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়, যা আমাদের ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে এই হরমোনের উৎপাদন আপনাকে রাখবে বিষণ্ণতা মুক্ত। যদি ব্যায়াম করতে না পারেন তবে হেঁটে আসুন খানিকক্ষণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট আপনার হার্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যায়াম করুন। বোনাস হিসেবে আপনি কর্মব্যস্ততা থেকে কিছু সময়ের মানসিক ছুটি পাবেন। শারীরিকভাবে সক্রিয়তা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার চাবিকাঠি।
*প্রকৃতির সঙ্গে মিশুন : ঘরে যদি কিছু করার না থাকে, তবে মন ভালো করতে সবুজ ঘাসে হাঁটতে বেরিয়ে যান। প্রকৃতির তাজা হাওয়ার সঙ্গে সবুজতা আপনার মনকে সতেজ করবে। ২০১০ সালে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’র এক সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়, প্রকৃতির সঙ্গে ৫ মিনিট সময় কাটালে একজনের আত্মসম্মান এবং মেজাজের উন্নতি ঘটে। দিনের আলোতে, বিশেষ করে সকালে হাঁটার অভ্যাস করলে শরীর ভিটামিন ডি-তে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
* যথাসময় বিছানাত্যাগ করুন : স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়ব্যাপী ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম নতুন করে কাজের উৎসাহ ও উদ্দীপনার জোগান দেয়। তবে স্বল্প বা অতিরিক্ত ঘুম দুটোই স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। স্বল্প ঘুমের কারণে মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। কমে যেতে পারে কর্মজীবী মানুষের কর্মস্পৃহা। সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমানো দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। ঘুম প্রতিদিন আপনার দেহের শারীরিক নানা শূণ্যস্থান পূরণ করে এবং দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখাসহ নানা কাজে লাগে। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানুষের বিশ্রাম ও স্বস্তি হয়। ফলে বড় কোনো কাজের জন্য মানসিক প্রস্ততি নেওয়া সহজ হয়।
* ইতিবাচক দিকগুলো ভাবুন : নিজেকে ইতিবাচক রাখুন। নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা মানুষকে মানসিকভাবে হতাশ করে। পজিটিভ চিন্তা মানুষকে সুখের কাতারে বসায়। জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ, প্রতিকূলতা জয় করার একটাই মূলমন্ত্র ইতিবাচক ভাবনা।
* হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করুন: সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জড়িয়ে ধরার মতো আন্তরিক ব্যবহার মানসিক চাপ থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখে। গবেষকদের দাবী, জড়িয়ে ধরলে মানুষ সহজে অন্যের সঙ্গে আন্তরিক হতে পারে, সে বুঝতে পারে তাকে সমর্থন দেয়ার মতো কেউ আছে। চারপাশের লোকদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরা হতে পারে আপনার বন্ধুমহল, পরিবার এবং সহকর্মীরা। মানসিক চাপের সময় পিঠে কিংবা মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলে, হাতে হাত রাখলে অথবা জড়িয়ে ধরলে আপনি চাপমুক্ত বোধ করবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের আন্তরিক ব্যবহার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আরো ভালো রাখতে সাহায্য করে।
* শয়নকাল রুটিন তৈরি করুন : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমুতে যান এবং ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিনকার রুটিন এমনভাবে তৈরি করুন যাতে কাজ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হয়। এর পরই ঘুমুতে যান। ঘুম না আসতে চাইলে হালকা গান শুনুন, মেডিটেশন করুন অথবা একটি বই পড়ুন। চাপমুক্ত হলে আপনার ঘুম চলে আসবেই। এভাবে রুটিন মেনে চলা আপনাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং বিষণ্ণতা থেকে দূরে রাখতে পারবে।
* প্রযুক্তি ব্যবহার কমিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করুন : আজকাল মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়ার একটি বড় কারণ হল, প্রযুক্তির অতি ব্যবহার। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এর মাধ্যমে লোকের সঙ্গে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, মতবিনিময় এবং আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সারাক্ষণ ইন্টারনেট, ফোন, ট্যাব এবং কম্পিউটার ও ল্যাপটপসহ অন্যান্য ছোটখাটো প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকলে বাস্তবিক যোগাযোগের কোনো সময় পাওয়া যায় না। বরং অফলাইনে এসে বাস্তবে সরাসরি মানুষের সঙ্গে বসুন, মতবিনিময় এবং আলাপ-আলোচনার ফাঁকে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া সেরে নিতে পারেন। এভাবে আপনার মন বিবর্তনীয় সুখী জায়গায় পৌঁছবে। কিছু সময়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে বিছিন্ন হন অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে থেকে সব ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করুন।
* বিরতি নিন : যদি আপনার ব্যস্ততম যান্ত্রিক জীবনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্তত কিছু সময়ের বিরতি নেয়ার চর্চাটা করতে পারেন, তবে আপনি আপনার কাজে খুব ভালো দক্ষতা দেখাতে পারেন। মানসিক চাপ আপনার কাজের ক্ষতি করে, তাই সেটা কমানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সময় বের করে ঘুরে আসুন কোনো জায়গা থেকে। শরীরকে শিথিল রাখতে গোসল করতে পারেন। পার্লারে বা স্যালুনে গিয়ে মানসিক চাপ কমাতে পারে এ রকম ম্যাসেজ করান। এভাবে আপনি জীবনের চাপ মোকাবেলা করার একটি ভালো পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
* হঠাৎ রেগে যাবেন না : মাঝে মাঝে আমরা রেগে যেয়ে কিংবা অন্যের কোনো কথা বা কাজের বিপরীতে নিজেরা কিছু চিন্তা না করেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলি। যার ফলে স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ ক্ষতিটা নিজেরই হয়। যদি আপনার পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হয় তাহলে আপনি শান্তভাবে এবং যুক্তিযুক্তভাবে সম্ভাব্য বিকল্প উপায় খুঁজুন।
আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত আমাদের আবেগ তাড়িয়ে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অত্যাধিক কাজের চাপ, ক্রমবর্ধমান চাহিদা, পারিবারিক সমস্যা, সময়ের অভাব ইত্যাদির জন্য মানসিক চাপ ব্রেনের ওপর ভীষন ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এমনকি অতিরিক্ত চাপের ফলে উচ্চরক্তচাপ, পক্ষাঘাত এবং হৃদপিন্ডের আকস্মিক অচলাবস্থা বা স্ট্রোকও হতে পারে। তাই এসব ছোটখাটো অভ্যাস প্রাত্যহিক মেনে চললে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে আর আপনি নিরাপদ থাকবেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন