বিবিসির বিশ্লেষণ
মমতার প্রস্তাব কি তিস্তা চুক্তি পেছানোর কৌশল
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত তিস্তা সমস্যার সমাধানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দেয়া বিকল্প প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে ইতিমধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। মমতা ব্যানার্জির প্রস্তাব হল- তোর্সা বা ধরলার মতো উত্তরবঙ্গের অন্য নদীগুলো থেকে বাড়তি জল এনে তিস্তার প্রবাহ বাড়ানো যেতে পারে- কিন্তু তার জন্য যে খাল কাটতে হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের মধ্যে আশঙ্কা আছে। তাছাড়া পদ্ধতিটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। কাজেই এটাকে অনেকে চুক্তি পিছিয়ে দেয়ার কৌশল হিসেবেও দেখছেন। আর বাংলাদেশ মনে করছে, জল বাড়ানোটা পরের কথা, কিন্তু যা জল আছে সেটার অর্ধেক ভাগ হওয়াটা আগে জরুরি।
মমতা ব্যানার্জির কৌশল? : শনিবার মাঝরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে নৈশভোজ সেরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরোনোর পর মমতা ব্যানার্জি বলেন, তিস্তার জল ভাগাভাগিতে তার আপত্তি নেই, যদি ওই অঞ্চলের আরও কয়েকটি নদীর জল তিস্তায় এনে জলের পরিমাণ বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে তো জল দিতেই চাই। এখানে আমি দুই সরকারকেই (ভারত ও বাংলাদেশ) একটা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। সেটা হল, আমাদের কয়েকটা ছোট ছোট নদী আছে, যেগুলো আগে কখনও তেমন নার্সিং করা হয়নি। এই নদীগুলোর বাংলাদেশ সংযোগও আছে। এখন যদি আমরা দু’দেশ মিলে ওই নদীগুলো স্টাডি করে ভায়াবিলিটি দেখতে পাই, তাহলে কিন্তু আমরা কিছুটা ভাগাভাগি করতেই পারি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তিস্তায় সমস্যা আছে সবাই জানেন। পানীয় জলের অভাব, কৃষকদের জলে টান, কিন্তু এই যে তিন-চারটে ছোট নদী, যেমন তোর্সা, মানসাই বা ধরলাকে কাজে লাগাতে পারলে হয়তো একটা সমাধান বেরুতে পারে। আর এই নদীগুলোও কিন্তু বাংলাদেশে গিয়েই মিশছে।
‘মুখে বলা যতটা সহজ, কাজে করা ততটাই কঠিন’ : এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে, তোর্সা বা ধরলার মতো নদীগুলো থেকে খাল কেটে বাড়তি জল তিস্তার দিকে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেটা মুখে বলা যতটা সহজ, কাজে করা ততটাই কঠিন- এমনটাই মনে করেন নদী-বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ কল্যাণ রুদ্র। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে তিস্তা রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন তিনিই।
ড. রুদ্রর কথায়, ডুয়ার্সের গহিন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এ খাল কাটতে হবে, আর তাতে পরিবেশ ও ইকোলজির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেই আমার অনুমান। তাছাড়া বর্ষায় এই নদীগুলো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই সে সময় এই পশ্চিমমুখী খাল চালু রাখতে গেলে ভায়াডাক্ট বা অ্যাকোয়াডাক্টও তৈরি করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রযুক্তির দিক থেকে হয়তো এ ধরনের খাল কাটা সম্ভব, কিন্তু কাজটা খুব কঠিন। সার্বিক ইকো-হাইড্রোলজির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং এর প্রভাব কী হবে সেটা সমীক্ষা না করে তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন হবে না বলেই আমি মনে করি। পরিবেশগত ছাড়পত্র যদি বা মেলেও, প্রকল্পটা শেষ করতেই আসলে অনেকটা সময় লাগবে, বলছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিদ্যার অধ্যাপক সুবীর সরকার। এই অধ্যাপক বলছিলেন,”সময় কত লাগবে তা নির্ভর করছে অর্থায়নের ওপর, সরকারের ইচ্ছা কতটা জোরালো তার ওপর। খুব তাড়াতাড়িও যদি করা হয়, তারপরও এই প্রকল্প শেষ হতে বছর কয়েক তো লাগবেই। খাল কাটা ছাড়াও তার আগে গবেষণার প্রশ্ন আছে, পরিবেশগত সমীক্ষার কাজ আছে- এটা আসলে একটা বিরাট প্রকল্প!
অঙ্গীকার পূরণ আদৌ সম্ভব? : এই প্রেক্ষাপটে তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সরকারের মেয়াদের মধ্যেই তিস্তা চুক্তি করবেন বলে যে অঙ্গীকার করেছেন, সেটা কি আদৌ রাখা সম্ভব?
উত্তরবঙ্গের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক এমপি ও এমএলএ দেবপ্রসাদ রায় অবশ্য মনে করেন মমতা ব্যানার্জির দেয়া বিকল্প প্রস্তাব একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ভারতের তিস্তা ব্যারাজের মতো বাংলাদেশও কিন্তু তাদের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার ওপর একটি প্রকল্প নিয়েছিল, যার নব্বই শতাংশ কাজ শেষ হয়ে আছে। ভারত থেকে যথেষ্ট পরিমাণে তিস্তার জল পাওয়া যাবে, এ ভরসাতেই তৈরি হয়েছিল সেই ডালিয়া প্রজেক্ট। তিস্তার জল দিয়ে বাংলাদেশ নয় লাখ হেক্টর জমিতে সেচের জল সরবরাহ করবে, আর ভারত প্রায় সাড়ে সাত লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে জল দেবে, তেমনই ছিল পরিকল্পনা।
দেবপ্রসাদ রায়ের কথায়, এখন তিস্তায় খাল কেটে ডালিয়া প্রজেক্টে যদি জল ফিড করা যায়, সেটা হয়তো খুব কঠিন না আর আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের এতে অসুবিধা হওয়ারও কোনো কারণ নেই। আর তোর্সাকে বলা যায় ভার্জিন নদী, কোনো সেচ প্রকল্পও এই নদীর বুকে নেই- তাই আমার মনে হয় তোর্সার যে কোনো জায়গাতেই এটা করা যায়। তবে তিস্তা শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হলেও তোর্সার উৎপত্তি কিন্তু ভুটানে। ফলে তোর্সার জল ভাগাভাগির ক্ষেত্রে তৃতীয় আর একটি দেশের (ভুটান) মতামতও গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন দেবপ্রসাদ রায়।
বাংলাদেশ অবশ্য বরাবরই বলে আসছে, তিস্তায় জল কতটা আছে সেটা বড় কথা নয়- জলের আধাআধি ভাগ করে চুক্তি সেরে ফেলাটাই আগে বেশি দরকার।
বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও আশঙ্কা : ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলিও সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, তিস্তায় পানি যদি আট আনা থাকে তাহলে চার আনা-চার আনা ভাগ হবে। আর যদি ছ’আনা থাকে, তাহলে আমরা পাব তিন আনা, ভারত পাবে তিন আনা- এটা তো খুব সহজ যুক্তি!
কিন্তু মমতা ব্যানার্জি আগে তিস্তায় জলের পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলে এলে চুক্তির প্রক্রিয়ায় আরও দেরি করিয়ে দিতে চাইছেন, যথারীতি এই আশঙ্কাও বাংলাদেশের তরফে তৈরি হচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন