মাকে চিনতে না পেরে কেঁদেছিলাম : চিত্রলেখা
কাজ-কর্ম আর উৎসাহে দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার আগেই যেন তা শুরু হয়ে যায়। প্রতিবার দুর্গাপূজা আসে আর আমি ফিরে যাই স্কুলবেলায়। ফিরে যাই, আমার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে আঁধারমানিক গ্রামে।
আমাদের বাড়ি ‘উকিলবাড়ি’ নামে পরিচিত। বাড়িতেই ধুমধাম করে দুর্গাপূজা পালিত হয়। এখনো হয়। ওই অঞ্চলের সবার কাছে এখনো ‘উকিলবাড়ির পূজা’ নামেই পরিচিত। এক মাস আগে থেকেই বাড়ির উঠানে শুরু হতো ঠাকুর গড়ার কাজ। প্রতিমাশিল্পীরা আসতেন। জগরণী পুঁথি পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হতো কাজ। এই একমাস বদলে যেত সব কাজের রুটিন। দিন-রাতের ঠিক নেই, প্রতিমাশিল্পীরা কী করছেন, কী খাচ্ছেন এই দেখে বেড়াতাম।
সন্ধিপূজা, সিঁদুর খেলা, প্রতিমা বিসর্জন এই সব অনুষ্ঠান যেন পূজার দিনগুলোকে নতুন করে দিত। অষ্টমী আর নবমীর তিথির মাঝে হতো সন্ধিপূজা। সন্ধিপূজায় ১০৮টা প্রদীপ জ্বালানো হতো। মনে হতো পুরো বাড়িটি পবিত্র হয়ে উঠছে। ঠাকুরমা, মা, কাকিমা, জেঠিমা, পিসিমা সবাই মিলে অনেক মজা করতেন।
একটা কথা মনে পড়লে এখনো নিজে নিজে হাসি। একবার বাড়িতে সিঁদুর খেলা উৎসব চলছিল। সবাই মিলে মায়ের সারামুখে এতো সিঁদুর মেখে দিয়েছিল যে, মায়ের চেহারাই ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। সবার কেমন লাল লাল মুখ! আমি মাকে খুঁজছিলাম। এক সময় কান্নাজুড়ে দিয়েছিলাম। মা আমাকে আদর করতে করতে বলেছিলেন ‘এই যে আমি’। আমি কিছুতেই তা মানছিলাম না। বার বার বলছিলাম ‘আমার মাকে এনে দা্ও’। বাকীরা সবাই খুব হাসাহাসি করেছিল। তাতে কি, মাকে না পেলে আর কিছুই ভালো লাগছিল না। পুরো বাড়িতে অতিথি গমগম করছিল। সে কী হাসাহাসি। মা সবাইকে হাসতে নিষেধ করলেন। নিজে সাবান দিয়ে মুখ-চোখ ধুয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি যেন মাকে পেয়ে গেলাম অনেক দিন পর। মায়ের সেই স্পর্শ মনে হলে, মনে হয়- ওমন নির্ভরতা কেবল মায়ের কাছেই আছে।
আর দুর্গাওতো মা। এই পূজার সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক আছে। পরম শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় এই পূজা উদযাপন করতে চাই, যতদিন বেঁচে আছি ঠিক ততদিন পর্যন্ত।
পূজা আমাদের পরিচিতজনের কাছে নিয়ে যায়। নতুন করে সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের বাড়ির ভেতরে আছে চারটি বড় বড় পুকুর। দশমীর দিন এই পুকুরগুলো থেকে মাছ ধরা হতো, অতিথিদের আপ্যায়ন করার জন্য। আমাদের বাড়িতে সারাদিন ভোগ রান্না হতো। অনেক মানুষ একসঙ্গে বসে খেতেন। আমরা নতুন জামা পরতাম। ঘুরে বেড়াতাম। নাড়ু-মুড়ি-মুড়কি-বাতাসা-কদমা এগুলোতে ভাগ করে করে খেতাম; ভাই বোনেরা মিলে। আর মণ্ডপে–মণ্ডপে ঘুরতাম দলবেঁধে।
এরপর একদিন সময় হলো পরিচিত জীবন থেকে অন্য জীবনে যাওয়ার। আমার বয়স তখন ১৮। বিয়ে হয়ে গেল। আমার শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লার মোগলটুলীতে। সেখানেও হয় সর্বজনীন পূজা। পরিবারের নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলো। এই পরিবারে আমিও কিছু দায়িত্ব পেয়ে গেলাম। এরপর থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে প্রতি বছর পূজা উদযাপন করি। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে মাত্র দু’বার পূজা করেছি। সে যাই হোক, এই সময় হাতে কোনো কাজ রাখি না। পুরোটা সময় পারিবারিক আবহে থাকতে চাই। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করি। নিজের সাধ্যমতো উপহার দিই। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সম্পর্কগুলো পেয়ে যায়, নতুন মাত্রা।
দুর্গা মা আসেন। তাকে আনার জন্যই এতো আয়োজন। তারপর আবার চলেও যান। চলে যেতে দেখি। শুরু হয় আবার তার ফেরার প্রতীক্ষা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সমুদ্র পাড়ে দুর্গারূপে নওশাবা
শুধু ঈদ কিংবা পূজা নয়, বিশেষ ধর্মীয় দিন উপলক্ষে ফটোশুটেবিস্তারিত পড়ুন
শুল্কমুক্ত গাড়ি খালাস করেছেন সাকিব-ফেরদৌস, পারেননি সুমনসহ অনেকে
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য আমদানি করাবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত নায়িকা পরীমনির পরিবার সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানতেন?
গভীর রাতে সাভারের বোট ক্লাবে গিয়ে যৌন হেনস্তা ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন