মাকে শেষ ওষুধ খাইয়ে ওপারে জামাল!
আয়েশা বেগম। বয়স সত্তরেরও বেশি। এই মায়ের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ছিলেন হোসনি দালানে গ্রেনেড হামলায় নিহত জামাল উদ্দিন (৫০)। লেস-ফিতা বিক্রেতা জামাল উদ্দিনের স্ত্রী আট বছর আগে তার মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যায়। এরপর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে রাজধানীর চকবাজারের কাজী রিয়াজ সড়কের ২২ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। ঘটনার দিন রাতে মাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে এসেছিলেন তিনি। ছেলের হাতে সেটাই ছিল মায়ের শেষ ওষুধ খাওয়া। অসুস্থ মাকে আর কোনওদিন ওষুধ খাওয়াবেন না জামাল।
শুক্রবার রাতে হোসনি দালানে দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর সাত দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জামাল। বৃহস্পতিবার দুপুরেই আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
চকবাজারের কাজী রিয়াজ উদ্দিন সড়কের ২২ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, ছেলে জামালকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন আয়েশা বেগম। জামালের লেস-ফিতা বিক্রি করার কাঠের বাক্সটি কসমেটিকস ভর্তি। বাকরুদ্ধ আয়েশা বেগমকে কেউ কিছু খাওয়াতে পারছে না। বারবার ছেলেকে খুঁজছেন তিনি।
২৩ অক্টোবর দিনগত রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন লেস-ফিতা বিক্রেতা জামাল উদ্দিন। ওই দিন থেকেই তিনি ঢামেক হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি ছিলেন। এর আগে হামলার রাতে নিহত হন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাজ্জাদ হোসেন সানজু (১৫)। নিহত জামালের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার সন্ধ্যাটিয়া গ্রামে।
জামাল উদ্দিন পাঁচ ভাই ও একবোনের মধ্যে সবার বড়। ১৫ বছর আগে তাদের বাবা মারা যায়। নিহত জামাল উদ্দিনের ছোট ভাই লিটন জানান, তাদের মা আয়েশা বেগম বড়ভাই জামাল উদ্দিনের সঙ্গেই থাকতেন। জামালের স্ত্রী আট বছর আগে তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে চলে যান। এরপর থেকে তাদের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
লিটন আরও জানান, জামালের স্ত্রী চলে যাওয়ার পর আর বিয়ে করেনি। মাকে নিয়েই তিনি থাকতেন। ফেরি করে কসমেটিকস বিক্রি করত। নিজেই রান্না করত। অসুস্থ মায়ের দেখাশোনাও তিনি করতেন। তাদের মা জামালের সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করতেন। অন্য ছেলেদের সঙ্গে তিনি থাকতেন না।
ওই বাড়ির আর এক ভাড়াটিয়া জামিল জানান, জামালকে তারা ‘বড় ভাই’ বলে ডাকতেন। ঘটনার দিন রাতে ফেরি করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন। এরপর রান্না করে মাকে ভাত ও ওষুধ খাইয়ে দালানে যায়। যাবার সময় তাকেও সেখানে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। দালানে গেলে জামালের সঙ্গে তার দেখা হবে। কিন্তু জামিল দালানে যায়নি। এরপর রাতে এই ঘটনা শোনার পর হাসপাতালে এসে দেখতে পাই ‘বড়ভাই’ কে আইসিউতে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে আর কথা হয়নি।
ঘটনার পর জামালের পরিবার সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনও সহায়তা পায়নি বলে জানান নিহতের ছোট ভাই লিটন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান জানান, বোমা হামলার ঘটনায় আহত মোট ১৬ জন ভর্তি হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন মারাগেছেন। আরেকজন ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। ভর্তি আছেন এখনও ১৩ জন।
২৩ অক্টোবর দিনগত রাত ২টার দিকে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসনি দালানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব চড়াইলে শুভাট্টা উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সানজু নিহত হন। আহত হন শতাধিক ব্যক্তি।
বর্বরোচিত ওই হামলার পর এর দায় স্বীকার করে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসআইএল বিবৃতি দিয়েছে বলে খবর দেয় ‘সাইট’ নামে একটি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান।
হামলার পরের দিন সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা জন্য একটি ষড়যন্ত্র চলছে, তারই অংশ হিসেবে এ হামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হামলায় গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডের সঙ্গে এগুলোর মিল আছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছে পুলিশ। চকবাজার থানার এস আই জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে এই মামলা করেন। দালানের ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন