মাতম করে দেহের রক্ত ঝরিয়ে তাজিয়া মিছিল
হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ও কারবালার যুদ্ধে শাহাদত বরণকারী ইমাম হোসেন (রা.)- এর স্মরণে ও তার স্মৃতির প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাতে মাতম করে দেহের রক্ত ঝরিয়ে তাজিয়া মিছিল করেছেন শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা।
আশুরা উপলক্ষে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর, আজিমপুর, লালবাগ ও পুরান ঢাকায় হোসেনি দালানসহ কয়েকটি এলাকা থেকে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। আরবি ‘তাজিয়া’ শব্দটি উর্দু ও ফারসি ভাষায় প্রচলিত। শব্দটির সাধারণ অর্থ শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা। বিশেষ অর্থে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকাবেগসঞ্চারী অনুষ্ঠানকেও তাজিয়া বলা হয়। ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদত লাভের বিষাদময় স্মৃতির উদ্দেশ্যে তা পালিত হয়।
তাজিয়া মিছিলে মাতম করে, বুক চাপড়িয়ে ও জিঞ্জির দিয়ে পিঠের ওপর আঘাত করে নিজেদের রক্তাক্ত করে শোক প্রকাশ করা হয়। তাজিয়া মিছিলে বাদ্যকর থাকে, কয়েকজন লোক লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে ও তরবারি চালাতে চালাতে এগোতে থাকে। মিছিলে শিবিকাসহ অশ্বারোহী সৈন্যের সাজে কয়েকজন লোক শোক প্রকাশ করতে করতে অগ্রসর হয় এবং তার পেছনে একদল গায়ক শোকগান গাইতে থাকে। তাদের পরনে থাকে হোসেন (রা.)-এর সমাধির প্রতিকৃতি।
মিরপুর-১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পগুলোর মধ্যে মিল্লাত ক্যাম্প, রহমত ক্যাম্প, ওয়াপদা কলোনি ও অন্যান্য ক্যাম্প থেকেও তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয় শিয়া বর্ণের লোকজন। তাজিয়া মিছিলগুলো নিজ নিজ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পের চারপাশ ঘুরে আবার ক্যাম্পে এসে শেষ হয়। তারা ক্যাম্পে ফিরে ইবাদত-বন্দেগি করে মজলিশ ও দোয়ায় অংশ নেয়। মাগরিবের নামাজের পর তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে ধর্মীয় এ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।
এদিকে রাজধানীর আজিমপুর থেকে শুরু হওয়া তাজিয়া মিছিলটি জিগাতলায় গিয়ে শেষ হবে বলে জানা গেছে।
মিরপুরের মিল্লাত ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা প্রধান মো. হায়দার জানান, দুপুরে তাজিয়া মিছিল হয়েছে। মাগরিবের নামাজের পর ফের তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে ধর্মীয় এ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।
মিছিলকে ঘিরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
৬১ হিজরির আশুরাতে কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রা) সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন। ১০ মহররম শুক্রবার আশুরার দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর নাতি হজরত ইমাম হোসেন (রা.) হক ও ইনসাফ চলমান রাখার লক্ষ্যে কারবালা প্রান্তরে ত্যাগের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যুগ যুগ ধরে যা মানুষকে ন্যায় ও সত্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।
সেদিন এজিদের সৈন্যদের অবরোধের কারণে ইমাম হোসেন (রা.)-এর শিবিরে খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। নারী-শিশু সবাই পানির জন্য কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু ইমাম হোসেন (রা.) আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে ১০ মহররমে এজিদ বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইমাম হোসেন (রা.)। অসম যুদ্ধে ইমাম হোসেন তার ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদত বরণ করেন। সীমার ইবনে জিলজুশান কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হোসেনকে হত্যা করে। এজন্য এই দিনটি মুসলিম মিল্লাতের কাছে যেমন বেদনার বার্তা বহণ করে আনে ঠিক তেমনি সত্যাশ্রয়ী জীবনযাত্রার আশার আলোও সঞ্চারিত করে।
কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সকলকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন