মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতকের অবস্থা ভালো না!
পাশাপাশি ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতক ও তার মা নাজমা বেগম। তবু দেখা হচ্ছে না দু’জনের। ক্ষত শরীরে শুধুই গোঙানি করছেন হতভাগ্য মা। বৃহস্পতিবার থেকেই শিশুটি আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে) ভর্তি রয়েছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা নবজাতককে একনজর দেখতে অ্যাম্বুলেন্সে চেপে মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পৌঁছান নাজমা বেগম। দীর্ঘ যাত্রার পর তিনি ঢামেক হাসপাতালে পৌঁছতেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই সময় তার জীবন বাঁচাতে দ্রুত গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
গুলিবিদ্ধ নবজাতকের অবস্থাও ভালো নয়। দিন দিন শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার আবারও ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এর আগে রোববার শিশুটির উন্নত চিকিৎসায় ৮ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। শুক্রবার গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রধান ও এনআইসিইউ ও নবজাতক ওয়ার্ড নিওনেটোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, শিশুটিকে এখনও আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। শরীরে পানি জমেছে, জন্ডিসও রয়েছে। তাকে টানা ফটোথারাপি দেয়া হচ্ছে। স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। মুখে কোনো খাবার খেতে পাচ্ছে না বলে, মায়ের বুকের দুধও তাকে খাওয়ানো যাচ্ছে না। তার উন্নত চিকিৎসায় আরও একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শিশুটি এখনও আশঙ্কামুক্ত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, শিশুটিকে সম্মিলিতভাবে সুস্থ করে তোলার জন্য চিকিৎসকরা তৎপর রয়েছেন।
শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলী জানান, শিশুটির মা মাগুরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি ঢামেক হাসপাতালে পৌঁছার পর আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অ্যাম্বুলেন্সের ঝাঁকুনিতে মায়ের ক্ষতগুলোতে চাপ পড়েছে। তার জ্বর ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। বেড থেকে দাঁড়াতে পারছেন না। তিনি বলেন, শিশুটির ছবি বারবার তুলে তার মাকে দেখানো হচ্ছে।
শিশুর ছবি দেখার পর, তিনি তার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, তার পেটের বামপাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ার জায়গা ও সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের সময় পেট কাটার স্থানে তীব্র ব্যথা রয়েছে। তাকেও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তার ইনফেকশনও রয়েছে।
ডা. কানিজ হাসিনা শিউলী বলেন, শিশুটি কিছুই খেতে পারছে না। তার জিহ্বা নাড়াতে পারছে না। বৃহস্পতি ও শুক্রবার তার মায়ের বুকের দুধ কৌটায় করে আনা হলেও শিশুটিকে খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তাকে ফটোথেরাপি দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে স্যালাইন। শুক্রবার ১টা ২০ মিনিটের দিকে শিশুটিকে ড্রেসিং করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে শুক্রবারও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক নবজাতক শিশুর মা গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ উভয়ের সুস্থ থাকার স্বার্থেই মাকে এমন অবস্থায় আইসিইউতে নিয়ে সন্তান দেখাচ্ছেন না চিকিৎসকরা।
শুক্রবার সরেজমিন ঢামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, গুলিবিদ্ধ শিশু ও তার মাকে একনজর দেখার জন্য সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রোগীদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়স্বজনরা ২১১ ও ২১২নং ওয়ার্ডের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন। নাজমা বেগম বলেন, যে করেই হোক তার শিশুকে যেন সুস্থ করে তোলা হয়। তিনি তার সন্তানের সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ সময় ওয়ার্ডে দায়িত্ব থাকা চিকিৎসক জানান, তার গুলি ও সিজারের ক্ষতস্থানগুলোতে চাপ পড়েছে। তিনি অনেক দুর্বল, তার ওপর সারাক্ষণই কান্না করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ এক ডাক্তার জানান, দেড় কেজির চেয়ে একটু বেশি ওজনের এ শিশুটির শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। ৪টি ক্ষতস্থানে ২১টি সেলাই দেয়া হয়। অস্ত্রোপচার সফল হলেও ওইদিন রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ঢামেক হাসপাতালের এনআইসিইউ ও নবজাতক ওয়ার্ড নিওনেটোলজি বিভাগের আইসিইউতে জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ শিশু ও তার মাকে দেখতে আসেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দ্বীন মো. নুরুল হক। তিনি বলেন, মায়ের অবস্থা ভালো রয়েছে। তবে শিশুটিকে কিছুতেই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ২ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিশুটির পাশে সার্বক্ষণিক রয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ শিশুর বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া জানান, মাগুরা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। যানজট ও রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় সে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সেলাই দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তিনি বলেন, টাকা থাকলে তার স্ত্রীকে হেলিকপ্টার দিয়ে নিয়ে আসতেন।
বাচ্চু ভূঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তার স্ত্রীকে খুব কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। সঙ্গে থাকা তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সোনিয়াকে গুলি করে। সোনিয়াও অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সে অন্য বাসায় লুকিয়ে প্রাণ বাঁচায়। তিনি বলেন, ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সহযোগী ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন