মাথা ন্যাড়া করে দেয়ায় ২ কিশোরের আত্মহত্যার চেষ্টা
পাশের গ্রামের কিশোরর সঙ্গে মারামারির অভিযোগে দরিদ্র পরিবারের দুই কিশোরকে মাথা ন্যাড়া ও জুতা পেটা করেছেন দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
এছাড়া তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায়ের জন্য মোবাইল ফোনসেট নিয়ে গেছেন এক চেয়ারম্যান।
এ ঘটনায় ক্ষোভে-অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন দুই কিশোর।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী মনিয়ন্দ ইউনিয়নে গত শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার শিকার কিশোররা হলেন মনিয়ন্দের হরিপুর গ্রামের আবদুল বারেক মিয়ার ছেলে পারভেজ মিয়া (১৬) ও পাতাইরাটেক গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হারুন মিয়া (১৬)।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মনিয়ন্দের সীমান্তবর্তী রাজমঙ্গলপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শাহ আলম মিয়ার বাড়িতে ছয় মাস আগে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল।
এতে পারভেজ ও এবং পাতাইরাটেক গ্রামের হারুনসহ কয়েক কিশোর-তরুণ যোগ দেয়। অনুষ্ঠানে নাচ করা নিয়ে ওই বাড়ির ছেলে আরিফ হোসেনের (১৬) সঙ্গে তাদের ঝগড়া ও মারামারি হয়।
ওই ঘটনায় হারুন আহত হয়। ছয় মাস পর গত ২০ এপ্রিল সকালে আরিফ প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় তাকে একা পেয়ে মারধর করে হারুন।
এসব ঘটনা নিয়ে শনিবার সকালে পার্শ্ববর্তী গোপিনাথপুর ইউনিয়নের নতুন বাজারে সালিশ বসে।
এতে মনিয়ন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল ভূঁইয়া ও গোপিনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে অন্য জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিসহ শত শত গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সালিশে পারভেজ ও হারুনের বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগসহ এলাকায় বখাটেপনার অভিযোগ আনা হয়।
এক পর্যায়ে জুরিবোর্ড গঠন করা হয়। এর বিচারকরা হন দুই ইউপি চেয়ারম্যান কামাল ভূঁইয়া ও মান্নান জাহাঙ্গীর, আওয়ামী লীগ নেতা সফিকুল ইসলাম বাবুল মৃধা, জাকির মেম্বার, ফিরোজ মেম্বার, শাহ আলম মেম্বার, এরশাদ মেম্বার, আবু নাসার, শিশু মিয়া প্রমুখ।
জুরিবোর্ডের সিদ্ধান্তে সালিশে কামাল ভূঁইয়া ও মান্নান জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে দুই কিশোরকে মারধরসহ জুতাপেটা করা হয়।
এ সময় সন্তানদের রক্ষায় ছুটে আসে দুই কিশোরের বাবা কাশেম মিয়া ও আবদুল বারেক মিয়া। তাদেরও সালিশে লাঞ্ছিত করা হয়।
এরপর দুই চেয়ারম্যানের নির্দেশে আহত অবস্থায় পারভেজ ও হারুনকে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।
পরে পরিবার দুটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তা অনাদায়ে ফোনসেট জব্দ এবং তাদেরকে একঘরে রাখার ঘোষণা দেয় হয়।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাশেম মিয়া ও আবদুল বারেক মিয়ার সঙ্গে কথা হয়।
তারা বলেন, সালিশে শত শত লোকের সামনে আমার সন্তানকে জুতাপেটাসহ মারধর করেছে চেয়ারম্যান কামাল ও মান্নান জাহাঙ্গীর।
তারা আরও বলেন, আমাদের আর্তচিৎকারে মন গলেনি সালিশকারীদের। তাদের পায়ে ধরেও জরিমানার টাকা ৫০ হাজার থেকে কমানো যায়নি।
সালিশের পর রাতে লজ্জায়-কষ্টে পারভেজ ও হারুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীরা দেখে ফেলায় এ যাত্রায় তারা বেঁচে যান বলে জানান দুই কিশোরের বাবা।
মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব ভূঁইয়ার দাবি ওই দুই কিশোর ছাত্রলীগের কর্মী।
অমানবিক ঘটনার শিকার হওয়ার পর থেকে পরিবার দুটি আতঙ্কে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
এদিকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কামাল ভূঁইয়া কাছে দাবি করেছেন, তিনি ওই সালিশে উপস্থিত ছিলেন না।
তিনি বলেন, গোপিনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীর ওই সালিশ করেছেন। তার নির্দেশে দুজনের মাথা ন্যাড়া করে ছেড়ে দেয়া হয়।
আখাউড়া থানার ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, কোনো সালিশে জুতাপেটা অমানুষিক ও মাথা ন্যাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ ধরণের কোনো কাজের অধিকার চেয়ারম্যানদের দেয়া হয়নি। ঘটনার খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন