মার্কিন নির্বাচন: গণমাধ্যম বনাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নিজেদের দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গেই নেয় মার্কিন গণমাধ্যম। নিজেদের এতই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বাস করে যে, ধরে নিয়েছিলো তারা যা বলবে সেটাই মানুষ বিশ্বাস করবে বা গুরুত্ব দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর আমরা খুব ভালো করে বুঝতে পারছি যে সেদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম বোকার স্বর্গে বাস করছিল। তাদের কেউ কেউ হিলারিকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে গেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ গণমাধ্যম ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সঠিক পাল্লায় মাপতেই পারেনি। এতো দিনে অবশ্য মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর বোধোদয় হচ্ছে। তারা অনুধাবন করতে পারছে যে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবের কাছে এখন তারা কিছুই না, যদিও ফেসবুক প্রধান জাকারবার্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোন ধরণের প্রভাবের দাবি সরাসরি নাকচ করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, এই দায়ভার ফেসবুকের নয়। গণমাধ্যমে কৌশলে তিনি দাবি করেন, ‘যদি কেউ মনে করে থাকেন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যে খবরগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে, সেটা আসলে পাগলামি। সেটা যদি আপনিও বিশ্বাস করে থাকেন, তাহলে বলবো ট্রাম্পের ভক্তরা যে মেসেজগুলো দিতে চেয়েছিল সেটা আপনি নিয়েছেন।’ গণমাধ্যমের কাছে জাকারবার্গ স্বীকার করে নিয়েছেন, নির্বাচনের আগে আগে বেশ কিছু ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো ফেসবুকজুড়ে। আর সেসবই নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছিলো বলে ট্রাম্পবিরোধীরা দাবি করছেন।
আমেরিকানদের একটি বড় অংশের কাছেই ফেসবুক যেকোন খবরের জন্য প্রাথমিক সোর্স। সাধারণত ফেসবুক ইউজারদের নিউজ ফিডে সেই সব পোস্ট বা শেয়ারগুলো দেওয়া হয় যেগুলো মানুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন নাগরিক ফেসবুক ব্যবহার করেন। তাদের দুই তৃতীয়াংশ ফেসবুক থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেইসব তথ্যের কতটুকু আসে মূলধারার গণমাধ্যম থেকে? হয়তো নির্ভরযোগ্য বস্তুনিষ্ঠ তথ্যভিত্তিক সংবাদ ফেসবুকে প্রচার পেয়েছে। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সেই তথ্যই বিশ্বাস করেন বা শেয়ার করেন যেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তার ভাবধারা অনুসরণ করে। গলদ থেকে গেছে সেই বিশ্বাসের জায়গায়। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কোন তথ্য যাচাই পর্যন্ত অপেক্ষা করেন না, বন্ধু যা শেয়ার করছেন সেটাই বিশ্বাস করছেন।
ট্রাম্প সমর্থকরা হিলারির বিপক্ষে ফেসবুক এবং টুইটারে সরাসরি নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছেন, যেখানে প্রচারণায় মূলধারার গণমাধ্যমের কোন হাত নেই। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় শিবিরই ফেসবুককে মোক্ষমভাবে কাজে লাগিয়েছে। ২০০৮ সালে যেমন ফেসবুককে ওবামা কাজে লাগিয়েছিলেন, ২০১৬ সালে এসে ফেসবুকের সদ্ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। তাহলে কি ফেসবুকের মতো কিছু না থাকলে ডেনাল্ড ট্রাম্প জিততে পারতেন না? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেওয়া কষ্টকর। তবে এ কথা হয়তো ঠিক যে ইসলামফোবিয়া, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অভিবাসী ঠেকানোর নীতি বেশী বেশী প্রচারের কারণে দ্বিধান্বিত ভোটারদের ট্রাম্পের দিকে ঠেলে দিয়েছে সামাজিক মাধ্যম।
এভাবে মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সমান্তরাল মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তাহলে কি গণমাধ্যমের সময় শেষ হয়ে আসলো? নাকি বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গণমাধ্যমগুলো নিজেদের সক্ষমতা বাড়াবে? সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশলগুলো তাদেরকে ঠিক করে নিবে খুবই দ্রুত।
অ্যাড
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন