মার্কিন নির্বাচন ঘিরেও ভুল বার্তা দিল বিএনপি
ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখবে, এমন প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে দলটিকে। ক্ষমতায় আসলেও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি মোদি সরকারের পক্ষ থেকে। একইভাবে সদ্য অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরেও আশাবাদী হয়ে উঠে বিএনপি। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে সহযোগিতা পাওয়া যাবে, বিএনপির প্রত্যাশা ছিল এমনই। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় সেই স্বপ্নও পূরণ হলো না। তারপরও দলটি উল্লসিত! এতে কূটনীতিতে ভূল বার্তা বহন করা হয় বলেই অভিমত দলের অনেক নেতার। আবার দলটির কোনো কোনো নেতা এটাকে ভুলের রাজনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।তবে এসব নেতা এ বিষয়ে প্রকাশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজী হন নি।
বিএনপির একাধিক মধ্যম সারির নেতার অভিমত, ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা আমাদের অনুকরণীয় হতে পারে। কিন্তু এখানে কারও পক্ষতাতিত্ব করা দলের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকা জরুরি। তা না হলে কূটনৈতিকভাবে দল ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে ক্ষমতার পালা বদল হলেও পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হয় না। সুতরাং পারষ্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সবাইকে বন্ধু ভাবতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সামনে রেখে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরব ছিলেন বিএনপির অনেকে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে হিলারির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে দেখা গিয়েছিল তাদের। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ হিলারি ক্লিনটনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। হিলারির সঙ্গে শওকত মাহমুদের হাসিমুখে কথা বলার চিত্র (ছবি) সম্বলিত খবর প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে এবং পরে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এ ছাড়া হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারের এক ভিডিও চিত্রে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার করমর্দনের ছবি ব্যবহারের বিষয়টি বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উল্লাসের সৃষ্টি করে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বন্ধুত্ব রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে তার। সেই সুযোগ কাজ লাগাতে চেয়েছিল বিএনপি। তার সহযোগিতায় দেশে যেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়, এ বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা হয় বিএনপি নেতাদের।
হিলারি ক্লিনটনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেয়েছিল বিএনপি; রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এসব একদম মনগড়া কথা। বিএনপি এ ধরনের কিছু কখনো ভাবেনি। এ ধরনের মন্তব্য করে নিজের দেশকে ছোট করে ফেলা হয়। বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগের মতোই ভালো থাকবে।’
আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলে বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রভাবই পড়বে না উল্লেখ করে সাবিহউদ্দিন বলেছেন, ‘বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কোনো দলের ওপর রাজনৈতিক কোনো প্রভাবও ফেলবে না এই নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো বৈশ্বিক সম্পর্ক, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নীতি অনুসরণ করে চলে। তাই ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না, সম্পর্ক একই থাকবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘হিলারি ক্লিনটন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল যে হিলারিই জয়ী হবেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ট্রাম্প উঠে আসলেন। এতে অমেরিকান নির্বাচনী সিস্টেমের জয় হয়েছে। এখানো কোনো অভিযোগ নেই। হিলারিই প্রথম পরাজয় মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’
হিলারির পরাজয়ে বিএনপি আশাহত কীনা- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এটা কোনো দলের বিষয় নয়। হিলারি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের ভাল হতো। যেহেতু বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ভাল ধারনা আছে। বাংলাদেশ আন্তার্জাতিকভাবে সমাদৃত। সুতরাং ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় আশাহত হওয়ার কিছু নেই। তিনি নিশ্চিয় নিজ দেশের মতোই গণতন্ত্রের কথা বলবেন।’
তবে ভেতরে বাইরে যাই ঘটুক না কূটনৈতিক শিষ্টাচার বাজায় রেখেছে বিএনপি। জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার (৮ নভেম্বর) নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই টুইট বার্তায় খালেদা জিয়া লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য। আসুন গণতন্ত্রের পতাকা আরও উঁচুতে তুলে ধরি।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে হিলারি ক্লিনটন জনগণের সরাসরি ভোট বেশি পেলেও ইলেক্টোরাল ভোটে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তিনি। দ্য রিপোর্ট
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন