মালয়েশিয়ায় পেশাদার ভিসায় প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা
মালয়েশিয়ায় পেশাদার ভিসায় (ডিপি-১০) পাড়ি জমানো বাংলাদেশিরা মানবেতর দিনযাপন করছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাচ্ছেন না বেতন। এমনকি কারো কারো কপালে এখনও কাজও জোটেনি। এমন অবস্থায় প্রতারণার শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি।
সূত্র জানায়, কর্মীর পাসপোর্ট দালালদের হাতে আটক থাকা ছাড়াও কোম্পানিতে কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা বেশি বলে জানতে পেরেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে সম্প্রতি ই-মেইল বার্তা পাঠানো হয়েছে দূতাবাসে। ওই ই-মেইলে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কিছু প্রফেশনাল ভিসার কাগজপত্র সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। তাই এসব ভিসার বিপরীতে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার আগে হাইকমিশন থেকে যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে জোহান এসডিএন বিএইচডি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অধীন মালয়েশিয়ায় যান জামালপুরের রুহুল আলম। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে দেশে একটি ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বেতন ও কমিশনসহ আয় ছিল মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বড় ভাইয়ের বন্ধু জুবায়েরের প্ররোচনায় মালয়েশিয়ায় আসেন তিনি। ক্যাটাগরি-১ এ প্রফেশনাল ভিসায় ওই কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগের কথা ছিল তার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশি টাকায় বেতন হবে এক লাখ টাকা।
তবে ক্যাটাগরি-১ এ প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় পৌঁছেই সর্বনাশটা বুঝতে পারেন রুহুল। পুরো ৪৮ ঘণ্টা বিমানবন্দরে কাটানোর পর হামিদ নামে এক বাংলাদেশি তাকে আমপাংয়ে নিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে জুবায়ের ফোনে জানান, ওই কোম্পানিতে ম্যানেজারের পদ শূন্য নেই, কিছুদিন আরেকটি কোম্পানিতে কাজ করার জন্য।
নিয়ে যাওয়া হলো জোহরবারুতে। সেখানে একটি কাচ তৈরির কারখানায় শ্রমিকের কাজ দেওয়া হয় রুহুলকে। যেখানে ভারি মেশিনপত্র চালাতে হতো এবং বেতন ছিল বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার টাকা। আর থাকত একই রুমে ১০-১২ জন। এরপর গত জুনে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এভাবেই রুহুলের মতো বাংলাদেশি হাজার হাজার যুবক পেশাদার ভিসায় গিয়ে হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। আবার অনেকেই কর্মহীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক এ কে এম টিপু সুলতান বলেন, প্রফেশনাল ভিসায় বহির্গমন নিতে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মোট ৭২টি ভিসার আবেদন জমা পড়েছে। এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে আমাদের কিছু কিছু ভিসায় সন্দেহ হয়েছে। তাই বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় আমাদের হাইকমিশনকে চিঠি দিয়েছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চলতি বছর দেশ থেকে পাড়ি জমানো শ্রমিকরা কেমন আছেন তারও সর্বশেষ তথ্য জানার জন্য আমরা হাইকমিশনকে অনুরোধ করেছি। তবে সেখান থেকে প্রতিবেদন আসতে কতদিন লাগতে পারে তা তিনি জানাতে পারেননি।
প্রফেশনাল ভিসায় (ডিপি-১০) যাওয়া সিলেটের দুই শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১০ মাস আগে বাড্ডা নর্দার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আমরা এখানে আসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দালাল আমাদের হাতে পাসপোর্ট দেয়নি। এখন ২২০০ রিঙ্গিত দাবি করছে। না দিলে পাসপোর্ট দেবে না।
তারা বলেন, পাসপোর্ট না থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া যে কোম্পানির নামে আমরা এসেছি সেখানে কাজ নেই। তাই জহুরবারুর একটি মার্কেটে লুকিয়ে কাজ করছি।
এ বিষয়ে বুধবার মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (শ্রমিম) সায়েদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রফেশনাল ভিসা নিয়ে ৩৫ হাজার ২২৮ জন কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন।
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত ২০১২ সালে বেসরকারি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানি বন্ধ হলে এক শ্রেণির অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি এ পেশাদার ভিসা ও ডিপি-১০ ভিসায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু করে। এজন্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হয় (এক বছরের ভিসার জন্য)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিউনিটির একাধিক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের দেশের ছেলেরা প্রতারিত হয়ে এখানে এসে ক্লিনার, পেট্রোল পাম্প বা নির্মাণ সাইটে কাজ করতে হচ্ছে। এক শ্রেণির দালালরা যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলেদের মালয়েশিয়ায় এনে ফাঁদে ফেলছেন।
ডিপি-১০ ও পেশাদার ভিসায় কতো বাংলাদেশি রয়েছে তার কোনো হিসেব কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে পাওয়া যায়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
যে কারনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্মেলন স্থগিত
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপিরবিস্তারিত পড়ুন
ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে চাপ !
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়েবিস্তারিত পড়ুন
বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার শ্রমিক নেবে সৌদি আরব
চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজারবিস্তারিত পড়ুন