রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

‘মাস্টার সাহেবের ছেলে এসপি হয়েছে’

১৯৯১ সালের ২৪ শে অক্টোবর, রাত বোধ হয় ৪টা সাড়ে ৪টা হবে। দিগন্ত পরিবহনের একটি বাসে করে যশোর থেকে ঢাকা আসছিলাম-জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সিঁড়ি আমার আব্বার সাথে। আমি তখন ১৮ বছরের কিশোর। বাসে ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। আব্বার ডাকে ঘুম ভাঙল। আব্বা বললেন ‌‘ডানে তাকা’ – ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের হালকা কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা সাদা নিয়ন আলোয় লেখা সাইনবোর্ড দেখলাম। বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি)। আব্বা বললেন, ‘তোকে ঢাকা নিয়ে আসলাম, দিয়ে যাব এই ঢাকা শহরেই, নিয়ে যেতে চাই এখান থেকেই’। পিএটিসি কি আমি তখন জানতাম না। আব্বা বুঝিয়ে বললেন বাংলাদেশের সকল বড় অফিসারদের এখানেই প্রশিক্ষণ হয়। এখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকারী কাজ পরিচালনা করে। সেই থেকেই স্বপ্নের শুরু।

তারপর নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে, নানা বাঁক ঘুরে স্বপ্ন সত্যি হল। ৩০ শে জুন’৯৮, ১৮ তম বিসিএস পরীক্ষার ফল বেরুলো। দুরুদুরু বক্ষে জনকন্ঠ পত্রিকার পাতায় নিজের রোল নম্বরটি (৫২২৬৭) খুঁজে পেলাম। যতটা না আমার তার চেয়েও বেশী আব্বার স্বপ্ন সত্যি হল। তখনকার দিনে মোবাইল ফোন ছিলইনা বলা চলে। ঢাকাতে প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করলাম। স্কুল শিক্ষকের সন্তান, নানা আর্থিক টানাপোড়েনে বাংলাদেশের আর দশটা নিন্ম-মধ্যবিত্ত পরিবারের মতই আমার বেড়ে ওঠা। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার আগেই প্রথম প্রচেষ্টাতেই বিসিএসে কাঙ্খিত ক্যাডারে চাকরি পাওয়া আমার-আমাদের মত ছেলেদের জন্য আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতই। ছুটলাম গাবতলীতে, রাতের বাস ধরে পৌঁছলাম যশোরে। আরিচা ঘাটের দীর্ঘ জ্যামের কারণে বাড়ী পৌঁছতে পৌঁছতে সকাল ৮টা সাড়ে আটটা। রাজপথ থেকে নেমে বলতে গেলে ছুটতে লাগলাম বাড়ীর পথে।

পথের মাঝেই আব্বার সাথে দেখা। মুখে কিছু বলতে পারলাম না, কদমবুচি করলাম রাস্তার মাঝেই। চোখে বন্যা এল- আনন্দের। আব্বা বুঝলেন তার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। বললেন সারাজীবন পরের ছেলেপুলে (সন্তান) মানুষ করেছি-স্বপ্ন ছিল আমার ছেলেও একদিন বড় কিছু হবে। আমাকে হাতে ধরে আবার ফিরতি পথে বাড়ী ফিরে এলেন। ততক্ষণে সারাগ্রাম আমাদের টিনের ঘরের সামনে উপচে পড়েছে। গ্রামের মানুষ বিসিএস, এএসপি এত কিছু বুঝেনা। মানুষের মুখে মুখে তখন একই কথা ‘মাস্টার সাহেবের ছেলে এসপি হয়েছে’। আমি প্রাণভরে উপভোগ করলাম আমার বাবা মা, আত্মীয় স্বজনদের আনন্দাশ্রু। বাড়ী ভরা লোক, মিষ্টি খাওয়াতে হবে।

এদিকে মাসেরও শেষ দিন। আব্বার পকেটে টাকা নেই। তাই এত আনন্দের মাঝেও আব্বার মুখ কাঁচুমাচু। বরাবরের মতই ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে আসলেন মা। দশ টাকা, পাচঁ টাকা, দু টাকা, এক টাকা, দুয়েকটা একশ টাকার নোট মিলিয়ে বের করে আনলেন যক্ষের ধন, একটা গহনার ব্যাগে জমানো টাকা। গুনে দেখা গেল কমবেশী পনেরশ টাকা । বাড়ীতে জমতে থাকা লোক সংখ্যা বিবেচনায় এ টাকার মিষ্টি কিনে সবাইকে খাওয়ানো যাবে বলে মনে হলনা। ছেলে এত বড় চাকরী পেয়েছে মানুষকে জিলাপী খাওয়ানো ঠিক হবেনা, নিদেন পক্ষে চমচমতো খাওয়াতেই হবে। এ বিবেচনায় একে একে ভাই বোনেরা তাদের ঈদের বখশিস, বৃত্তির টাকা, কবুতর বিক্রির টাকা ইত্যাদি বের করতে শুরু করল। বেরলো আরো হাজার খানেক। এক মণ চমচম কেনা হল- ২৪০০ টাকায়। রাতে আব্বার সাথে খেতে বসলাম, বিদ্যুৎ ছিলনা, হারিকেনের আলোয়। মাছের মাথাটা অতিরিক্ত হিসাবে আব্বা আমার পাতে দিলেন, হারিকেনের আলোয় কাঁটা দেখা যাচ্ছে না এই অজুহাতে।

একথা ওকথার পর জিজ্ঞেস করলেন- বেতন কত জানিসন ? আমি বললাম- ‘বেসিক ৪৩০০ টাকা’। আব্বা বললেন, ‘৩০ বছর চাকরী শেষে আমার এখন বেতন ৪,০৮০ টাকা, তুই শুরু করলি ৪,৩০০ টাকায়’। এত আনন্দ, এত ভাললাগায় আব্বা তার স্বভাবের বিরুদ্ধে চোখের পানি ফেললেন। আমি যথারীতি নির্বাক। বাবা বললেন, ‘শুধু মেধা থাকলেই এগুলো হয়না, আল্লার রহমত, মানুষের দোয়া লাগে। তোকে আলাহ্ রহমত করেছে, মানুষের দোয়া আছে, সারাদিনে দেখেছিস হাজার হাজার মানুষ, শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা তোকে নতুন করে দেখতে এসেছে। পুলিশের চাকরী, মানুষে নানা কথা বলে, আমি মনে করি দেশে ভাল পুলিশ খুব দরকার। মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করিস’।

আব্বা আজ নেই। জনম দুখিনী মাও গত হয়েছে কিছুদিন আগে। বাবা মাকে মানসিক স্বস্তি, তৃপ্তি দেওয়া ছাড়া সেই অর্থে তাদের জন্য খুব বেশী কিছু করার সুযোগও পাইনি। চাকুরী পাওয়ার দিনে আমার আব্বার ঐ ছোট্ট উপদেশ আমার জীবন চলার পথের অন্যতম পাথেয়। কয়েকদিন বাড়ীতে কাটিয়ে দ্রুত ঢাকা ফিরলাম। ফেরার তাড়নাও ছিল। আরো একজন যে তখন জানালায় বসে প্রহর গুনছে, তাকে নিয়েও তো অনেক স্বপ্নের জাল। উড়োউড়ি অনেক তো হল। চাকরীটা যখন পেয়েই গিয়েছি এডালে ওডালে আর কতদিন? নীড় তো বাঁধতে হবে। জীবনে বন্ধন না থাকলে স্বপ্ন ডানা মেলেনা, আলগা হয়ে যায়।

১৯৯৯ সালের ২৫ শে জানুয়ারি দুরুদুরু বক্ষে অনেক স্বপ্ন নিয়ে নাম লেখালাম জনপ্রশাসনের খেরোখাতায়। সেই থেকে শুরু নতুন পথ চলা। চলার পথে অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে। পুলিশিং সারা বিশ্বেই একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসাবে স্বীকৃত। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশে এ পেশা বিভিন্ন কারণে আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় ইতিমধ্যে কাটিয়েছি প্রায় দেড় যুগ। এই দেড় যুগের অর্জন একেবারে কম নয়। ন্যায়-নিষ্ঠা, সুনাম এবং আত্মতৃপ্তির সাথে দেশে বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি। রাব্বুল আলামিনের অশেষ কৃপায় দু’দুইবার জাতিসংঘ শান্তি পদক (UN Peace Medal), বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)’, দু’দুবার ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম)’ পদক আমাকে নিজ হাতে পরিয়ে সম্মানিত করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরচেয়েও যেটি বড় প্রাপ্তি সেটি হচ্ছে যেখানেই কাজ করেছি সেখানকার সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার হিসাবে বিদায়লগ্নে সাধারণ মানুষের যে অভূতপূর্ব ভালবাসা আমি পেয়েছি তা এখনো পর্যন্ত আমার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন। দেশে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অত্যন্ত দায়িত্বশীল পদ এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) হিসাবে কাজ করার পূর্বে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সহ অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘কসোভো’ এবং ‘সুদানে’ উচ্চপরিসরে কাজ, ইন্টারপোলসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন, জাতিসংঘের পুলিশ অফিসার নির্বাচক কমিটি ‘UNSAT’ কাজ করার সুযোগ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার বিরল সুযোগ রাব্বুল আলামিন আমাকে দিয়েছেন। সরকারী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাজে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরের অর্ধশতাধিক দেশে যাওয়ার, দেখার, শেখার সুযোগ আমার হয়েছে। এতকিছু ছাপিয়ে এখনো পর্যন্ত আমার দৃষ্টিতে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন গণমানুষের ভালবাসা।

বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘এ ভালবাসাই আমার জীবন ও কর্মের প্রেরণা’। আজকে যারা কিশোর, তরুণ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণ কিশোরদের প্রতি আমার অনুরোধ নিজেকে দেশের-দশের সেবার উপযোগী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। জীবন ফুল শয্যা নয়। প্রকৃত বীর সেই, যে লড়তে ভয় পায়না। নিন্ম-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের এক একটি ছেলে বা মেয়ের বেড়ে ওঠার গল্প একেকটি সোনার হরফে লেখা সংগ্রাম। তীর হারা ঢেউ পাড়ি দিতে হবে। যেতে হবে দূর বহুদূর। রাব্বুল আলামিন দুটি মাত্র কারণে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। হুক্কুল্লাহ্ এবং হুক্কুল এবাদ। অর্থাৎ রবের উপাসনা এবং সৃষ্টির কল্যাণে কাজ করাই মানুষের জীবনের দুটো মৌল উদ্দেশ্য। আমি আর দেশকে নিয়ে, আমার জন্মভূমি কে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। শেষ করছি আমার অত্যন্ত প্রিয় শিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের গানের দুটো কলি দিয়ে ‘স্বপ্ন দেখবো বলে আমি দু’চোখ পেতেছি, তাই তোমাদের কাছে এসে আমি দু’হাত মেলেছি’। আমার নিজের জীবনের স্বপ্ন অনেকটাই সত্যি হয়েছে। আমার বিশ্বাস আমার-আমাদের সন্তানদেরকে, মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়েও আমার স্বপ্ন সত্যি হবে এবং সেটি হবে অচিরেই, হয়তো আমাদের জীবদ্দশাতেই। ইত্তেফাক

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন

জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে ‍সুবিধা পাওয়া যাবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন

ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন

  • শাকিব: আমার ক্যারিয়ারের সব বিগ হিট সিনেমা ঈদ ছাড়াই এসেছে
  • এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ, সংস্কার শেষে ৬৫.৯%
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুপক্ষের সংঘর্ষ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১০ মৃত্যু
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার পরামর্শ কমিশনের
  • দেশের সংকটে যে সমাধান দেখছেন তারেক রহমান
  • যে কারণে প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • ‘হেফাজতের আপত্তির মুখে’ নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ
  • স্বর্ণের দামে ফের বড় লাফ, এগোচ্ছে নতুন রেকর্ডের দিকে
  • টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
  • রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
  • যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা