মাহমুদ উল্লাহকে রিয়াদকে নিয়ে এসবের কারন !
এলেন সবার সঙ্গেই কিন্তু গেলেন একা। যাওয়ার সময় ভেতরে বয়ে যেতে থাকা কালবৈশাখীতে মুখটা অন্ধকার মাহমুদ উল্লাহর। কলম্বোর পি সারা ওভালে তাঁর আসা-যাওয়ার মাঝখানের যে ঘটনাপ্রবাহ, সেটি পরিবর্তনের হাওয়ায় এই ব্যাটসম্যানের নামটি উড়ে যাওয়ার।
নিজেদের শততম টেস্টের আগে বাংলাদেশ শিবির থেকে তাঁর একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ারও। তা নয়তো কী? বিমানের টিকিট পাওয়া গেলে তো আজ সকালেই দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরার কথা ছিল মাহমুদ উল্লাহর। টিকিট না পাওয়ার কথা জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘ও কাল (আজ) যাচ্ছে না। ’
আজ না যাওয়া মানে একই দিনে কলম্বোয় এসে পড়ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানও। মাহমুদ উল্লাহর এখনই দেশে ফেরা বা না ফেরার ব্যাপারটি সম্ভবত চূড়ান্ত করবেন তিনি এসেই। তাতে অবশ্য দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া অস্বস্তির চোরাস্রোত গতি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। মাহমুদ উল্লাহকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে দলের অন্য ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়াটা গতকাল দুপুরেই জানা গিয়েছিল ম্যানেজারের কাছ থেকে, ‘এটা খুব স্বাভাবিক যে সবারই মন খারাপ। রিয়াদ এত বছর দলের সঙ্গে আছে। ও না থাকলে তো অন্যদের মন খারাপ হবেই। ’
মন খারাপ করা অনুভূতি যাতে আরো প্রবল না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ দল পি সারা ওভালে শততম টেস্টের প্রস্তুতিতে থাকতে থাকতেই আলাদা ব্যবস্থায় মাহমুদ উল্লাহকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো হোটেলে। অথচ সকালে দলের সঙ্গে টিম বাসেই মাঠে এসেছিলেন তিনি। এসেই ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এক পাক দেখা দিয়েই আবার সেই যে মিলিয়ে গেলেন, তাঁর আর কোনো খোঁজ নেই। দলের প্রত্যেকেই যখন ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং অনুশীলনে ব্যস্ত, তখনো মাহমুদ থেকে যান ড্রেসিংরুমের ভেতরেই।
দুপুর নাগাদ ম্যানেজার মাহমুদ খোলাসা করেন অনুশীলনে মাহমুদ উল্লাহর অনুপস্থিতির কারণ, ‘শততম টেস্টে রিয়াদ খেলছে না। খেলছেই না যখন, তখন ওকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াকেই সেরা সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ’ কেন? সে ব্যাখ্যাও তখনই পাওয়া যায়, ‘এত সিনিয়র ক্রিকেটারকে ড্রেসিংরুমে বসিয়ে রাখাটা ভালো দেখাবে না। তা ছাড়া এর মধ্যে আবেগী ব্যাপার-স্যাপারও আছে। ’ সম্ভবত শততম টেস্টের সময় ভেঙে পড়া মাহমুদ উল্লাহর মুখ দেখে মনোবল হারাতে চায়নি বলেই বাংলাদেশ শিবিরের ওই সিদ্ধান্ত।
যে সিদ্ধান্তের জন্য গতকালও মনমরা হয়ে ড্রেসিংরুমে বসে ছিলেন। একপর্যায়ে কলম্বোর কড়া রোদে অন্যরা যখন ঘেমে-নেয়ে একাকার মাঠে, তখন ড্রেসিংরুমের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে অপেক্ষমান মাইক্রোবাসে গিয়ে উঠলেন মাহমুদ উল্লাহ। খবর পেয়েই দৌড়ে যাওয়া এক আলোকচিত্রীকেও অনুরোধে ছবি তোলা থেকে বিরত রাখতে পারলেন। এরপর সেই যে হোটেলে গেলেন, খোদ দলের অনেক ক্রিকেটারই গত রাত পর্যন্ত মাহমুদ উল্লাহর দেখা পাননি। হয়তো হোটেল রুমের চার দেয়ালেই দুঃখ-বেদনায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন মাহমুদ উল্লাহ।
খাওয়ারই কথা। কারণ বিশ্বকাপের প্রথম বাংলাদেশি সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নেওয়া এই ব্যাটসম্যান নিশ্চয়ই আরেক ইতিহাসের অংশ হওয়ার প্রহর গুনছিলেন। দলে থেকে শততম টেস্টের অংশ হতে চাইবেন না কে! দলও এ উপলক্ষে কলম্বোর নামি টেইলার্সে সব ক্রিকেটারের জন্য নীল রঙা ব্লেজার বানাতে দিয়েছে, যার বুক পকেটে ‘১০০’ সংখ্যাটি খচিত থাকবে। অন্যদের সঙ্গে মাহমুদ উল্লাহও ব্লেজারের মাপ দিয়ে এসেছেন। অথচ তাঁকেই কি না সেই মাহেন্দ্রক্ষণের আগেই দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার রূঢ় সিদ্ধান্ত।
খালেদ মাহমুদ অবশ্য এটিকে পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখার পক্ষে, ‘আমরা সিরিজে ফিরতে চাই। সুতরাং এখানে আবেগ দিয়ে কাজ হবে না। এখানে সবাই পেশাদার ক্রিকেটার। কাজেই পারফরম্যান্সই সবচেয়ে বড় কথা। ’ এর আগে একটি ‘বড়’ কাজও করতে হয়েছে ম্যানেজারকে। ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার পথে খালেদ মাহমুদই ছিলেন মাহমুদ উল্লাহর ‘মেন্টর’। যে কারণে তাঁকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্তটি জানানোর দায়িত্ব বর্তেছিল ম্যানেজারের কাঁধেই, ‘রিয়াদের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ বলে সবাই চাচ্ছিল আমিই ওকে বিষয়টি জানাই। ’ এরপর সংবাদমাধ্যমকে জানানোর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ায় সম্ভবত নড়েচড়ে বসে বিসিবিও। তাতে দেশে ফিরে যেতে হলেও আবার ফিরবেন মাহমুদ উল্লাহ, সেটি ওয়ানডে খেলতে। এখান থেকে তাঁকে ওয়ানডে দলের বাইরে রাখার চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও কালকের ঘটনায় আরো সমালোচনার আশঙ্কায়ই সম্ভবত সীমিত ওভারের দলেও তাঁর নামটি ঢুকে গেল। তবে শততম টেস্টের একাদশে ঢুকছেন না কিছুতেই।
একাদশে মাহমুদ উল্লাহর জায়গায় সাব্বির রহমানকে না খেলিয়ে মোসাদ্দেক হোসেনকে টেস্ট অভিষেক করিয়ে দেওয়ার একটি আলোচনা গতকাল পর্যন্ত ছিল। মমিনুল হকের জায়গায় ইমরুল কায়েসকেও খেলানোর ভাবনা আছে। এসব ভাবনার পর্যায়ে থাকলেও চূড়ান্ত কেবল মাহমুদ উল্লাহর ব্যাপারটিই। অবশ্য এই শ্রীলঙ্কায় পরিবর্তনের হাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরো অনেক বড় নামই উড়ে গেছে। ২০০২ সালে এখান থেকেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম ও এনামুল হক সিনিয়রের মতো ক্রিকেটারদের। ২০০৭ সালে কলম্বোতেই পর্দা নেমেছিল খালেদ মাসুদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের।
মাহমুদ উল্লাহ নিশ্চিতভাবেই আবার ফিরবেন কিন্তু এখানে তাঁর পুরো ঘটনাপ্রবাহে এটা প্রমাণিত যে দারুণ খেলতে থাকা একটি দল পথ হারানোর অশনি সংকেতও দেখছে। এ জন্যই দেখছে যে সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার একাই নিচ্ছেন হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না একটুও। গুরুত্ব যখন নেই-ই, তখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন? একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে মুশফিককে নিয়ে এ প্রশ্ন খোদ দলের সিনিয়র সতীর্থদের। সুবাদে সুখী পরিবারের সুতোয়ও একটু টান পড়েছে। গতকাল যে পরিবারের সঙ্গেই মাঠে এলেন মাহমুদ উল্লাহ কিন্তু বেরিয়ে গেলেন একা!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন