মিথ্যা পরিচয়ে বিয়ে: সীমান্তের কাঁটাতারে ‘বন্দি’ ভারতীয় তরুণী,
মেয়েটি ভারতীয়, ছেলেটি বাংলাদেশি। মুঠোফোনে দুই জনের পরিচয়। তারপর প্রেম, অতঃপর বিয়ে। ছেলেটি ছিল ভারতেই। বিয়ের পর আসে বাংলাদেশে। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন মেয়েটিকেও। কিন্তু ভিনদেশী বউ গস্খহণ করতে নারাজ ছেলেটির স্বজনরা। এখন মেয়েটির কী হবে?
স্বজনরা মেয়েটিকে কেবল মেনে নিচ্ছে না এমন নয়, মেয়েটিতে নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে। সইতে না পেরে নিজের দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন মেয়েটি। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো কাঁটাতারের বেড়া। একটি মিথ্যে পরিচয়ের বিয়ে আর সীমান্তের কাঁটাতারে এখন অনিশ্চিত জীবনের মুখে পড়েছে ২০ বছর বয়সী ভারতীয় ওই তরুণী।
মেয়েটির নাম পারভীন খাতুন। বাড়ি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার রানীতলা থানার ভা-ারা গ্রামে। বাবার নাম নূর ইসলাম। আর ছেলেটির নাম রাজু আহমেদ। বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর নামোপাড়া গ্রামে। রাজু কাজ করতেন
শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে গত ৯ অক্টোবর পারভিন এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। ওই দিন তিনি গোদাগাড়ীর সীমান্ত এলাকা চরআষাড়িয়াদহের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। স্থানীয় এক দালালকে ধরে তিনি কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে যেতে চান। কিন্তু দালালকে দুই হাজার টাকা দিতে না পারায় তিনি সীমান্ত পার হতে পারেননি।
পরে খবর পেয়ে শনিবার সকালে মাটিকাটা ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ইসমত আর নার্গিস লোক পাঠিয়ে পারভিনকে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে এনে নিজের বাড়িতে রাখেন। শনিবার সকালে তার বাড়িতেই ওই গৃহবধূর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
পারভিন খাতুন জানান, তার স্বামী রাজু আহমেদ পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। বছর দুয়েক আগে তিনি ভারতের চেন্নাইতে কাজ করতেন। ওই সময় মুঠোফোনে রাজুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাজু ওই সময় তাকে জানিয়েছিল, তার বাড়ি ভারতেরই কুঠিরামপুর নামক এক স্থানে। দেড় বছর আগে ঠিকানা নিয়ে হঠাৎ একদিন রাজু তার বাড়িতে হাজির হয়। ওই দিনই বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর পারভিন গর্ভধারণ করলে তিনি শ্বশুর বাড়ি যেতে চান। এতে বেকায়দায় পড়ে রাজু তাকে জানান তার আসল ঠিকানা। তবে বিষয়টি তিনি সবার কাছে গোপন রাখতে অনুরোধ করেন। পারভিনও স্বামীর অনুরোধে তার আসল পরিচয় সবার কাছে গোপন রাখেন।
এরপর একদিন পরিবারের কাউকেই কিছু না জানিয়ে স্বামীর হাত ধরে বাংলাদেশে আসেন পারভিন। কিন্তু সুখের ঘর বাঁধা হয়নি পারভিনের। শ^শুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শুরু করে নানা রকম অত্যাচার। স্বামীর আচরণও বদলে যায় দিনে দিনে।
পারভিন জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তিনি একবার প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করতে যান। কিন্তু নিজের কোনো অভিভাবক নেই দেখে পুলিশ তার অভিযোগ আমলে নেয়নি। স্থানীয় গ্রাম্য মাতবরদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি নিজের দেশের পথে পা বাড়ান। কিন্তু টাকার অভাবে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
জানতে চাইলে অভিযোগ না নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) পার্থ প্রতীম। তিনি বলেন, ‘এ রকম কোনো নারীর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। দেখা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।’
এদিকে রাজুর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, যৌতুকের জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন পারভিনকে মারধর করতো। কখনও কখনও বাড়ির দরজা বন্ধ করে তাকে মারপিট করা হতো।
প্রতিবেশীরা আরও জানান, পারভিন অন্তঃসত্তা অবস্থায় ভারত থেকে আসে। মাস ছয়েক আগে পারভিনের সন্তান প্রসবের সময় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন সে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, মোজাহার আলী এখন যৌতুক নিয়ে ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে করাতে চাইছে।
রাজুর প্রতিবেশী আসাদুল হক (৪৮) বলেন, ‘মেয়েটির কষ্ট দেখে খারাপ লাগে। এ দেশে তার শ্বশুরবাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। তারপরেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য তার ওপর নির্যাতন করে।’
স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য ইসমত আরা নার্গিস বলেন, ‘পারভিনের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেই। সীমান্তের গ্রাম থেকে তিনিই লোক পাঠিয়ে তাকে ফিরিয়ে এনেছেন।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে শনিবার সকালে রাজু আহমেদের বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি: জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিগত ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেবিস্তারিত পড়ুন
সংঘর্ষের ঘটনায় রাবি কর্তৃপক্ষের মামলা, গ্রেপ্তার ১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেবিস্তারিত পড়ুন
স্থানীয়দের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ২০
বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গেবিস্তারিত পড়ুন