মিয়ানমার ৫ দিনেও ছাড়েনি নায়েক রাজ্জাককে
বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাককে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটকের পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও মুক্তি দেয়নি মিয়ানমার। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ায় সমাধান করতে চায় দেশটি। অনুপ্রবেশ আইন অনুযায়ী নায়েক রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। তবে মিয়ানমারের অনুপ্রবেশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ। রাজ্জাককে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তাদের দেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করেছেন নায়েক আবদুর রাজ্জাক। দেশটির অভিযোগ জলসীমানার এক কিলোমিটার ভিতরে অনুপ্রবেশ করেছেন তিনি। আর এই অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় দেশটি। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের জলসীমায় রাজ্জাকের অনুপ্রবেশের অভিযোগ সঠিক নয়। নায়েক রাজ্জাককে বাংলাদেশের জলসীমা থেকেই তুলে নিয়ে গেছে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।
মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শনিবার নেডিডোতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদারকি করছে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সমাধান করতে চাইছে। সে কারণে রাজ্জাককে দেশে ফিরিয়ে আনতে আরও বিলম্ব হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নায়েক রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে, তা সঠিক নয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি নায়েক রাজ্জাক তাদের দেশের জলসীমার এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করেছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে জানানো হয়েছে, নায়েক রাজ্জাকের নেতৃত্বে নাফ নদীতে বিজিবির একটি দল টহল দিচ্ছিল। সে সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জলসীমায় দুইটি নৌকায় তল্লাশি চালাচ্ছিলেন নায়েক রাজ্জাকের নেতৃত্বের দলটি। এ সময় মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা একটি ট্রলারে করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেন। তারা নায়েক রাজ্জাককে জোর করে তাদের ট্রলারে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ও হয়।
অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক বিজিবি নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে ছেড়ে না দেয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থান জানিয়েছে মিয়ানমার। আইন অনুযায়ী একজন অনুপ্রবেশকারী হিসেবেই বিজিবি নায়েককে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির আইনে অনুপ্রবেশের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- নির্ধারিত রয়েছে। মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। তবে নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ লক্ষ্যে কাজ করছে।
বুধবার ভোরে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা নায়েক রাজ্জাককে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে তোলপাড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। সে সময় নায়েক আবদুর রাজ্জাককে দ্রুত ফেরত দেয়ার দাবি জানানো হয়। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান সে সময় নায়েক রাজ্জাককে ছেড়ে দেয়ার জন্য আশ্বাসও দেন।
এদিকে শুক্রবার ঘুমধুম সীমান্ত বরাবর দেশটির ঢেকিবনিয়ায় দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিজিপি কর্মকর্তারা অতি দ্রুত নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দিবে বলে বিজিবি কর্মকর্তাদের আশ্বাস দেয়। তবে সেই আশ্বাস দেয়ার পরেও কোন কাজ হয়নি। এছাড়া বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ জানালেও এখনও সেই বৈঠক হয়নি।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে আটক নায়েক রাজ্জাকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। নায়েক রাজ্জাক সুস্থ আছেন। যে কোন সময় তিনি ছাড়া পেতে পারেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
এদিকে মিয়ামারের হাতে আটক নায়েক আবদুর রাজ্জাকের বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করছেন এবং আটক সীমান্ত রক্ষীর সঙ্গে অবমাননাকর আচরণের অভিযোগ তুলছেন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। ফেসবুকে শেয়ার করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে আবদুর রাজ্জাককে হাতকড়া পরানো অবস্থায় একটি চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর পরনে লুঙ্গি আর বিজিবির ইউনিফর্ম। আরেকটি ছবিতে দেখা যায় তার সামনে কিছু অস্ত্র রাখা। রাজ্জাকের মুখে আঘাতের চিহ্নও দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট একটি সংবাদপত্র মাযাওযাদিতে ছবিটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেশী একটি দেশের একজন সীমান্ত রক্ষীকে ধরে নিয়ে গিয়ে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ যে আচরণ করেছে তাকে বাংলাদেশের অনেকেই অবমাননাকর এবং চরম আপত্তিকর বলে মনে করছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন