মীর কাসেমের ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি জসীমের স্বজনদের
চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিন হত্যায় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রিভিউ খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার স্বাক্ষী এবং কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিনের স্বজনরা।
এদিকে আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার পর পই চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছে গণজাগরণ মঞ্চসহ মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠন।
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদের হত্যাকারী মীর কাসেম আলী ফাঁসির রায় বহাল রাখায় এক প্রতিক্রিয়ায় জসিম উদ্দিনের মামাতো বোন এবং মামলার সাক্ষী হাসিনা খাতুন বলেন, ‘জসিম একজন মায়ের সন্তান ছিল। তাকে অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ৪৬ বছর ধরে বুকে পাথর বেধে রেখেছি। মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হলে এ পাথর নেমে যাবে। আমি খুবই আনন্দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সঠিক বিচার হয়েছে। আমি মনে করি আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। অবশ্যই ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি এ মামলায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। আজ সে বিচার পেলাম। এখন সরকারের কাছে একটি দাবী যাতে এ ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করা হয়।’
এ মামলার অন্যতম স্বাক্ষী মৃদুল দে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘একাত্তরে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে হিন্দু জনবসতিপূর্ণ হাজারি লেইনে ডালিম হোটেল গড়ে তুলেছিল মীর কাসেম। সেখানে তাণ্ডব চালিয়েছিল সে। হিন্দুদের ওপর অকথ্য নির্যাতন অত্যাচার চালিয়েছিল।’
তিনি বলেন, একবার নয়, মীর কাসেমের ১৪ বার ফাঁসি হওয়া উচিত। ‘হাজারি লেইনের বাসিন্দা টুনটু সেন ও রঞ্জিত দাশকে অপহরণের পর নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল মীর কাসেম। আমার নিজের চোখে দেখা সে যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছিল। সে একাত্তরে যে অপরাধ করেছে তাতে তার একবার নয়, ১৪ বার ফাঁসি হওয়া উচিত।’
মঙ্গলবার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি বহাল রাখার রায়ে সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ট্রাইব্যুনালের এ স্বাক্ষী।
মৃদুল দে বলেন, ‘এ রায়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। তার সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। অবিলম্বে তা কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।’
একাত্তরের ৩০ নভেম্বর নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে সৈয়দ মো. এমরানসহ ৬ ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল মীর কাসেমের আলবদর বাহিনী। ডালিম হোটেলে আটকে রেখে তাদের ওপর অমানষিক নির্যাতন চালিয়েছিল আলবদর সদস্যরা। পরে ১৬ ডিসেম্বর সেই বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান তারা।
মীর কাসেমের সেই অত্যাচার তা-বের কথা স্মরণ করে সৈয়দ এমরান বলেন, ‘আমাদের ৬ ভাইকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে আটকে রেখেছিল মীর কাসেমের আলবদর বাহিনী। সেখানে তারা আমাদের ওপর মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল। আমাদের খেতে দিত না। অনাহারে ছিলাম। মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদর বাহিনী আমাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। মীর কাসেম নিজেও নির্যাতন চালিয়েছিল।’
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সৈয়দ এমরান এবং তার চাচাতো ভাই জামাল উদ্দিন ও সরোয়ার উদ্দিন।
মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রামের সদর দপ্তর ডালিম হোটেলকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর বানানোর দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো.সাহাব উদ্দিন।
একই সঙ্গে ডালিম হোটেলকে মৃত্যু কারখানায় পরিণত করা জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।
মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সাহাব উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালে আলবদর প্রধান হিসেবে মানুষের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছিল মীর কাসেম আলী, আদালত তার ফাঁসির রায় বহাল রাখায় আমরা খুশি।
ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ডালিম হোটেলকে মৃত্যুর কারখানায় পরিণত করেছিল মীর কাসেম আলী। তার ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করা হোক।
এদিকে ৭১’র রণাঙ্গনের সৈনিক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক সিরু বাঙ্গালী সকালে তার ফেসবুকে পেইজে রায় নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে ‘আজ আমার জন্য একধরনের এক ‘বিজয়’র দিন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ২০১২ সালের ২৭ মে যার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে আমি আমার ‘জবান বন্দি’ শেষ করেছিলাম এবং যার উপর ভিত্তি করে মতিঝিলের অফিস থেকে তাকে ১৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই মীর কাশেম আলীর আজ চরম পরাজয়ের দিন। আর কোনও দ্বিধা নেই। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন