বুধবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি লিয়ে মরতি চাই

‘পাপের ঘড়া পুরে যাবার লেগিন শাস্তি পাইছে মোমিন রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্রাশ ফায়ারে খয়পাতালে গেছে রাজাকাররা। এখন মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লিয়ে মরতি চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সাহসী দুই বীরাঙ্গনা নারী সোনাবালা আর মায়া রাণী।

দেশ স্বাধীনের পর একে একে পেরিয়ে গেছে ৪৪টি বছর। পেরিয়ে যাওয়া সময়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, বিরোধী শক্তির সরকার ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু আজও রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি’ মেলেনি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর গুচ্ছগ্রামের (বাগদিপাড়া) দুই বীরাঙ্গনা সোনাবালা আর মায়া রাণীর।

একাত্তরের সেই দুর্বিসহ যন্ত্রণা, সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি অনেকটা দুঃখ-দুদর্শার মধ্যে চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম। মানুষের বাড়িতে কাজ করে, শিমের ক্ষেতের ফুল তুলে, শামুক কুড়িয়ে দিনাতিপাত করছেন এই বীরাঙ্গনা দুই নারী।

চলতি মাসেই সরকার ৪৪ জন বীরাঙ্গনা নারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সে তালিকায় পাবনার আটঘরিয়ার গ্রামের এই দুই বীরঙ্গনার নাম না থাকায় হতাশ স্থানীয়রা।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, এত বছরেও এই দুই বীরাঙ্গনাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ার পেছনে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এম আবদুল আলীম জানান, গবেষণার কাজে তিনি সম্প্রতি পাবনা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ছায়াঘেরা শান্ত আটঘরিয়া উপজেলার গ্রামটির নাম খিদিরপুর গুচ্ছগ্রাম। অনেকে এটিকে বাগদিপাড়া হিসেবেও চিনেন। ওই গ্রামে যান। গবেষণার কাজের সময়েই তিনি সন্ধান পান অবহেলিত এই দুই বীরাঙ্গনা নারীর খবর।

ড. এম আবদুল আলীমের ফেসবুক ওয়ালের তথ্যের ভিত্তিতে দুই বীরাঙ্গনা নারীর খোঁজ নিতে সরেজমিনে যাওয়া হয় ওই গ্রামে। আটঘরিয়া বাজার থেকে কয়েকমাইল মাইল পেরিয়ে খিদিরপুর বাজার। বাজারের অদূরেই বিশাল একটি পুকুরপাড় ঘেঁষেই গড়ে উঠা খিদিরপুর বাগদিপাড়ার গুচ্ছগ্রাম।

স্থানীয় গ্রামবাসীর কাছে বীরাঙ্গনা সোনাবাল আর মায়া রাণীর নাম ধরে খোঁজ করতেই স্থানীয়রা নিয়ে যান সোনাবালার বাড়ির আঙিনায়। কিন্তু গিয়ে দেখা যায়, জীবিকা নির্বাহের খোঁজে তিনি পাশের মাঠে শিমক্ষেতে ফুল তোলার শ্রমিক হিসেবে কাজে রয়েছেন। খবর পেয়ে কাজ থেকে চলে আসেন বাড়িতে।

মাটির দেয়ালের ঘরের বারান্দায় হন্ততন্ত্র হয়ে এসে বসে পড়েন সোনাবালা। আলাপকালে জানা যায়, সোনাবালার বর্তমান বয়স কমপক্ষে ৬৫ বছর। স্বামী ননীপদ সরকার অনেক আগেই মারা গেছেন। এক ছেলে ও তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। সবার আলাদা সংসার। কখনও দিন মজুরি করে, কখনও শামুক-ঝিনুক তুলে, ধান কুড়িয়ে, কিংবা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে নিজেই নিজের সংসার কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার উপর রাজাকার বাহিনীর নির্যাতনের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি প্রথমত মাথা নিচু হয়ে যায় তার। চোখে ঝাপসার ইঙ্গিত বহন করছেন। লম্বা শ্বাস আর কিছু সময় বিলম্বের পর তিনি জানান, একাত্তরের ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতেই রান্না বসিয়ে দিয়েছিলেন চুলাতে। সেদিনের অবিবাহিত কিশোরী সোনাবালা ও তার ভাবি মায়া রাণী। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মমিন রাজাকারের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি দল বাড়িতে হানা দিয়ে জোরপূর্বক তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি স্থানে পাশবিক নির্যাতন চালায়। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে গেলে তাদের ফেলে পালিয়ে যায় রাজাকারের দল। পরে গ্রামেরই যুবক ননীপদ সব জেনে বুঝে তার পরিবারের অমতে আমাকে বিয়ে করেছিল।

পুকুরপাড়ের অপর প্রান্তে একটি টিনের ঘরে তার বসবাস মায়া রাণীর। মায়া রানী জানান, ননদ সোনাবালা আর আমি রান্না করার সময় মমিন রাজাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে ও সোনাবালাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে আমি যেতে না চাইলে ঘরের খুঁটি ধরেছিলাম। তারপরও তারা আমাকে ছাড়ে নাই। হাতে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে। তারপর লোকজন এগিয়ে গেলে আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে শুনতে পারি পাশের গ্রাম বেরুয়ানে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের উপর হামলা চালিয়ে ব্রাশফায়ারে রাজাকারের নেতা মোমিনসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। এ সময় নাকি দুই একজন সাধারণ মানুষও মারা গেছেন।

আক্ষেপের সুরে সোনাবালা ও তার ভাবি মায়া রাণী বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর এতদিন পার হয়ে গেল, কিন্তু কেউ আমাদের কোনো খোঁজ নিল না। স্বীকৃতি তো দূরের কথা, সরকার থেকে কোনো অনুদান পাইনি। দেশে এতকিছু হয়, এত মানুষ এতকিছু স্বীকৃতি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বেলায় কিছুই নেই। দেশের জন্যই তো আমাদের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। তার প্রতিদান কি এই অবহেলা, অবজ্ঞা। কীভাবে আমাদের সংসার চলছে তার খোঁজও সরকার থেকে কখনও নেয়া হয় নাই। শুনছি কিছুদিন আগে সরকার ৪৪ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে অথচ সেখানে আমাদের নাম নাই। আমরা জানতেও পারলাম না।
তারা বলেন, এখনও মানুষ নিন্দা করে, মানুষের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে আছি। আর কয়দিনই বা বাঁচবো। শেষ বয়সে এসে সরকার আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু দিলে মরেও শান্তি পাবো।

আটঘরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) ও সে সময়ের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান জানান, যখন আমরা খবর পেলাম মমিন রাজাকারের দল হিন্দুপল্লিতে ঢুকে সোনাবালা ও মায়া রাণীকে বেইজ্জতি করছে, এমন খবর পেয়ে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহজাহান আলী ও কমান্ডার আনোয়ার হোসেন রেনুর নেতৃত্বে আমরা বেরুয়ান নামক স্থানে রাজাকারদের এমবুশ করি। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের সম্মুখযুদ্ধে কয়েকজন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মমিন রাজাকারসহ ১০ রাজাকার নিহত হয়। সোনাবালা ও মায়া রাণীকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

একাত্তরের সেইদিনের ঘটনার স্বাক্ষী স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক মো. তৈয়ব আলী মণ্ডল জানান, আমরা স্বচক্ষে দেখেছিলাম মমিন রাজাকার ও তার দলবলের সোনাবালা ও মায়া রাণীর নির্যাতনের ঘটনা। তারা এতদিনেও যে স্বীকৃতি পাননি এটা আমাদের জন্য হতাশা ও দুঃখের। আমরা চাই দেরীতে হলেও তাদের রাষ্ট্রিয় মর্যাদা মুক্তিযাদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হোক।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এম আবদুল আলীম বলেন, ‘দীর্ঘদিনেও এই দুই বীরাঙ্গনাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ার পেছনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করি। তাদের অনেক আগেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া উচিত ছিল। তাদের স্বীকৃতি দিতে না পারলে স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

আর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. জহুরুল হক বলেন, ‘আমরা ইতোপূর্বে তাদের নাম ইউএনওর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু কেন তাদের নাম তালিকায় উঠল না তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা চাই তারা বীরাঙ্গনা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হোক। আবারও তাদের দরখাস্ত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘দেশের বীরসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক। আর এ বিষয়গুলো তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখছেন। জেলার আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুরের দুই বীরাঙ্গনা নিয়মমাফিক আমাদের কাছে আবেদন করলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাতে তারা তালিকভুক্তি হতে পারে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা হবে।’

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

১ লাখ ৪০ হাজার ছাড়াল স্বর্ণের ভরি

দেশের বাজারে ফের স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্সবিস্তারিত পড়ুন

জাতিসংঘ: বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে চরমবিস্তারিত পড়ুন

টাঙ্গাইলে বাসার সামনে থেকে পুলিশ সুপারের মোবাইল ফোন ছিনতাই

টাঙ্গাইলে বাসার সামনে থেকে ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপারবিস্তারিত পড়ুন

  • আসিফ নজরুল: সাকিবের প্রতি মানুষের ক্ষোভ অযৌক্তিক নয়
  • খুলনায় মসজিদে দানের ছাগল নিয়ে সংঘর্ষ, মুসল্লির মৃত্যু
  • নওগাঁয় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী আহত, আটক ৩
  • প্রবারণা পূর্ণিমার বর্ণিল উৎসব বান্দরবানে
  • দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ চান তারেক
  • মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন
  • হাইকোর্টে ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আঁকা গ্রাফিতি হেঁটে দেখলেন ড. ইউনূস
  • মাধ্যমিকে ফের চালু হচ্ছে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে মির্জা ফখরুলের রিভিউ আবেদন
  • শিক্ষা ভবনের সামনে সড়কে শুয়ে শিক্ষকদের অবরোধ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৩ জনের মৃত্যু