মুখের আলসার প্রতিকারের কিছু সহজ উপায়
মুখের ক্ষত সাধারণ প্রদাহজনিত সমস্যা। ২০% মানুষ এই সমস্যাটিতে ভোগে থাকে। যেকোন মানুষেরই এই সমস্যাটি হতে পারে, তবে পুরুষের চেয়ে মহিলারা বেশি ভোগে থাকেন। মুখের ক্ষত কোন সংক্রামক রোগ নয়। ঠান্ডা ও জ্বরের কারণে যে ফোস্কা হয় তার সাথে মুখের ক্ষত বা কেঙ্কার সোরের কোন মিল নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘অ্যাপথোস স্টোমাটাইটিস’ বলে। মুখের এই ক্ষত হচ্ছে এক ধরণের আলসার যা মুখের ভেতরের মিউকাস মেমব্রেনে হয়। এটা হলে সাধারণত লাল ক্ষত এর মধ্যখানে সাদা বা হলুদ বর্ণ দেখা যায়। এই ক্ষত গাল বা ঠোঁটের ভিতরের অংশে, জিহবাতে, মুখের উপরের অংশে এবং মাড়ির মূলে হতে দেখা যায়।
কেঙ্কার সোর হলে ব্যথা, জ্বলুনি, জ্বর এবং লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। মুখের আলসার হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখন ও জানা যায়নি। কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায় যারা মুখের আলসার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে যেমন- মুখে আঘাত পেলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে, শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হলে, অনেক বেশি চাপের মধ্যে থাকলে, অত্যধিক ধূমপান, বংশগত কারণ, নির্দিষ্ট কোন ঔষধের জন্য, অ্যানেমিয়া হলে, মুখে ব্যবহারের ভুল পণ্য ব্যবহার করলে, ফুড অ্যালার্জি এবং ভাইরাসের ইনফেকশন।
বেশির ভাগ মুখের ঘা ৭-১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এর জন্য বিশেষ কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যার মাধ্যমে মুখের ঘা এর ব্যথা ও প্রদাহ কমানো যায় এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা যায়, সেগুলো হল :
১। অ্যালোভেরা
মুখের ঘা প্রতিকারে অ্যালোভেরা সবচেয়ে কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়। এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও নিরাময়কারী উপাদান আছে যা ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে এবং দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বের করে মুখের ঘা এর মধ্যে লাগান। এভাবে দিনে কয়েকবার লাগান। অথবা অ্যালোভেরার জুস দিয়ে দিনে ৩-৪ বার মুখ পরিষ্কার করুন।
২। বেকিং সোডা
বেকিং সোডা ক্ষারীয় তাই এসিডকে নিরপেক্ষ করে ও মুখের ঘা কে বিরক্ত করে এবং ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ঘা নিরাময়ে সাহায্য করে। ১/২ কাপ উষ্ণ গরম পানিতে ১ চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
৩। মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া
মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়ার এন্টাসিড উপাদান মুখের এসিডকে নিষ্ক্রিয় করে যা মুখের ঘা এর তীব্রতা বাড়ায়। একটি কটন বলে মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া লাগিয়ে মুখের ঘায়ে লাগাতে পারেন দিনে ৩-৪ বার।
৪। উষ্ণ লবন পানি
যদি আপনার মুখের ঘাটি ফুলে যায় তাহলে আলতো ভাবে ঘষুন এবং যদি টনটন করে তাহলে লবণ পানি দিয়ে গারগল করুন। লবন পানি দিয়ে গারগল করলে ঘায়ের চারপাশে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, তাই কোষের ভেতরে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া শুরু হবে ফলে বাহির থেকে তরল শোষণ করবে কোষ এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভেতরের তরল বাহির হয়ে আসবে। ফলে ব্যথা কমে যাবে। ১ কাপ গরম পানিতে ১ চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। মুখের ঘা ভালো না হওয়া পর্যন্ত দিনে ৩ বার গারগল করুন।
৫। ফিটকিরি
মুখের ঘা যেহেতু সব সময় আদ্র থাকে তাই এই ঘা সারানোটা একটু কঠিন। আচার বানানোর জন্য ও শশা থেকে পানি বের করার জন্য ফিটকিরি পাউডার ব্যবহার করা হয়। ঠিক তেমনি মুখের ঘা শুকানোর জন্য ও ফিটকিরি পাউডার কাজ করে। ফিটকিরির একটা ছোট টুকরা সরাসরি মুখের ঘা এর মধ্যে লাগান। ১ মিনিট এভাবে রেখে দিন। এটা স্বাদে তিক্ত তাই ভালো লাগবেনা, রসটুকু গিলে ফেলবেন না। ৬০ সেকেন্ড পরে লালা সহ ফিটকিরি বাহির করে ফেলুন। তবে মুখ ধুয়ে ফেলবেন না। এতে করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে। আপনার আলসারটি যেতে হয়তো দুই বা তিন দিন সময় লাগবে তবে ব্যথা চলে যাবে তাড়াতাড়ি। যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যথা না যায় তাহলে প্রক্রিয়াটি আবার অনুসরণ করুন।
সতর্কতা – এক আউন্স ফিটকিরি মানুষের জন্য বিষের মত কাজ করে। গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা নিষেধ।
টিপস :· অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট মুখের ঘা এ লাগিয়ে রেখে দিলে ব্যথা কমে যাবে ও নিরাময় হবে।
· হাইড্রোজেন পারক্সাইড দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ঘা ভালো হয়।
· প্রতিদিন টকদই খান।
· লবঙ্গ তেল, মধু, নারিকেল তেল, ধনিয়া পাতা, গোল মরিচের পেস্ট, টি ব্যাগ ইত্যাদি ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান গুলো ও মুখের আলসারের উপশমে কাজ করে।
· মুখের আলসার হলে এসিডিক খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এসিড মুখের ঘা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন