মুন্নার ‘গ্যালাক্সি বাইক’ ৩ ঘণ্টা চার্জ দিয়ে পুরোদিন চলবে..অবশেষে সরকারি স্বীকৃতি পেল
সীতাকুন্ডের মুন্নার আবিষ্কৃত সেই ‘গ্যালাক্সি বাইক’ অবশেষে সরকারি স্বীকৃতি পেল। বিস্ময় জাগানো আবিষ্কারটি পরীক্ষা করে গাড়িটি দেশের কল্যাণে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
এই মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে তাকে ৪ লাখ টাকার অনুদানও প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে আরো অনুদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দপ্তরটি। ফলে নতুন প্রেরণা নিয়ে অধিকতর গবেষণা শুরু করেছে মুন্না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ডের উপজেলা গেইট সংলগ্ন পেশকারপাড়ার বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলামের পুত্র কলেজ ছাত্র মনোয়ারুল ইসলাম মুন্না বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি যন্ত্র আবিষ্কার করে এলাকাবাসীকে চমকে দেন।
বিশেষত তার সর্বশেষ আবিষ্কার মোটর সাইকেলটি সর্বত্র ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। মাত্র ৩ টাকার বিদ্যুৎ খরচে এ গাড়িটি চলে সারাদিন। এতে কোন প্রকার তেল গ্যাসের দরকার পড়ে না। মুন্নার এই প্রযুক্তি বিস্মিত করেছে বুয়েটের প্রকৌশলীদেরও। বুয়েটের চৌকস প্রকৌশলীরা মুন্নার গ্যালাক্সি মোটর সাইকেলের
ডায়োগ্রাম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাংলাদেশের বাজারের জন্য এ ধরণের মোটর সাইকেল প্রয়োজন আছে বলে অভিমত দিলে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় তাকে উৎসাহিত করতে ৮ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা করে। যার মধ্যে ৪ লাখ টাকা ইতিমধ্যে প্রদানও করা হয়েছে। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, আবিষ্কৃত গ্যালাক্সি মোটর সাইকেলটি বাজারের অন্য মোটর সাইকেলগুলোর চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম।
এতে যন্ত্রপাতির ব্যবহার, গায়ের রং সবকিছুতেই কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এ গাড়ির বডিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল। এছাড়া অন্যসব বাইকের মত হ্যান্ডল, ব্রেক, সিট, হেড লাইট, ব্রেক লাইট, ড্রাম ব্রেকসহ সবই আছে। মুন্না নিজের আবিষ্কৃত মোটর সাইকেলটির নাম রেখেছেন ‘গ্যালাক্সি বাইক’।
তার আবিষ্কৃত মোটর সাইকেল প্রসঙ্গে ক্ষুদে বিজ্ঞানী কলেজ ছাত্র মনোয়ারুল ইসলাম মুন্না প্রতিবেদককে জানান, এই মোটর সাইকেলটির বিশেষত্ব হলো এটি কোনরকম তেল গ্যাস ছাড়াই হলে। তবে এতে চার্জের প্রয়োজন হয়। মাত্র ৩/৪ ঘণ্টা চার্জ দিয়েই গাড়িটি পুরোদিন চালানো সম্ভব। মুন্না জানান, এই গাড়িটি তৈরিতে প্রচুর স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করায় এর বডি দীর্ঘসময় সুরক্ষিত থাকবে। কোনরকম মরিচা পড়বে না।
গাড়িটি চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ১২ ভোল্টের ৫টি ব্যাটারি। অর্থাৎ ৬০ ভোল্টের ব্যাটারিতে মাত্র ৩ ঘণ্টা চার্জ দিলেই মোটর বাইকটি চলবে পুরোদিন। একবার চার্জে কমপক্ষে ৬০ কি.মি. চলবে এই গাড়ি। এটি তৈরি করতে ৮০ হাজার টাকার মত খরচ পড়েছে জানিয়ে আবিষ্কারক মুন্না আরো বলেন, প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যয় একটু বেশি হয়েছে। যদি একসাথে অনেকগুলি মোটর সাইকেল তৈরি করা হয় তবে খরচ অনেক কম পড়বে। সেক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকাতেও একটি মোটর সাইকেল বাজারজাত করা যাবে।
প্রাথমিকভাবে মোটর সাইকেলটির নাম রেখেছেন গ্যালাক্সি বাইক। এই বাইক তৈরি করতে তার প্রায় দেড় মাস সময় লেগেছে। তবে উপযুক্ত পৃষ্টপোষকতা পেলে অল্প সময়ে আরো আধুনিক মোটর সাইকেল তৈরী করা যাবে বলে তার অভিমত। কিভাবে এই আবিস্কারের কথা মাথায় এলো ? এমন প্রশ্নের জবাবে মুন্না বলেন, বাড়ি থেকে অনেক দূরে মৎস্য চাষের ব্যবসা থাকায় সেখানে তাকে প্রতিদিন যেতে হত।
নিয়মিত এত দূরত্বে যাতায়াত করতে খরচ পড়ত অনেক বেশি। তাই কিভাবে খরচ কমানো যায় সেই চিন্তা করতে গিয়েই এই বাইক তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। আবিষ্কারের প্রতি ঝোঁক তো আগে থেকেই ছিলো। তার উপর বাইকের চিন্তা এসে যাওয়ায় শুরু হয়ে গেল চেষ্টা। ২০১৪ সালের শেষ দিকে মোটর সাইকেলটি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। প্রথমদিকে তার মোটর সাইকেলে একটি চেইনও লাগানো হয়।
পরে আরো আধুনিক করার পর চেইনটি তুলে ফেলা হয়। গ্যালাক্সি বাইকের আবিষ্কারক মুন্না আরো বলেন, সেসময় আমার এই আবিষ্কারের খবরটি দৈনিক পূর্বকোণের ১ম পৃষ্টায় গুরুত্বের সাথে ছাপা হয়। প্রথমদিকে অনেকেই এই আবিষ্কার নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য শুরু করে। এতে আমি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি। শেষে আমি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ডায়োগ্রাম ইত্যাদি সহকারে ফাইল তৈরি করে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি।
সেখানে তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেন এবং আবিষ্কারটি কতটা নির্ভরযোগ্য তা খতিয়ে দেখতে বুয়েটের একটি প্রতিনিধি দলকে দায়িত্ব দেন। এরপর বুয়েটের প্রকৌশলীরা মোটর সাইকেলটির বিষয়ে আমার সাথে কথা বলেন এবং যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তির ব্যবহারগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। তারা সব কিছু দেখে বিস্মিত হন এবং এটি দেশের বাজারে কতটা উপযোগী সে সম্ভাবনার বিষয়টিও যাচাই করে আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ বলে নির্বাচন করেন।
শেষে আমার ফাইলটি তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে এই মন্ত্রাণালয় আমাকে এই গবেষণায় সহযোগিতার জন্য ৮লাখ টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী ইতিমধ্যে ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
মোটর সাইকেলটি আরো আধুনিক করাসহ কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে অবশিষ্ট ৪লাখ টাকাও প্রদান করা হবে। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সকল কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানী মুন্না আরো বলেন, আমাদের দেশে ভালো কাজকে কেউ উৎসাহিত করতে চায় না। অনেক প্রতিবদ্ধকতার মধ্যেই এসব গবেষণা করতে হচ্ছে।
বিগত কয়েক বছরে মোবাইল কলে যন্ত্রপাতি স্টার্ট, মটর অটো স্টার্ট যন্ত্র, অটোমেটিক পানির ট্যাংক ভর্তিকরণ ও খালি করার যন্ত্রসহ ১৭টি প্রযুক্তি আবিষ্কার নিয়ে করেছেন তিনি। তবে সর্বশেষ আবিষ্কার গ্যালাক্সি মোটর বাইকটি নিয়ে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল প্রস্তুতকারক কোম্পানি তার সাথে যোগাযোগ করেছে।
তাদের প্রস্তাবগুলোতে নিজেদের স্বাথের্র বিষয়টি বেশি ছিল। ফলে পরিস্থিতি বুঝে তিনি এড়িয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেন। মুন্না বলেন, এখন আর সেরকম চিন্তা ভাবনা করছি না। আপাতত সরকারি অনুদান পেয়ে গবেষণায় আরো উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছি।
স্বল্পমূল্যে এই মোটর সাইকেলে দেশের মানুষ উপকৃত হলে তার আবিষ্কার সার্থক হবে বলে মনে করেন তিনি। মুন্নার এই আবিষ্কার প্রসঙ্গে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের সাংবাদিকদের বলেন, মুন্নার মোটর সাইকেল আবিষ্কারসহ গবেষণা কাজে সহযোগিতা করতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে একটি ফান্ড থেকে ৮ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতির উপর নির্ভর করে অবশিষ্ট টাকাও প্রদান করা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন