মুন্সিগঞ্জে নেশায় আসক্ত পথশিশুর জীবন (ছবিসহ)
নাসরিন সুমি, সিনিয়র রিপোর্টার, আমাদের কন্ঠস্বর: মুন্সিগঞ্জ সদর, লৌহজং ও সিরাজদিখান উপজেলা শহর সমুহের বাজারে, স্টেডিয়াম এলাকায়, রাস্তায় এখানে সেখানে পথ শিশুদের বিচরন একটি অতি চেনা দৃশ্য হয়ে পড়েছে আজকাল । এই সকল পথশিশুদের আরেকটি ছদ্ম নাম টোকাই । ছেড়া প্যান্ট, কাঁধের একপাশে টোকানো কাগজ বা পুরোনো জিনিষপত্র ভরা ঝুলানো বস্তা অন্যপাশে পুরোনো জামা। অথবা কাঁধে এসব কিছুই নেই, একদম খালি গায়ে শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই সকল শিশুরা।
কিন্তু ভয়ানক বিষয় হলো একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে এই সকল শিুশুর প্রায় সকলেই বিড়ি, সিগারেট, গুল, গাঞ্জা এবং ডেন্ডি সেবনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহন করছে প্রতিনিয়ত। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে যে, সবচেয়ে বেশী মাত্রার শিশুরা ড্যান্ডি সেবনে আসক্ত। যদিও ড্যান্ডি কোন প্রচলিত মাদক নয়। একধরণের আঠা। মূলত সল্যুশন নামে পরিচিত। এটাই ড্যান্ডির মূল উপাদান। এই আঠা একটি পাতলা পলিথিন প্যাকেটে ভরে সেই পলিথিনের খোলা অংশ মুখে লাগিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়ার মাধ্যমেই ড্যান্ডি সেবন করে শিশু আসক্তরা।
সংবাদ সংগ্রহের কোন এক মুহুর্তে দেখা হলো আনুমানিক ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের মাদকাসক্ত একটি পথশিশুর সাথে। বেশীরভাগ সময়ই সে মুন্সিগঞ্জের স্টেডিয়াম এলাকায় থাকে। এই এলাকাটি তার অনেক প্রিয়। কারন সে এখানে থেকে মাদক সেবন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। আমার প্রশ্নের জবাবে সে দ্বিধাহীন চিত্তে বলে দিল “বিড়ি খাই, আঠা (ড্যান্ডি) টানি। জোতার আঠা। একটা ডিব্বা ৩৫ টাকা, ১০ দিন চইলা যায়। ১লা বৈশাখের দিন হগ্গলে মিইলা টানছিলাম ধুমছে। বছর একটা দিন খাইতো অইবো না? এইটা খাইলে মারলেও আলাপ পাইবো না। আপনি খাইলে আপনার ও পিনিক উঠবো। হা হা হা”
পৃথিবীময় চিরসত্য প্রবাদটি আমরা সকলেই জানি “শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত”। অথচ পথহারা এই মাদকাসক্ত পথশিশুগুলোর জীবনের সমাপ্তি কোথায় কেউ জানে না। কিন্তু গবেষকদের মতে এই সকল পথ শিশুদের কেউ কেউ নেশায় আসক্ত হয়ে অসুষ্থ্য হয়ে নি:শ্বেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ সমাজিক অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। যা একটি সমাজের জন্য কোন ভাবেই কল্যানকর নয়। দু:খজনক হলেও সত্যি যে এই সকল শিশুদের পূনর্বাসনে সরকারী বা বেসরকারী কোন উদ্যোগের প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছেনা খুব একটা।
মুন্সীগঞ্জের পথশিশুদের এই ধরনের মাদকাসক্ত জীবন থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং পথশিশুদের পুনর্বাসনে করনীয় বিষয়ক আলাপকালীন মুন্সগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা জনাব সারাবান তাহুরা বলেন, পথশিশুদের উন্নয়নে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যাক্তি উদ্যোগে কেউ এদের কল্যানে এগিয়ে আসলে আমরা সাধুবাদ জানাবো এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব। এ বিষয়ে আমাদের প্রশাসনের যথেষ্ট স্বদিচ্ছা রয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের এই জনপদে অবহলোয় বেড়ে উঠা এই সকল শিশুদের মাদকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। তা না হলে এই সকল শিশুদের জীবন নি:শ্বেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে বেড়ে উঠবে অমানবিক, অসামাজিক আচরনের মধ্য দিয়ে, জড়িত হবে সামজিক অন্যান্য অপরাধ কমর্কান্ডের সাথে। ধ্বংস হবে সমাজ, ধ্বংস হবে আমাদের জাতি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কোকেনের সবচেয়ে বড় চালানে জড়িতদের নাম পেয়েছে ডিএনসি
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেশে কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান জব্দের ঘটনায়বিস্তারিত পড়ুন
শপথ করছি, মাদক ছোঁব না
মাইকে ঘোষণা হলো ‘এখন মাদকের বিরুদ্ধে আমরা শপথ নেবো’। শপথবিস্তারিত পড়ুন
ক্ষতি বছরে ১ লাখ কোটি ডলারঃ ধুমপানের পিছনে
ধুমপানে প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হয় এক ট্রিলিয়ন বাবিস্তারিত পড়ুন