মুফতি হান্নানসহ তিনজনের দাফন সম্পন্ন
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার দুই সহযোগীর কঠোর পুলিশি প্রহরায় নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
অন্য দুইজন হচ্ছেন- শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপন।
সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় বুধবার রাত ১০টা ১ মিনিটে তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার ভোরের আগেই মরদেহ পৌঁছে দেওয়া হয় যার যার গ্রামের বাড়িতে। পরে দাফন সম্পন্ন হয় নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে।
‘মুফতি’ হান্নানকে তার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরন গ্রাম, বিপুলকে তার চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের ‘বকশি পাটওয়ারী বাড়ি এবং রিপনকে তার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
প্রধান আসামি ‘মুফতি’ হান্নানের সঙ্গে একই মঞ্চে বিপুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় রিপনকে।‘মুফতি’ হান্নানকে দাফন করা হয়েছে এ
ময়না তদন্ত শেষে রাত ১২.৪ মিনিটে কাশিমপুর কারাগার থেকে ‘মুফতি’ হান্নান ও বিপুলের মরদেহ বের করে আনা হয়। আলাদা আলাদা অ্যাম্বুলেসে করে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে হান্নানের মরদেহ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া এবং বিপুলের মরদেহ চাঁদপুরের বাড়িতে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫.২০ মিনিটে ‘মুফতি’ হান্নানের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিনটি গাড়ি তার বাড়িতে পৌঁছায়। ভোর পৌনে ছয়টার দিকে মুন্সীপাড়া বালিকা মাদ্রাসা ও এতিমখানা ময়দানে তার নামাজে জানাজা পড়ান বড় ভাই আলীউজ্জামান।
অন্যদিকে ভোর ৪.৩০ মিনিটে বিপুলের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দু’টি গাড়ি তার বাড়িতে পৌঁছায়। ভোর ৪.৩৮ মিনিটে বকশি পাটওয়ারী বাড়ির উঠানে নামাজে জানাজা পড়ান মধ্যতরপুরচণ্ডী আলী দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী।
এছাড়া রাত ১০.৩৯ মিনিটে সিলেট কারাগার থেকে রিপনের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দু’টি গাড়ি তার বাড়ির পথে রওনা হয়। রাত ১২.১৫ মিনিটে পৌঁছানোর পর দেড়টার দিকে কোনাগাঁও শাহী ঈদগাঁহ ময়দানে তার নামাজে জানাজা পড়ান কোনাগাঁও জামে মসজিদের ইমাম মো. ইব্রাহিম আলী।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় আনোয়ার চৌধুরীসহ আরো অনেকে আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।
২০০৭ সালের ৩১ জুলাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতেচার্জশিট দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে আরেক জঙ্গি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ও মুফতি মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এরপর উচ্চ আদালতে তারা আপিল করলে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এরপর তারা রিভিউ আবেদন করলে সেটাও গত ২২ মার্চ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে সেটাও খারিজ করা হয়। ফলে কারাবিধি অনুযায়ী, তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা ছিল না।
দুই জঙ্গি মুফতি হান্নান ও বিপুলের ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি হিসেবে একের পর এক বুধবার রাতে কারাগারে ঢোকেন ফাঁসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল কবির ৭টা ৪০ মিনিটে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে কারা মহাপরির্দক বিগ্রেডিয়ার সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন। এর আগে সাড়ে ৭টায় ঢোকেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। সন্ধ্যা ৭টা ৩৩ মিনিটে ঢোকেন সিভিল সার্জন সৈয়দ মঞ্জুরুল হক। গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে ঢোকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সও।
এদিকে কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে বুধবার সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করেছেন মুফতি হান্নানের পরিবার সদস্যরা। বুধবার ভোর ৬টার দিকে কারাগারে পৌঁছানোর পর মুফতি হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভীন, দুই মেয়ে নিশাত ও নাজনীন এবং বড় ভাই আলী উজ্জামান সকাল ৭টা ১০ মিনিটে তার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পান। তখন থেকে তারা প্রায় ৭টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত হান্নানের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা বেরিয়ে যান।
এদিকে জঙ্গি রিপনের ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢোকেন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল ইসলাম। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় তারা কারাগারে ঢোকেন। এর আগে সন্ধ্যায় সেখানে ঢোকেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ঈমাম মুফতি বেলাল হোসেন। তিনি পৌনে ১০টার দিকে রিপনকে তওবা পড়িয়ে কারাগার থেকে বের হন। এরপর কারাগারে প্রবেশ করেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. অমল রতন সাহা।
রিপনের সঙ্গেও শেষ সাক্ষাৎ করেন স্বজনরা। সাক্ষাত করেন তার বাবা আবু ইউসুফ, মা আজিজুন্নেছা, ভাই নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী।বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে ১টি মাইক্রোবাস ও একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে রিপনের ২১ জন স্বজন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। ৮টা ৪০ মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে যান।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. সগির মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জঙ্গি রিপনের মা, বাবাসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজন তার সাথে দেখা করেন।
তিন জঙ্গির ফাঁসি উপলক্ষে উভয় কারাগারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
উপদেষ্টা মাহফুজ: সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন,“গণ-অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থেবিস্তারিত পড়ুন
বড় ব্যবধানে অ্যান্টিগা টেস্টে হারলো বাংলাদেশ
চতুর্থ দিনেই অ্যান্টিগা টেস্টের ফল কোন দিকে গড়াচ্ছে, তা নির্ধারণবিস্তারিত পড়ুন
কিশোরগঞ্জে মা-বাবা ও ২ সন্তানের মরদেহ উদ্ধার
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় একই পরিবারের চার জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেবিস্তারিত পড়ুন