”Attention-Seeking Freak” এই উপাধি তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন বহু বছর আগেই। নিজেকে জাহির করার জন্য বা নিজের ধন সম্পদের ক্ষমতা দেখানোর জন্য এই ব্যক্তি দ্যা এপ্রেন্টিস এবং সেলিব্রিটি এপ্রেন্টিস নামের ২টি টিভি রিয়েলিটি শো চালাতেন। আমেরিকার এনবিসি চ্যানেল এই দুটো শো প্রচার করত। নারী অধিকার নিয়ে ব্যঙ্গ করার অভিযোগটাও ছিলো তার বিরুদ্ধে । আর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা তার কাছে অনেকটা ‘ডাল-ভাত’ । জনপ্রিয় টিভি শো ”দ্যা মর্নিং শো তাকে নাম দিয়েছিলো – ”দ্যা লিভিং কমেডি” হিসেবে। তিনি আর কেউ নন – আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ড বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এর আগে মুসলিম-বিরোধী কথা বলে বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মুসলিম সম্প্রদায়কে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।’ এ ব্যাপারে তিনি একটি শর্তসাপেক্ষে প্রস্তাবও দিয়েছেন বিজ্ঞানী ইলন মাস্ককে।

মাস্ককে তিনি প্রস্তাব দেন, যদি তিনি তার রকেটে করে মুসলিমদের মঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে পারেন, তা হলে তাকে তার সরকারের পরিবহন মন্ত্রীর পদ দেবেন। ট্রাম্পের মতে, এতে যেমন মুসলিমদের উপকার হবে, তেমনই বিশ্বে শান্তির আবহ ফিরে আসবে।

ট্রাম্প আরো বলেছিলেন, পৃথিবীতে শান্তি আনতে এবং আমেরিকাকে ধর্ষক মুক্ত করতে এর থেকে ভাল এবং কার্যকরী উপায় হতে পারে না। তবে এখানেই থেমে থাকেননি সদ্য মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট । তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস করুন মুসলিমদের আমি ভালবাসি। আর সে কারণেই আমেরিকায় তাদের অনুপস্থিতি আমার হূদয়কে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে।’

এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছেন, ‘আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্প একজন মুসলিম-বিরোধী আইকন।’ উল্লেখ্য গত বছর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘পুরো আমেরিকায় মুসলিমদের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’

”মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা” , ভোট যুদ্ধের আগে এটাই ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নীতি’। ২৪ ঘন্টাও হয়নি নির্বাচনে জয় লাভ করার, আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তাতেই পালটে ফেললেন নিজের ভোল।

ভোটের আগে বিশ্ব সন্ত্রাসের জন্য সরাসরি মুসলিমদেরই দায়ী করেছিলেন ট্রাম্প। এমনকি আমেরিকাকে ‘মুসলিম ফ্রি’ করার ডাকও শোনা যায় তার মুখে। গতবছরের ৭ ডিসেম্বরে নিজের বক্তব্যে ও ওয়েবসাইটে মুসলিমদের ব্যান করার ঘোসনা দিয়ে তুমুল আলোচনার মুখে পড়েন তিনি। নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন ভোটে জেতার বেশ কয়েকটি কারনের মধ্যেও এটিও একটি কারন ছিলো !

তবে বরাবরের মত সবাইকে ‘তাক’ লাগিয়ে এ দফাতেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ের পর হাঁটলেন ‘উল্টোপথেই’ !

ট্রাম্পের নির্বাচনী ওয়েবসাইট থেকে ইতমধ্যে তুলে দেয়া হয়ছে , ‘মুসলিমদের ব্যান’ করা প্রসঙ্গটি ।

সংবাদ মাধ্যম টেলিগ্রাফ ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট নয়া প্রেসিডেন্টের এই আচরনকে ‘ আশ্চর্যজনক ‘ উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছেন।

অনেকেই বিষয়টিকে পজিটিভ দেখলেও নিন্দুকেরা বলছেন, ” ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ভোট জেতার পরই হুট করেই কী সহৃদয় হলেন ট্রাম্প? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কুট্নৈতিক পাড়া আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। ক্ষমতায় আসলে ‘আমেরিকাতে মুসলিমদের ব্যান’ করে দেবেন, এই নীতি থেকে সরে কী তবে সাম্যতার পথেই হাঁটতে চলেছেন আমেরিকার নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? সবাই অবশ্য বলছেন, এই উত্তর দিতে পারে একমাত্র সময়ই।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভিডিও নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে আলোচনার ঝড় । যার মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি তার ভালোবাসার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। খবর ডন নিউজ উর্দুর।

তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে, নেটি দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও কবে রেকর্ড হয়েছে বা কোন অনুষ্টানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কথা বলেছেন তা বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এ ভিডিও নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।

প্রসঙ্গত, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য তিনি করেননি এমন কিছু হয়তো নেই। হোক সেটা প্রশ্নবিদ্ধ করা কোন উক্তি বা কাউকে আঘাত করে বলা কোন কথা। যেমন তার খুব কুখ্যাত একটা উক্তি হলো “I will build a wall” যেটি তিনি করেছিলেন মেক্সিকান ইমিগ্র্যান্টদের ঠেকানোর জন্য। তার এই উক্তি সারা বিশ্বে নিন্দিত হয়েছে পুরো একটা জাতিতে চপোটাঘাত করার জন্য এভাবে। নিজের অঢেল ধন-সম্পদের বড়াই তিনি করে বেড়ান পত্র-পত্রিকায়, মিডিয়া ইন্টারভিউতে। প্রচন্ড অহংকারী হিসেবে পরিচিত ও আখ্যা পাওয়া এই মানুষটি নারীদের সম্মানে এবং অধিকারে আঘাত করে এ পর্যন্ত বহুবার মন্তব্য করেছেন। এমনকি নানা দেশে তুমুল প্রতিবাদের ঝড়ও উঠেছে এ নিয়ে ।