মুস্তাফিজকে বুঝে ব্যবহার করতে হবে || রবি শাস্ত্রী
খুব বড়সড় চেহারার মালিক নয় মুস্তাফিজুর রহমান। প্রচণ্ড গতি আছে বোলিংয়ে এমনও না। ওই এক মাত্র বোলার নয়, যে ক্রিকেট বলকে সুইং করাতে পেরেছে। এখন তো সবাই কাটার করতে পারে। তার ওপর মাঝেমধ্যেই ছেলেটা হাসে। ফাস্ট বোলারদের ক্ষেত্রে যেটা সচরাচর দেখা যায় না। তাহলে কেন বিশেষজ্ঞরা মুস্তাফিজুরকে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে এখন বিশ্বের সেরা তরুণ ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছে?
পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে এ ছেলে বিস্ময়প্রতিভা। ভাবুন ভারতের বিপক্ষে একটা ওয়ান ডে সিরিজে দুটি পাঁচ উইকেট নেওয়া পারফরম্যান্স দিয়ে শুরু। বা আমলা, দুমিনি আর ডি’কককে আউট করে টেস্ট অভিষেক। অথবা চলতি আইপিএলে ওকে দেখেই ব্যাটসম্যানরা যে রকম গলে যাচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যেই মুস্তাফিজুর এমন একটা সমীহ আদায় করে নিয়েছে, যেটা অনেক পেশাদার বোলারের তৈরি করতে সারা জীবন লেগে যায়। মনে হচ্ছে যেন গতকালই ছেলেটা বাংলাদেশে ওর গ্রামের পুকুরের পাশে বসে ছিল।
ইতিহাস বলছে, বিশ্বের সেরা বোলাররা কিন্তু খুব কৃপণও। কুম্বলে, ওয়ার্ন, মুরলি, ম্যাকগ্রা তাঁদের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ওভার পিছু গড়ে রান দিয়েছে খুব বেশি হলে দুই। তাঁরা সফল হয়েছে তাঁদের কাজটা নিপুণভাবে করে দেখানোর জন্য। এঁরা শিকারের সঙ্গে খেলতে ভালোবাসত, তারপর আচমকা এমন একটা কড়া ঘুষি কষাত, যেটা গোটা একটা ব্যাটিং প্রজন্ম সামলানোর উপায় খুঁজে পায়নি। সেই সোনার ডেলিভারি যেটা কখনো এঁদের হতাশ করেনি। অমোঘ আঘাতে শিকার শেষ।
মুস্তাফিজুরের ভাণ্ডারেও তেমন একটা বিরল ডেলিভারি আছে। এমনিতে ওর অস্ত্র দুরন্ত সুইং, ধারালো কাটার, আর এমন একটা ইয়র্কার, যেটা ব্যাট থামাবে সাধ্য কী! তবে মুস্তাফিজুরের শোকেসের ব্রহ্মাস্ত্র হলো সেই ডেলিভারিটা, যেটা পিচে পড়ে থমকে গিয়ে ব্যাটসম্যানের সামনে লাফিয়ে ওঠে। আর বেশির ভাগ সময়ই ব্যাটসম্যান সেটা কভারের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফেরে।
এই বলটা করার সময় ওর বোলিং অ্যাকশনে কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয় না। আসল খেলাটা থাকে ওর কব্জিতে। সবটাই বলটা ছাড়ার কায়দা।
আইপিএলেই আর এক তরুণ ক্রিকেটার ঋষভ পন্থ মুস্তাফিজুরের জারিজুরি কিন্তু ধরে ফেলেছিল। এক ডজন বলের মধ্যে বেশ কয়েকটা চার আর ওভার বাউন্ডারি খেতে হয়েছে মুস্তাফিজুরকে। বাংলাদেশে আলোচনা হচ্ছে, মুস্তাফিজুর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অন্তত বোলারের ঘনিষ্ঠমহলের তেমনই দাবি।
এদিকে মুস্তাফিজুরের অপেক্ষায় নববধূর মতো আকুল হয়ে বসে থাকা সাসেক্স এসব দেখে স্বাভাবিকভাবেই টেনশনে পড়েছে। বাংলাদেশের বিস্ময় বোলারের এবার এই কাউন্টির জন্যই খেলার কথা। একই অবস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও, যারা পারলে মুস্তাফিজুরের মতো রত্নকে তুলোয় মুড়ে রাখে।
কোথাও মনে হচ্ছে, মুস্তাফিজুরের আরো যত্ন নেওয়া জরুরি। এ রকম খাঁটি প্রতিভাকে লালন করার আরো লোক চাই। ছেলেটা কিন্তু এখনো শরীর আর মনের দিক থেকে কিশোরই, পুরুষ হয়ে ওঠা বাকি। শরীরটাও তাই পুরোপুরি শক্তপোক্ত হয়ে ওঠেনি। ওর মতো প্রতিভাকে কিন্তু খুব সাবধানে, বুঝেসুঝে ব্যবহার করতে হবে।
লেখাটি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় রোববার প্রকাশিত হয়। পাঠকদের জন্য লেখাটি আনন্দবাজারের সৌজন্যে প্রকাশ করা হলো।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন