মৃত্যুর আগে হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান সফিয়ার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি কুড়িগ্রামের মো. সফিয়ার রহমান। সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের মরাটারী গ্রামের মৃত সফর উদ্দিন সরকারের ছেলে সফিয়ারের বয়স এখন ৬৫ বছর। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে তার শেষ চাওয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেন তাকে স্বীকৃতি সনদ দেয়া হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ না পাওয়ার বিষয়ে সফিয়ার বলেন, যুদ্ধশেষে ফিরে এসে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন জীবন-জীবিকার যুদ্ধে। দুর্গম চরাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় খোঁজ রাখতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধার সনদ কিংবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি তার।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দিলেও দুর্গম এলাকায় বাড়ি বলে এবং অসুস্থতার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে পারেননি তিনি। গত বছর ৩০ জুন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন সফিয়ার রহমান। মন্ত্রণালয় আবেদনটি গ্রহণ করে, যার ডিজি নম্বর ২২২০৯। কিন্তু বছর পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি হতাশা হয়ে পড়েন।
সফিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি আজও। ঘোগাদহ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আব্দুল কাদের ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কমান্ডার মো. বাতেন তদন্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করেছেন তার নাম। তা নিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) দীর্ঘদিন ধরে ঘোরাঘুরি করেও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে সফিয়ার বলেন, যুদ্ধের শুরুর দিকে ভারতের ঝাউকুঠিতে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্পে’ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তার কাছে তৎকালীন এমএনএ সামছুল হুদা স্বাক্ষরিত ওই ক্যাম্পের প্রশিক্ষণের সনদ আছে। তিনি ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
রোববার দুপুরে কুড়িগ্রামে সাংবাদিকদের কাছে এসে মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিয়ার রহমান কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে বাবা-মাকে রেখে ভারতের অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে প্রায় অর্ধভুক্ত থেকে ঝাউকুঠি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিই। পরে সেখানে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিই। এরপর সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিই। এরপরও স্বীকৃতি মেলেনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের হস্তক্ষেপের আকুতি জানান সফিয়ার। এটিই এখন তার জীবনের শেষ চাওয়া। অসুস্থ ও বৃদ্ধ সফিয়ার রহমান মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।
বর্তমানে তিনি স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে অসচ্ছল জীবনযাপন করছেন তিনি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা পর্যায়ে পাঠালে তবেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে পারবে সংশ্লিষ্ট কমিটি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কুড়িগ্রামে তিন উপজেলার ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলার ও তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার তিনবিস্তারিত পড়ুন
কুড়িগ্রামে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার
কুড়িগ্রামে মটর মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বকসীরবিস্তারিত পড়ুন
স্কুলছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া, জামায়াত নেতাকে গণধোলাই
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে স্কুলছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া হাতেনাতে ধরা পড়ার পর একবিস্তারিত পড়ুন