মৃত শিশুকে লাইফ সাপোর্টে রেখে টাকা আদায়

সুচিকিৎসা দিতে না পারলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুমাইয়াকে সুচিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালেও নিতে দেয়নি। এমনকি মঙ্গলবার রাতে শিশুটি মারা গেলেও বুধবার দুপুর পর্যন্ত তা পরিবারের কাছে গোপন রেখে অর্থ আদায় করে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার দুপুরে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় রাজধানীর জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডিকেল সার্ভিসেস হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) পাওয়া যায় শিশু সুমাইয়ার মৃতদেহ। চিকিৎসার নামে মৃত শিশুর লাশ আইসিইউতে রেখে টাকা আদায় করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমন তথ্যই জানিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শিশুটির পরিবার জানায়, গত সোমবার ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট সমস্যায় জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডিকেল সার্ভিসেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শিশু সুমাইয়া সাবাকে। ১ বছর ৪ মাস বয়সী শিশুটিকে সুচিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়েও অন্য হাসপাতালে নিতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
শিশুটির পরিবার র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তা চাইলে বুধবার দুপুরে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মঙ্গলবার রাতেই শিশুটি মারা যায়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুমাইয়ার মৃত্যুর খবরটি পরিবারের কাছে গোপন রেখে ‘মিথ্যে চিকিৎসার’ নামে আইসিইউতে রেখে টাকা আদায় করে।
র্যাবের অভিযানে দেখা যায়, আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টের নামে অযথাই একটি রুমের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়েছে শিশুটির মৃতদেহ।
সুমাইয়ার মামা আহমেদ আওরঙ্গজেব সজীব বলেন, ‘গত সোমবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানকার ডাক্তার ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফোনে জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে যোগাযোগ করে আমাদেরকে সেখানে পাঠান। রাতে সুমাইয়াকে সেখানে ভর্তি করা হয়।’
ভর্তির পর থেকেই সুমাইয়ার চিকিৎসায় অবহেলা দেখা যাচ্ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে প্রথমে ডাক্তাররা ইমার্জেন্সির কথা বলে সুমাইয়াকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে বলে। আমরা বললাম, প্রয়োজনে ভালো ডাক্তারদের সাথে মিটিং করে সুমাইয়ার বেস্ট চিকিৎসাটা দেন। যত টাকা লাগে আমরা দেব। কিন্তু তারা উল্টো আমাদেরকে রাগারাগি করে বলেন ‘এত বেশি বুঝলে আপনারাই ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করেন।’
এরপর আমরা সুমাইয়াকে অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেন, আপনারা তাকে নিয়ে যাবেন, সে পর্যন্ত বাঁচবে কি না। তারা এমনভাবে বলেছেন যে আমরা সুমাইয়াকে নিয়ে যেতে পারছি না, রাখতেও পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুমাইয়াকে ছাড়লও না, ট্রিটমেন্টও দিলো না।
ভুল চিকিৎসা ও ভুল ট্রিটমেন্টের জন্যই সুমাইয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আহমেদ আওরঙ্গজেব।
তিনি আরও বলেন, ‘আজ র্যাবের মোবাইল কোর্ট আসলে আমরা তাদেরকে সব কথা খুলে বলি। তারপর র্যাব সেখানে গিয়ে দেখে রোগী গতকাল মঙ্গলবারই মারা গেছে। কিন্তু আজ দুপুরেও তারা আমাদেরকে জানায়, রোগীর অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ। তারা আমাদেরকে মারা যাওয়ার কথাটাও বলল না। র্যাব না আসলে হয়তো আজও আমাদেরকে মৃত্যুর খবরটি জানানো হতো না।’
র্যাব আসার আগে তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘র্যাব সদস্যদের সাথে ভেতরে গিয়ে দেখি লাইফ সাপোর্টের নামে অযথাই একটি রুমের মধ্যে আমার ভাগ্নিকে রেখে দিয়েছে পাষণ্ড চিকিৎসকরা।’
আপনারা হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল জানতে পারলে হয়তো একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেত। গতকাল মারা যাওয়ায় মৃতদেহের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তার ওপর মামলা করলে ময়নাতদন্ত করতে হতো। আমরা ভাগ্নির দেহ আর কাঁটাছেড়া করতে চাচ্ছি না। ওকে দাফন করার জন্য হাসপাতাল থেকে সরাসরি বাড়িতে নিয়ে এসেছি।
শুধু মৃত শিশুকে জীবিত বলে ভর্তি রেখে পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করাই নয়, রাজধানীর ঝিগাতলা এলাকার জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডিকেল সার্ভিসেস হাসপাতালটিতে আরও অনেক অনিয়ম পেয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযান শেষে হাসপাতালের ৬ জনকে আটক করে সাড়ে ১১ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. মো. শাহজাহান ও ড্রাগ অধিদপ্তরের ড্রাগ সুপার অজিউল্লাহর উপস্থিতিতে র্যাব-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
আটকেরা হলেন— মো. নজরুল ইসলাম (৩৯), ডা. শরিফুজ্জামান (২৯), মো. কাওসার (৫২), মোছা. লিজা (২৫), মনতেশ মন্ডল (৩৮), সমুন মন্ডল (২৮)।
ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ১ বছর ৪ মাসের শিশুটি হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যায়। কিন্তু শিশুটিকে জীবিত দেখিয়ে ভর্তি রেখে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিচ্ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’
তিনি জানান, ‘অভিযান পরিচালনার সময় দেখি বাচ্চাটি গত মঙ্গলবার ক্লিনিক্যালি ডেথ। তাদের ফাইলপত্রেও বাচ্চাটি মৃত উল্লেখ থাকলেও পরিবারকে জীবিত বলে জানানো হয়।’
র্যাব-২ এর অপারেশন্স অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইয়াছির আরাফাত জানান, হাসপাতালটির সেবা মূল্য তালিকা প্রদর্শিত না থাকা এবং রোগ পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছিল। এমনকি ১২ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি করছিল হাসপাতালটি। এ সকল কারণে জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মেডিকেল সার্ভিসেস হাসপাতালের ৬ জন চিকিৎসক-কর্মচারীকে আটক করা হয়। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে দোষ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মোট ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন

ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন

ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন