মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় মা
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোণ্ডা ইউনিয়নের আলুকান্দা গ্রামে নিহত মাহফুজা বেগমের মা সানোয়ারা বেগম মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করে নিজেই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আসামি পক্ষ প্রতিনিয়তই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা রকম হুমকি প্রদর্শন করে আসছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় তাঁর পরিবার বাড়ি থেকে বের হতেই সাহস পাচ্ছে না।
সরেজমিনে নিহত মাহফুজা বেগমের মা সানোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “আমার স্বামীর নাম শাহ মাদবর মোল্লা। তিনি ও তার বড় ভাই এ বাড়ির একমাত্র পুরুষ মানুষ। তাঁরা দুইজনই দীর্ঘদিন ধরে কুয়েত প্রবাসী। বাড়িতে শুধু আমরা দুই জা আর ছেলে-মেয়েরা বসবাস করি। আমার পাশের গ্রাম খুনেরচর এলাকায় বড় মেয়ে মাহফুজাকে দীর্ঘ ৯ বছর আগে মো. এলাহী মিয়ার ছেলে ইসলাম পারভেজ সেলিমের সঙ্গে বিয়ে দেই। বিয়ের পর থেকে মেয়ে জামাই সেলিমও কুয়েতে চলে যায়। মাঝে মধ্যে ছুটিতে বাড়ি আসে আবার চলে যায়। এরই মধ্যে তাদের সংসারে মারুফ হোসেন (৮) ও জান্নাত (আড়াই বছর) নামের দুটি সন্তান আসে। ঘটনার কয়েক বছর আগে থেকে মাহফুজার বড় জা কুলসুম বেগম আমার মেয়ের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করে। মেয়ের জামাই সেলিম দেশে ফিরে আসার কিছুদিন আগে কুলসুমকে ফোন করে কুয়েতে সেলিমকে জানায় তার বউয়ের সঙ্গে তার মেঝে ভাই আওলাদের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এ কথা শুনে সেলিম ঘটনার এক সপ্তাহ আগে দেশে ফিরে আসে। ”
সানোয়ারা বেগম বলেন, “গত ১৪ আগস্ট রাতে আমার মেয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ওই রাতেই আনুমানিক ৩টায় আমাকে তাদের বাড়ি থেকে সংবাদ দেয় মাহফুজার শরীর খারাপ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এ খবর পেয়ে আমি আমার বাড়ির ঘাটলায় দাঁড়িয়ে থাকি মেয়েকে নিয়ে আসলে দেখি আমার মেয়েকে ছুরি দিয়ে ভুড়ি বের করে দিয়েছে। চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি তাকে। এ ঘটনায় আমি কুলসুম ও সেলিমকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করি। মামলায় পুলিশ কুলসুমকে গ্রেপ্তার করলেও সেলিমকে পলাতক রেখে তার ভাইরা তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে, আমার মেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে দেড় মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে ছেড়ে দিলে আমার বাসায় নিয়ে আসি। এখানেও প্রায় দেড় মাস থাকার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে সেলিমের দুই ভাই একটি ক্লিনিকে নিয়ে ভুল চিকিৎসা দিয়ে ফের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসায় অবহেলায় ২৭ নভেম্বর রাতে আমার মেয়ে মারা যায়। এখন মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য খুনিরা দেশে ও বিদেশে আমাদের বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতার মুখে বসবাস করছি। ”
মাহফুজার শিশু সন্তান মারুফ হোসেন বলে, “ঘটনার দিন রাতে আমরা সবাই খাটে ঘুমিয়েছিলাম। অনেক রাইতে মায়ের কান্দন শুইনা ঘুম থেকে উইঠা দেখি আমার আব্বায় চাক্কু দিয়া মাকে মারতেছে। ” এ ব্যাপারে সেলিমের ভাই আওলাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “হত্যার ঘটনা স্বীকার করে বলে হুমকির বিষয়টি সত্য না। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মাহফুজা মারা যাওয়ার আগে সৌদি আরব থেকে আমার আরেক ভাইয়ের শ্বশুর কুয়েতে আমার তালইয়ের সঙ্গে ফোন করে কথাকাটাকাটি করেছে আর কিছু না। কোনো হুমকি দেওয়া হয় নাই। ”
এ ব্যাপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম (পিপিএম) বলেন, “এ মামায় দুইজন আসামির মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামি বিদেশ পালিয়ে যাওয়ায় গ্রেপ্তার করা সম্বব হয়নি। মামলাটি প্রথমে এক ধারায় হয়েছিল। মেয়েটি মারা যাওয়ার পর সেখানে হত্যার ধারা বসানো হবে। মামলাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে সঠিক আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। মূল আসামি বিদেশ থেকে আসামাত্র তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। বিদেশে গিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করা আমাদের কাজ না, রাষ্ট্রের। “
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন