মোহাম্মদ আলীর জানা-অজানা
কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চির বিদায় নিলেন সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ক্লে। তার স্মরণে ও সম্মানে পাঠকদের উদ্দেশে কিংবদন্তি এই মুষ্টিযোদ্ধার জীবনের জানা-অজানা কিছু দিক তুলে ধরা হলো।
বক্সিং জগতের কিংবদন্তি : মোহাম্মদ আলী। তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন আফ্রিকান। তিনি আমেরিকান। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী এই মানুষটি তীক্ষ্ম বুদ্ধি আর ক্ষিপ্রতায় ভর করে পৌঁছেছিলেন খ্যাতির শিখরে। তিনবারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজয়ী ক্যাসিয়াস মার্সেলেস ক্লে ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি আমেরিকার কেন্টাকি রাজ্যের লুয়াভিলে জন্মগ্রহণ করেন। পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম পাল্টে মোহাম্মদ আলী রাখেন।
তার পূর্বপুরুষরা মাদাগাস্কার থেকে দাস হিসেবে আমেরিকাতে এসেছিল। তার পিতা ক্লে সিনিয়র ছিলেন রঙ মিস্ত্রী এবং মা ওডিসা গ্রাডি ক্লে ছিলেন গৃহিনী। ১৯৯৯ সালে বিবিসি এবং স্পোর্টস ইলাসট্রেটেড আলীকে `স্পোর্টস ম্যান অব দি সেঞ্চুরি` বা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করে।
বক্সিংয়ে যোগদান : `দ্য গ্রেটেস্ট` নামে পরিচিত বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর বক্সিংয়ে আসাটা কিন্তু একেবারেই কাকতালীয়। অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ আলীর ছোট বেলায় একটি শখের সাইকেল ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন তার প্রাণপ্রিয় বাইসাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় বালক মোহাম্মদ আলী ভীষণ কষ্ট পান।
তিনি মার্টিন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে চোর পেটানোর ইচ্ছার কথা বলেন। মার্টিন নিজে ছিলেন বক্সিং কোচ। এই পুলিশ কর্মকর্তার উৎসাহে তার বক্সিং জগতে আসা। বক্সিংয়ে আলীর কিছু নিজস্ব বিশেষত্ব ছিল, যা পৃথিবীর অন্য কোনো বক্সারের মধ্যে দেখা যায় না। তিনি খেলার সময় কখনো নিজের হাত মুখের কাছে রাখতেন না। সবসময় হাত শরীরের পাশে রাখতেন। তিনি ঠিক প্রজাপতির মতো নেচে নেচে এবং মৌমাছির হুঁল ফোঁটানোর ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে আঘাত করতেন।
শিরোপার লড়াই : ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখে মোহাম্মদ আলী তার বক্সিং জীবনের প্রথম শিরোপা জেতেন। এরপর ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা ১৯টি শিরোপা জেতেন, যার মধ্যে ১৫টি ছিল নক আউট। এরপর ১৯৬৪ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি তৎকালীন সময়ের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন সনি লিস্টনের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ওই সময়ের মধ্যে মোহাম্মদ আলী অনেকগুলো শিরোপা জিতলেও সনি লিস্টনের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে জেতার কোনো সম্ভবনাই ছিল না। সুতরাং সবাই ধরে নিয়েছিল তিনি হেরে যাবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মোহাম্মদ আলী সনি লিস্টনকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেন।
বহিষ্কার এবং ফিরে আসা : ১৯৬৪ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর ১৯৬৬ তে আবার চেষ্টা করেন এবং এবার তিনি সফল হন। কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাকে ১৯৬৭ সালে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং তার সব খেতাব ও বক্সিং লাইসেন্স কেড়ে নিয়ে সব ধরনের বক্সিং থেকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৭০ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৪ বছর পর আবারো বক্সিং রিংয়ে ফিরে আসতে সমর্থ হন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আলী তার জীবনের শ্রেষ্ঠ লড়াইগুলোতে নামেন।
শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ লড়াই : ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে মোহাম্মদ আলী আরেক বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা জো ফ্রাজিয়ার বা স্মোকিং জো`র মুখোমুখি হন যা `দ্য ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ লড়াই হিসেবে পরিচিত। বহুল আলোচিত এ লড়াই ছিল দুই মহাবীরের লড়াই, যা নিয়ে সকলেই শিহরিত ছিলেন। ১৫ রাউন্ডের সেই হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে ফ্রাজিয়ার জয়লাভ করেন ও আলী প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ পান। অবশ্য ১৯৭৪ সালের ম্যাডিসন স্কোয়ারের ফিরতি লড়াইয়ে তিনি শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন।
রাম্বেল ইন দি জঙ্গল : তিনি ১৯৭৪ সালে ৩০ অক্টোবরে জায়ারের (বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো) কিনশাশায় জর্জ ফোরম্যানের সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন। ‘রাম্বেল ইন দি জঙ্গল’ নামে খ্যাত এ লড়াইয়ে আলীর একান্ত সমর্থকরাও তার জেতার কোনো সম্ভবনা দেখেননি। কিন্তু মোহাম্মদ আলী যে একজনই! ৮ রাউন্ডের এ অবিশ্বাস্য লড়াইয়ে তিনি ফোরম্যানকে পরাজিত করেন। আলীর ক্যারিয়ারের মহা গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটি বিশ্বের একশটি দেশের টেলিভিশনে দেখানো হয়।
ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে মোহাম্মদ আলী : ১৯৭৫ সাল। মোহাম্মদ আলীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর গুলোর একটি। এই বছরেই তিনি খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মোহাম্মদ আলী তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়া তার জন্য কতটা কঠিন ছিল। তিনি তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পেছনে নেশন অব ইসলামের প্রধান ডব্লিউ ডি মুহাম্মদের এর নাম উল্লেখ করেন। নেশন অব ইসলাম হচ্ছে আমেরিকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আমেরিকাতে আফ্রিকান-আমেরিকান মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে।
অবসর গ্রহণ : ১৯৮০ সালে মোহাম্মদ আলী তারই ছাত্র ল্যারি হোমসের সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন। এ লড়াইয়ে ১১ রাউন্ড পর তিনি পরাজিত হন। পরে জানা যায়, তার মস্তিষ্কে মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়েছে। ১৯৮১ সালে ৫৬টি জয় ৩৭টি নক আউট এবং ৫ পরাজয়ে মোড়ানো সোনালি ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। ১৯৮০ সালে ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যায় তিনি পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত। তাকে যখন বলা হতো, তিনি তার এ রোগের জন্য বক্সিংকে দায়ী করেন কি না, তখন উত্তরে তিনি প্রশ্নকারীকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলতেন, বক্সিংয়ে না এলে আজকের মোহাম্মদ আলীকে কে চিনত? অবসর গ্রহনের পর তিনি আমৃত্যু মানবতার কল্যাণে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে নীতিগত সিদ্ধান্ত
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীবিস্তারিত পড়ুন
অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬%
সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতি উভয়ইবিস্তারিত পড়ুন
গবেষণা: দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যেতে চান ৫৫% তরুণ
দেশের প্রায় ৪২% তরুণ বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে বেকারত্বেরবিস্তারিত পড়ুন