ম্যাচ রেফারি বলেছেন ধোনির ধাক্কা ইচ্ছাকৃত
গত বৃহস্পতিবার রাতে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন, দাবি করেছেন গতকালের ম্যাচ রেফারির শুনানিতেও। মহেন্দ্র সিং ধোনির বক্তব্য, মুস্তাফিজুর রহমানকে ধাক্কাটা তিনি ইচ্ছা করে মারেননি। শুনানিতে দোষ স্বীকার না করলেও এক দিনের ম্যাচে নিযুক্ত আইসিসির ম্যাচ রেফারি তাঁর মূল্যায়নে বলেছেন, ভিডিও দেখে স্পষ্ট মনে হয়েছে, ধোনির ধাক্কাটা ইচ্ছাকৃত। যেটা মেনে নেওয়া যায় না।
গতকাল শুনানির পর ম্যাচ রেফারি জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি পাইক্রফট ধোনি আর মুস্তাফিজ দুজনকেই শাস্তি দেন। ধোনি দোষ স্বীকার করুন আর না-ই করুন, পাইক্রফটের মনে হয়েছে, তাঁর অপরাধ ইচ্ছাকৃত। একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের কাছ থেকে যা অপ্রত্যাশিত। এ কারণে তাঁর শাস্তিটা বেশি। প্রথমে মুস্তাফিজও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন বলে জানানো হয়েছে আইসিসির বিবৃতিতে। পরে দোষ স্বীকার করে নেন গত ম্যাচেই অভিষিক্ত এই পেসার। তাঁর অনভিজ্ঞতা এবং দোষ স্বীকার করার বিবেচনায় শাস্তিটা কম দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুস্তাফিজ বলেছিলেন, ‘আমি ভুল পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।’
ম্যাচের পরই দুজনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন মাঠের দুই আম্পায়ার রড টাকার ও এনামুল হক। কাল সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ওই ম্যাচের সব অফিশিয়াল, দুই দলের ম্যানেজারসহ ধোনি ও মুস্তাফিজের উপস্থিতিতে এ ঘটনার শুনানি করেন ম্যাচ রেফারি পাইক্রফট।
আইসিসির বিবৃতিতে পাইক্রফট বলেছেন, “শুনানিতে ধোনি নিজের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, বোলার ভুল জায়গায় ছিল। তাঁর কাছে মনে হয়েছিল, ওই অবস্থায় ধাক্কাটা কিছুতেই এড়ানো যেত না। তখন তিনি হাত দিয়ে মুস্তাফিজকে সরিয়ে দিতে চেয়েছেন, যেন ধাক্কাটা যথাসম্ভব ‘কম লাগে’।’’
ঘটনার পর উঠে দাঁড়ালেন মুস্তাফিজুর, মুখে হাসি ধোনিরধোনির আরেকটি যুক্তি ছিল, ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা রায়নাকে জায়গা দিতে তাঁর পক্ষে ডান দিকে সরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কাল সংবাদ সম্মেলনে এমনও দাবি করেছেন, যথাসম্ভব দ্রুত রানটা নেওয়ার জন্যই তিনি ‘শর্ট কাট’ নিতে চেয়েছেন। কিন্তু ভিডিও দেখলে যে কেউ বুঝবে, ধোনি মিথ্যা যুক্তিতে নিজেকে বাঁচাচ্ছেন।
ভারতীয় অধিনায়কের যুক্তি পাইক্রফটের কাছেও ধোপে টেকেনি, ‘ধোনি যা-ই বলুন না কেন, আমার মূল্যায়ন হলো, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই ধাক্কাটা দিয়েছেন। মুস্তাফিজুরের কাঁধে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরেছেন, যেটা অসংগতিপূর্ণ। অন্য প্রান্ত থেকে দৌড় শুরু করা ব্যাটসম্যান আর বোলারের মাঝখানে জায়গাটা কমই ছিল। কিন্তু অভিজ্ঞ ধোনির উচিত ছিল ধাক্কাটা এড়ানোর চেষ্টা করা, কারণ ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে শরীরী সংযোগের সুযোগ নেই। খেলোয়াড়দের সব সময় শারীরিক সংযোগ এড়িয়ে চলাটাই প্রত্যাশিত। এ কারণে ধোনির ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ জরিমানা করেছি।’
দৃশ্যত ঘটনার মূল ‘অপরাধী’ হয়েও ধোনি দোষ স্বীকার করেননি। কিন্তু না বুঝে ব্যাটসম্যানের দৌড়ের পথে গিয়ে দাঁড়ানো মুস্তাফিজ দোষ স্বীকার করেছেন। এটিও উল্লেখ করেছেন পাইক্রফট, ‘মুস্তাফিজুরের ৫০ শতাংশ জরিমানা করেছি, কারণ সে স্বীকার করেছে এভাবে ব্যাটসম্যানের পথে তাঁর দাঁড়ানো ঠিক হয়নি। আর শারীরিক সংযোগ এড়াতে তাঁর আরও সচেষ্ট হওয়া উচিত ছিল।’
এদিকে ‘ক্যাপ্টেন কুল ধোনি পথরোধ করা বাংলা বোলারকে সজোরে ধাক্কা মারলেন’ শিরোনামে গতকাল আলাদা একটি প্রতিবেদনই করেছে ভারতের বৃহৎ ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায়। তাতে বলা হয়েছে, ‘ধোনি হয়তো বলতে পারেন, মুস্তাফিজ ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, তাঁর পথরোধ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গেছে, ধোনি সরে যাওয়ার চেষ্টা তো করেনইনি, উল্টো কাঁধ দিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরেছেন।’
ধোনির দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বরং বরাবরই তিনি ক্রিকেটীয় চেতনার কারণে আলাদাভাবে প্রশংসিতই হয়েছেন। সেটিও উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির যে অবস্থান, সেটি বিবেচনায় নিলে এটা অবশ্যই খুবই অখেলোয়াড়োচিত একটি আচরণ। যে অভিযোগে ভারত অধিনায়ক তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আগে কখনো অভিযুক্ত হননি।’
গতকালের কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার-এর ম্যাচ প্রতিবেদনে রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনাটি উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ভারত অধিনায়ক এদিন যা করলেন, তা তাঁকে সাধারণত করতে দেখা যায় না। মুস্তাফিজুরকে ভারত অধিনায়ক ধাক্কা মেরে বসলেন…রান নিতে যাওয়ার সময় ধোনির কাঁধ মুস্তাফিজুরকে এমনভাবে গুঁতিয়ে দিল যে, উনিশের পেসারকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হলো সঙ্গে সঙ্গে। প্রত্যুত্তরটাও পেলেন ভারত অধিনায়ক। মুস্তাফিজুর ফিরে এসে ভারতকেই ম্যাচ থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দিলেন।’
গত বৃহস্পতিবারের ম্যাচে শুধু ভারত হারেনি। হেরেছেন ধোনি। হেরে গেছে তাঁর ভাবমূর্তি। এদিন খেলায় শুধু বাংলাদেশ জেতেনি, জিতেছে সাতক্ষীরার এক অখ্যাত তরুণ। কোথায় ধোনি আর কোথায় মুস্তাফিজ? এ প্রশ্নের উত্তর হলো: ধোনি এমন কাণ্ডের পরও মাঠের আম্পায়ারকে নালিশ করতে গিয়েছিলেন। আর প্রচারের আলোয় অনভ্যস্ত সহজ-সরল মুস্তাফিজকে যেতে হয়েছিল ড্রেসিংরুমে। কিন্তু ১২ ওভার পর বোলিং প্রান্তে ফিরে, ৫ বলে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ধোনিকে যেন মনে করিয়ে দিলেন, লড়াইটা ব্যাট আর বলের। শরীরের ধাক্কাধাক্কির নয়!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন