‘যদি আটকায় রাখি, তোর বাপরা ঠিকই টাকা দিয়ে নিয়ে যাবে’
নিরাপত্তার জন্য রাতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আছে চেকপোস্ট। কিন্তু এগুলোতে দায়িত্ব পালনকারী অনেক পুলিশ সদস্যের হাতেই হয়রানির শিকার হয় মানুষ। চলে চাঁদাবাজি। তবে কোথাও কোথাও ভালো নজিরও রয়েছে।রবিবার রাত সোয়া ২টা। এফডিসি সংলগ্ন হাতিরঝিল মোড়। চারদিক থেকেই অসংখ্য মালবাহী ট্রাক আসছে। ঢুকছে কারওয়ান বাজারে। ব্যস্ত অন্য যানবাহনগুলোও। বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে রাস্তা ক্রস করছে। সাতরাস্তা থেকে আসার পথে হাতিরঝিল মোড় সংলগ্ন ফ্লাইওভারের একটি পিলারের সামনে মোটরসাইকেলে ওতপেতে বসে থাকতে দেখা যায় হলুদ গাউন পরিহিত এক পুলিশ সার্জেন্টকে। তার পাশেই দাঁড়িয়ে এক কনস্টেবল। কয়েক মিনিট পরপর মালবাহী ট্রাকের সামনে গিয়ে আড়াআড়িভাবে মোটরসাইকেল দাঁড় করাচ্ছেন ওই পুলিশ সার্জেন্ট। এরপর সেখানে এগিয়ে যান পুলিশ কনস্টেবল। মধ্যরাতে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চান না। গাড়ির চালকের কাছে গিয়ে সরাসরি দাবি করেন টাকা। পাঁচশ থেকে দরকষাকষি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন ৫০ থেকে ১০০ টাকা। অবশ্য কারও কারও কাছ থেকে বেশিও আদায় করছেন। কারওয়ান বাজারে প্রবেশকালে কয়েকটি মালবাহী ট্রাকের একাধিক চালকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দরকষাকষি করে তারা ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দেন। মধ্যরাতে ট্রাফিক ধরলেই ওই মোড়ে টাকা দিতে হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। মুরগি বহনকারী পিকআপসহ ছোট ছোট যানবাহন থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। অনেকটা প্রকাশ্যেই ওই সার্জেন্ট ও পুলিশ সদস্যকে এভাবে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা নির্মাণ শ্রমিক, চা ও সিগারেট বিক্রেতাদের এ নিয়ে হাসাহাসি করতেও দেখা যায়। এক চা বিক্রেতার বক্তব্য- শিয়াল যেভাবে মুরগি শিকার করতে ওতপেতে থাকে, ঠিক তেমনই ট্রাফিক পুলিশও গাড়ি শিকার করে। একবার যে গাড়ি ধরা হয়, টাকা না দিয়ে তার ছাড় নেই। এটা প্রতিনিয়তই হচ্ছে। কিন্তু কেউ দেখার নেই। কারওয়ান বাজারগামী এক ট্রাকচালক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেক চাপাচাপিতে ১০০ টাকা দিয়ে রেহাই পেয়েছি। এ জন্য অনেক কথা খরচ করতে হয়েছে।’
আরেক ট্রাকচালক বলেন, ‘রাতে ট্রাফিক পুলিশরা গায়ে নেমপ্লেটও ব্যবহার করেন না। শীতে জ্যাকেট পরে থাকেন। তাই নাম-পরিচয় জানাও কঠিন।’ মধ্যরাতে ওই মোড়ে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা অবস্থান করে আরও দেখা গেছে, কোনো কোনো ট্রাকে চড়ে বসেন ওই পুলিশ সদস্য। কিছু সামনে গিয়ে নেমে আবার চলে আসতেও দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ট্রাকে চালকের পাশের আসনে বসেই টাকা হাতিয়ে নেন পুলিশ সদস্য। এরপর সামনে নেমে যান। পরে আবার মোড়ে চলে আসেন।
তবে দায়িত্বপালনরত তিনজন সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে সোয়া ৩টার দিকে ওই সার্জেন্ট কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে হাতিরঝিলের ভিতরের দিকে চলে যান। সেখানে কর্মরত একাধিক নির্মাণ শ্রমিক জানান, রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত এই মোড়ে প্রকাশ্যেই চাঁদাবাজি করেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। টাকা না দিলে চালককে মারধর করে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেয়। অনেক সময় রেকার দিয়ে গাড়ি পার্শ্ববর্তী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নানা হয়রানির বিষয়টি মাথায় রেখে কিছু টাকা দিয়েই রেহাই নেন চালকরা।
এক সিগারেট বিক্রেতা জানান, হাতিরঝিলের এই মোড়ে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলে ট্রাফিক পুলিশ। প্রকাশ্যে সবার সামনেই এ ঘটনা ঘটে। সবাই দেখে। অনেক দিন থেকেই চলে আসছে এই কাজ। কিন্তু এটা বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই। রাত সোয়া ১২টা। ৩০০ ফুটে পুলিশ চেকপোস্ট। ঢাকা-নরসিংদী রোডের দুই পাশেই দেখা যায় চেকপোস্ট। কিন্তু চেকপোস্টে কুড়িলের পর কোনো পুলিশ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। দুই দিক থেকেই বেপরোয়াভাবে চলছে গাড়ি। নরসিংদী থেকে উল্টো পথেও গাড়ি আসছে। দেখার কেউ নেই।
পরে দেখা গেল, দরজা-জানালা বন্ধ করে পুলিশ বক্সে একজন এএসআই বসে ঝিমুচ্ছেন। বিপরীতে আরও চারজন পুলিশ সদস্য চুপচাপ বসে আছেন। কিন্তু উল্টো পথে গাড়ি যাচ্ছে, বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে সাঁ সাঁ করে মালবাহী ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য যানবাহন ঢাকায় ঢুকছে বা বেরিয়ে যাচ্ছে তাতেও পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয় ভূমিকায়। রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত এই চিত্র দেখা যায় ওই চৌকিতে। এরপর কুড়িল বিশ্বরোড, নর্দা, নতুনবাজার মোড়, বাড্ডা লিংকরোড হয়ে হাতিরঝিল যাওয়ার পথে শুধু গুলশান-১ মোড়ের আগে ও শুটিং ক্লাবের সামনে চেকপোস্টে পুলিশকে সতর্কভাবে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সন্দেহভাজন গাড়ি চেক করে দ্রুত ছেড়েও দিতে দেখা যায় ওই দুই চেকপোস্টে। তবে ঢাকায় প্রবেশ করা বেশ কয়েকটি ট্রাকে বিপুল সংখ্যক ভেড়া লক্ষ্য করা যায়। আবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরু-মহিষ বোঝাই ট্রাক রাজধানীর দিকে যেতে দেখা যায়।
রাত পৌনে ২টা। হাতিরঝিলের মধুবাগ চেকপোস্ট। সেখানে চেকপোস্ট থাকলেও দেখা যায়নি কোনো পুলিশ। সুনসান নীরবতা। রামপুরা কিংবা গুলশান থেকে আসা প্রাইভেটকারগুলো বেপরোয়াভাবে মগবাজার ও মধুবাগের দিকে ঢুকছে। অরক্ষিত চেকপোস্ট। অবশ্য রাত পৌনে ৪টার দিকে ওই চেকপোস্টে না দেখা গেলেও মধুবাগের ভিতরে একটি গলিতে পিকআপে কয়েকজন পুলিশকে জবুথবু হয়ে ঝিমুতে দেখা গেছে।
অরক্ষিত হাতিরঝিল : মধ্যরাতে হাতিরঝিলের চারপাশের একাধিক সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় অরক্ষিত অবস্থা হাতিরঝিল। এফডিসি মোড় হয়ে হাতিরঝিলে প্রবেশমুখে একটি পুলিশ চেকপোস্টে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেলেও অন্য চেকপোস্টগুলোতে কোনো পুলিশ দেখা যায়নি। হাতিরঝিলের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে আপত্তিকর অবস্থায় কিছু যুবক-যুবতীকে দেখা গেছে। আবার বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যেতে দেখা যায় কিছু তরুণকে। হাতিরঝিলের ভিতর রামপুরা থেকে মগবাজারগামী হেঁটে যাওয়া আবদুর রহীম নামে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি জানান, হাতিরঝিলে রাতে চলাচলে তিনি ভয় পান। যে কোনো সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার শঙ্কা থাকে। উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীদেরও আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়।
‘তোরে আটকায়া রাখলে কি করবি’
রাত ১টা ২২ মিনিট। জাতীয় সংসদ ভবনের উল্টোদিকে এমপি হোস্টেলের ঠিক সামনে পুলিশের চেকপোস্ট। ফার্মগেটের দিক থেকে মানিক মিয়া এভিনিউতে আসা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের লোগো সংবলিত একটি পিকআপের গতি রোধ করে পুলিশ। নেমপ্লেটবিহীন পুলিশের এক এএসআই ও অন্য এক কনস্টেবল একসঙ্গে জানালা দিয়ে ড্রাইভার মাঈদুলকে বলে, ‘কাগজ দেখা’। ড্রাইভারের সহকারী কাগজ বাড়িয়ে দিল। সব ঠিক। পুলিশের বক্তব্য, ‘গাড়ির এগুলো তো চুরির মাল।’ পরে মালামাল পরিবহনের কাগজও দেখায় ড্রাইভার। যেন অখুশি হলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য। বললেন, ‘হাদিয়া দে’। ড্রাইভারের প্রতিউত্তর, ‘কিসের হাদিয়া’। শুনেই ক্ষিপ্ত পুলিশ সদস্য বলেন, ‘এই কুত্তার বাচ্চা, তোকে যদি এখন আটকায় রাখি কি করতে পারবি? তখন তো তোর বাপরা আইসা ঠিকই টাকা দিয়ে নিয়ে যাবে।’ রবিবার রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত এ প্রতিবেদক এমন চিত্রই দেখেন। পরে অবশ্য মাঈদুলের গাড়ির সঙ্গে পুলিশের কথাবার্তার মধ্যে সেখানে উপস্থিত হওয়া কাজী ফার্মসের একটি মালবাহী পিকআপকে সিগন্যাল দেওয়া হলে সেটি প্রথমে সেøা করে, কিন্তু পরক্ষণেই দ্রুত চলে যায়। এরপর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে গিয়ে চালকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। চালক জানান, ‘চাকরি করি। টাকা দিতে হলে সেটা পকেট থেকেই যায়। আর দাঁড়ালেই টাকা দিতে হয়। তাই একটু চালাকি করা।’ এই চেকপোস্টে পরে টানা ২০ মিনিট অপেক্ষা করে এক ডজন মালবাহী টাক, পিকআপ ও ভ্যান আটকে টাকা নিতে দেখা গেছে।
রাত ২টা ১৩ মিনিট। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে উত্তর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় প্রধান ফটকের পাশে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো ন-৬১৬৭ নম্বরের মালবাহী ট্রাকে রেকারের শিকল লাগিয়েছে পুলিশ। তখনই ‘ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে’ এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছিল চালক মো. শাপু ও তার দুই সহকারীকে। সাদা পোশাকের এক পুলিশ ও পোশাক পরিহিত কনস্টেবল শাপুদের বলেন, ‘তোরা অনেকক্ষণ ধরে এখানে আছিস। কোনো মামলার কারবার নাই, তোদের গাড়ি ডাম্পিংয়ে যাবে।’ এ সময় শাপু ও অন্যরা পুলিশের দুই সদস্যকে ট্রাক থেকে রেকার খোলার অনুরোধ জানাতে থাকেন। পরে চালক শাপুকে পুলিশ সদস্য নিয়ে যায় ওভারব্রিজের নিচের অন্ধকারে। দাবি করে দুই হাজার টাকা। বলা হয়, ‘মামলা হলে তিন হাজার যাবে, দুই হাজার দিয়ে চলে যা।’ পরে ট্রাক মালিককে ফোন করেন ড্রাইভার শাপু। মোবাইল ফোনে কথা হয় সাদা পোশাকের এএসআইয়ের সঙ্গে। শাপু নিজের কাছে ৫০০ টাকা থাকার কথা জানায়। সেটাতেই রফা হয়। খুলে দেওয়া হয় রেকারের শিকল। রাস্তার উল্টো ধারে ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সামনে থেকে ঘটনাবলী দেখার পর রেকার খোলা হতেই চালক শাপু এসব কথা জানান। এ অবস্থায় সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত গতিতে রেকারটি ঢুকিয়ে ফেলা হয় সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের ভিতর। লাপাত্তা হয়ে যায় দুই পুলিশ।
চালক শাপু বলেন, ‘হঠাৎ ট্রাক নষ্ট হয়েছে। গিয়ার ছুটে গেছে। দুই মিনিটের মধ্যে রেকার লাগিয়ে দিল। নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেকার লাগানোর কথা না। কিন্তু তারা পুলিশ, কিছুই করার নাই। টাকা না দিলে ছাড়বেই না, তাই যত দ্রুত শেষ করা যায় সেটাই ভালো। এমন করেই চলতেছে।’
ট্রাকচালক শাপু বলেন, ‘টকশোতে পুলিশের ঘুষ খাওয়া নিয়া অনেক কথা বলেন। রাতে পুলিশ যে আমাগো ওপর এমন অত্যাচার করে, এ বিষয়েও পত্রিকায় লেখেন।’ এর আগে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড পেরিয়ে তিন রাস্তার মোড়ে দেখা যায়, লাঠি হাতে মালিক-শ্রমিক সমিতির নাম ব্যবহার করে একজনকে বাস ও ট্রাক থেকে টাকা নিতে। নিজের নাম ফারুক দাবি করে তিনি বলেন, ‘দেখলেন টাকা আমরা নিচ্ছি, কিন্তু চেকপোস্টে যে বেলায় বেলায় দিতে হয়, তা তো দেখেন না।’
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মাইক্রোবাস চালক আলম বলেন, ‘আসার সময় কেরানীগঞ্জ ব্রিজের গোড়ায় আধাঘণ্টা আটকে রেখে ২০০ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার উত্তরায় পুলিশ নিয়েছে ১০০ টাকা।’ আলমের ভাষায়, ‘৫০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয় রাস্তায় থাকা পুলিশ। তাদেরও তো অনেক শ্রম দিতে হচ্ছে, তাই না! এত কষ্ট না দিয়ে তাদের মাসে এক বস্তা করে টাকা দিয়ে দেওয়া উচিত সরকারের। তাতে হয়তো আমাদের কাছ থেকে তাদের ঘুষ নেওয়ার পরিমাণ কমবে।’ আলমের এসব কথা চলার সময় বাণিজ্য মেলার দিক থেকে আসা প্রাইভেট সিএনজির চালক শাকিলকে আটকে মাত্র ৫০ টাকা নিতে দেখা যায় ট্রাফিক কনস্টেবলকে। চোখে চোখ পড়তেই তিনি বলেন, ‘কি করব কন, রাতে চা-নাশতা তো লাগে।’
যেদিকে যান দিতে হবে টাকা
ধোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ড। রাত পৌনে ১২টা। ওই স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের শেষ মাথায় রাস্তার দুই পাশে পুলিশ দাঁড়ানো। যাত্রাবাড়ী থেকে একটি ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে দুই-তিনজন পুলিশ সামনে গিয়ে দাঁড়ান। ড্রাইভারকে নির্দেশ দিচ্ছেন গাড়ি সাইট করতে। ড্রাইভার বলছেন, কেন সাইট করতে হবে কেন? পুলিশ উত্তরে বলল, মাল ছাড় চলে যা। ড্রাইভার তার হাত বাড়িয়ে কিছু একটা দিল। পুলিশ সামনে থেকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আরেকটি ট্রাক এল। একইভাবে পুলিশ গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে সাইট করার নির্দেশ দিল। পুলিশ কাগজ দেখতে চাইলে ড্রাইভারের সহকর্মী নিচে নেমে আসেন। এসে কাগজপত্র দেন। পুলিশ কাগজ হাতে নিয়ে কিছুই না দেখে আবার ফেরত দেন। তবে কাগজের সঙ্গে কিছু একটা তার হাতেই রয়ে যায়। ট্রাকটি চলে যায়। রাত সোয়া ১২টা। ধলপুর-সায়েদাবাদ সড়কের মুখে পুলিশ চেকপোস্ট। সোয়া ১২টার দিকে দেখা গেল যাত্রাবাড়ী থেকে যে ট্রাক আসছে পুলিশ হাত ইশারা দিয়ে থামাচ্ছেন। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা গেল তিনটি ট্রাক থামানো হয়েছে। সবগুলোর কাগজ দেখে ছেড়ে দিচ্ছে। পরবর্তীতে আরেকটি ট্রাক এল। ট্রাকটিতে কী আছে জানতে চাইল পুলিশ। ট্রাকের ড্রাইভার বলল যাত্রাবাড়ী থেকে কথা বলে এসেছি। পুলিশ কোনো কথা না বলে ছেড়ে দিল। রাত পৌনে একটার দিকে মানিকনগর মূল সড়কে গিয়ে দেখা গেল পুলিশের জটলা। জটলা দেখে সেখানে দেখা গেল দুই যুবককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এক পুলিশ সদস্য কাছে এসে জানতে চাইল আপনি কে এখানে কেন? সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি অন্য পুলিশ সদস্যদের বললেন, ওদের ছেড়ে দিন। দুই যুবকের কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম কেন পুলিশ ধরেছে। সে বলল হেঁটে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আটকাল। আধা ঘণ্টা আমাদের আটক রেখেছে। আমার হাতে একটি টাইগারের বোতল ছিল। সেটা নিয়ে পুলিশ বলল, তুই নেশা করিস। আমি বললাম দেখেন বোতলে শুধু টাইগার আছে। পুলিশ তখন স্বীকার করল হ্যাঁ টাইগারই পাওয়া গেছে। তবে আধা ঘণ্টার বেশি কেন আটকানো হলো। তখন পুলিশ বলল ওদের অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। তখন যুবক দুজনকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বললে ওরা চলে যায়। রাত ২টায় একই স্থানে দেখা যায় ওই পুলিশ সদস্যরা একটি সিএনজি ও একটি প্রাইভেট কার থামিয়ে তল্লাশি করছে। পাশে দাঁড়ানো তিন যুবক। তাদের দেখে মোটরসাইকেল থেকে নামালেই পুলিশ আর তল্লাশি না করে বলল চলে যান। রাত আড়াইটা যাত্রাবাড়ী মোড়। তুরাগ পরিবহনের একটি মিনিবাসের ড্রাইভারের সঙ্গে তিনজন পুলিশ কথা বলছেন। কাছে গিয়ে জানা গেল, বাসের নিচ থেকে একটি সিগারেট প্যাকেট পুলিশ উঠিয়ে তার ভিতর গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করে। ড্রাইভার বলছে ওটা আমার নয় আমি জানি না। পুলিশ বলছে তুই গাঁজার ব্যবসা করিস। এখন তিন হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে। ড্রাইভার দুই হাজার দিতে রাজি হন। পুলিশ তাতে রাজি না হয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাকে গাড়িতে ওঠায়। ওখানেই দাঁড়িয়ে দেখা গেল একজন ট্রাফিক পুলিশ পিকআপ থামিয়ে ড্রাইভারের কলার ধরে গাড়ি থেকে টেনে নামাচ্ছেন। পরে জানা গেল ড্রাইভার গাড়ি সাইট করতে না চাওয়ায় জোর করে তাকে থামানো হয়েছে। পিকআপের ড্রাইভারকে নামিয়ে পুলিশ তাদের গাড়ির ভিতরে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ওই ড্রাইভারকে ছাড়া হয়নি।
ছিনতাই স্টাইলে তল্লাশি: পুলিশের পোশাক পরিধান করে সরকারি অস্ত্র উঁচিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দস্যুতা-সবই চালাচ্ছিলেন তারা প্রকাশ্যে, সবার সামনে। ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী প্রতিটি মিনিবাস আটক করে চালকদের চড় থাপ্পড় দিয়ে নিচে নামানো হয়, এরপর দাবি করা হয় গাড়িপ্রতি ৫০০ টাকা বখরা। যে চালক দাবি পূরণ করতে পেরেছেন তিনি ততক্ষণাৎ ছাড়া পেয়েছেন গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পেরেছেন গন্তব্যে। আর যে চালকের কাছে টাকা কম ছিল, তিনি হাঁকডাক দিয়ে যাত্রী তুলে আগাম ভাড়া নিয়ে দাবি পূরণে বাধ্য হয়েছেন। অবিশ্বাস্য এসব ঘটনা ঘটে রবিবার রাত ৩ টা ৯ মিনিটে। রাজধানীর উত্তর প্রবেশপথখ্যাত আব্দুল্লাহপুর পয়েন্টের পশ্চিম পাশে, সওজ অফিসের ঠিক সামনেই।
প্রত্যক্ষদর্শী টঙ্গীর এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে জানান, রাত সোয়া দুইটা থেকেই তিনি পুলিশের এ বেলেল্লাপনা দেখছেন। এ চিত্র তিনি জীবনে কল্পনাও করেননি। রাত ৩ টা ২৫ মিনিট। তুরাগ পুলিশ চেকপোস্ট। একজন পুলিশ টর্চ লাইট নিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি চলাচলে ইশারা দিচ্ছেন। ইশারার তালে তালে চাঁদাও তুলছেন। ঘুম-ঘুম চোখেও গাড়ির লাইট দেখলেই পুলিশের টর্চ লাইটও জ্বলে উঠছে চাঁদার জন্য। তবে আব্দুল্লাহপুর-তুরাগ-মিরপুর বেড়িবাঁধ রাস্তার চিত্র ছিল আরও ভয়ঙ্কর। ঘনকুয়াশা ভেদ করে বালু ভর্তি ট্রাক চলাচল করছে ওই রাস্তায়। কিন্তু হিমশীতল হাওয়াও যেন থামাতে পারছে না পুলিশের চাঁদাবাজি। ঘনকুয়াশার মধ্যেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই ট্রাক ড্রাইভারদের। চেকপোস্টে পুলিশের উপস্থিতি কম থাকলেও ছুটে গিয়ে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়ছেন তারা, বাড়িয়ে দিচ্ছেন চাঁদার হাত। রাত ২ টা ৪০ মিনিট। বেড়িবাঁধ রাস্তায় রুপনগর থানার আওতায় একটি চেকপোস্ট ও দুটি টহল টিমকে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত দেখা যায়।
ট্রাকচালকদের ভাষ্যমতে, আশুলিয়া-বেড়িবাঁধ রাস্তায় শত শত বালুভর্তি ট্রাকের চাঁদা তুলতেই যেন পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাস্তায় তিনটি পুলিশ চেকপোস্টের অভিন্ন দায়িত্ব পালনের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যে সব ট্রাকে বালু তোলা হচ্ছে তাদের থেকে চাঁদা আদায়ের কৌশল আবার ভিন্ন। ভুক্তভোগী ট্রাকচালক সেলিম বলেন, আমরা যেখানে বালু তুলি ওখানেই ‘পুলিশের পেমেন্ট’ নামে চাঁদার টাকা রেখে দেওয়া হয়। সুবিধা মতো সময়ে তা সংশ্লিষ্ট থানার অঘোষিত ক্যাশিয়ারের কাছে পৌঁছে দেয় সংশ্লিষ্ট লাইনম্যানরা। বেড়িবাঁধে ট্রাকপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা হাতিয়ে নেওয়ার এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। -বাংলাদেশ প্রতিদিন
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন