যমজ ফল খেলে কি যমজ সন্তান হয়? যেনে নিন
আমাদের দেশে অনেক নারী রয়েছেন যাঁরা যমজ কলা খান না। শুধু কলাই নয়, যেকোনো যমজ ফলই তাঁরা এড়িয়ে চলেন। আর এই এড়িয়ে যাওয়া বা না খাওয়ার প্রবণতা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। দাদি-নানিদের কথার সূত্র ধরে আজও অনেক আধুনিক তরুণী যমজ কলা কিংবা যমজ ফল খেতে দ্বিধাবোধ করেন।
যমজ ফল না খাওয়ার অন্যতম কারণ, তাঁদের ধারণা, যাঁরা যমজ ফল খান তাঁদের যমজ বাচ্চা হয়। গর্ভবতী মহিলা থেকে কুমারীরা বা কিশোরীরাও এই কথা জানে। যমজ ফলকে অনেকে এতই শক্তিশালী ভাবেন যে কেউ যদি জীবনে একবার যমজ ফল খেয়ে ফেলেন, তাহলে যমজ বাচ্চা তাঁর ক্ষেত্রে জন্ম দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।
তবে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে বলতে গেলে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, যমজ কলা কিংবা যমজ কোনো ফল খাওয়ার কারণে কারো যমজ সন্তান হয় না। জরায়ুতে যমজ সন্তান হওয়ার বিষয়টি নিতান্তই প্রকৃতির খেয়াল।
মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে একটি করে পরিপক্ব ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে তা জরায়ুর দিকে ধেয়ে যায়। ডিম্বাণুকে এই পথ চলার গতি দেয় ডিম্বাশয় ও জরায়ু-নালির সংকোচন প্রসারণ; যেভাবে পরিপাক নালিতে খাদ্যবস্তু চলাফেরা করে অনেকটা এই নিয়মে। এই ডিম্বাণু জরায়ুতে পৌঁছে অপেক্ষা করতে থাকে কাঙ্ক্ষিত শুক্রাণুর জন্য।
প্রায় ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ডিম্বাণু মারা যায়। এদিকে এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো পুরুষের সহযোগিতা পেলে ডিম্বাণুটি শুক্রাণু বেছে নেয়। প্রতিবার সহবাসের মাধ্যমে কম করে ২০ মিলিয়নের বেশি শুক্রাণু বেরিয়ে আসে। এত শুক্রাণুর ভেতর থেকে মাত্র একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর চারদিকের দেয়াল ভেদ করে ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়।
মিলিত হতে না পারলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব শুক্রাণু মরে যায়। এভাবে ডিম্বাণু –শুক্রাণুর মিলিত জাইগোট জরায়ুর দেয়াল গেঁথে গিয়ে সন্তানে পরিণত হওয়ার দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু করে। এ তো গেল একটি সন্তান জন্মানোর প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে যমজ সন্তান জন্ম হয় দুটি পদ্ধতিতে।
১. মনোজাইগোটিক টুইন বা যমজ : একই মাসে একই সঙ্গে দুটি ডিম্বাশয় থেকে দুটি ডিম্বাণু অথবা একই ডিম্বাশয় থেকে দুটি ডিম্বাণু নির্গত হয়। এবং প্রতিটি ডিম্বাণু একটি করে শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে যমজ সন্তান উৎপাদন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে দুটি ছেলে অথবা দুটি মেয়ে অথবা একটি ছেলে অথবা একটি মেয়ে হতে পারে। এদের গায়ের রং, চোখের রং, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হওয়ার পাশাপাশি রক্তের গ্রুপ একই অথবা ভিন্নতর হতে পারে। আর এ কারণেই এদের একে অপর থেকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।
২. ডাইজাইগোটিক টুইন বা যমজ : এ ক্ষেত্রে একই সাথে সঙ্গে ডিম্বাশয়ের যে কোনো একটি থেকে মাত্র একটি ডিম্বাণু নির্গত হয় এবং শুধু একটি এককোষ জাইগোট তৈরি হয়। পরে কোষসংখ্যা বৃদ্ধির জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে, দুটি যমজ সন্তান উৎপন্ন হয়ে থাকে। এভাবে দুই বা ততোধিক যমজ সন্তান হতে পারে। এদের গায়ের রং, চোখের রং, লিঙ্গ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এমনকি রক্তের গ্রুপও হুবহু একই হয়ে থাকে। এরা প্রয়োজনে একজন আরেকজনকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারে। এদের বাহ্যিক চেহারার সম্পূর্ণ মিল থাকায় অনেক সময় বাবা মা-ও শনাক্ত করতে পারেন না কে কোনজন। কাজেই যমজ সন্তান জন্ম নেওয়ার ব্যাপারে যমজ কলা কিংবা অন্য কোনো যমজ ফলের কোনো ভূমিকা কীভাবে থাকে? যমজ ফল যমজ সন্তানের জন্ম দেয়- এ রকম ধারণাকে সঠিক বলে মেনে নেওয়ার সপক্ষে একটিও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন