যা থাকছে পৌর নির্বাচনের আচরণবিধিতে
চলতি বছরের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর প্রথমবারের মতো এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে দলীয়ভাবে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। তাতে সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। নতুন আইন অনুযায়ী আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নতুন আইন অনুযায়ী বিধি ঠিক করে রোববার বিকেলে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইসি। ভেটিং শেষে আইন মন্ত্রনালয় মঙ্গলবারের মধ্যে ইসিতে পাঠাবে।
খসড়া আচরণবিধির ২২ ধারায় রয়েছে- সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নির্বাচনী প্রচারণা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ। (১) এ বলা হয়েছে- সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার,
মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র) এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, উপরোক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হইলে তিনি কেবল তাহার ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিধিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি আগের থেকে আরো সহজ করা হয়েছে। আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়ার বিধান ছিল। মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়া বিধান রাখা হচ্ছে। এর আগে সর্বোচ্চ ২০০ জন ভোটারের স্বাক্ষর নেওয়ার প্রস্তাব করেছিল ইসি। তবে ইতিপূর্বে কেউ মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার ক্ষেত্রে ভোটারদের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর লাগবে না। কাউন্সিলর পদ নির্দলীয় হওয়ার সেখানে আগের মতোই নির্বাচন হবে। কাউন্সিলরদের কোনো ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে না।
বিধি অনুযায়ী, পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না। শুধু দলীয়ভাবে মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে পৌরসভর নির্বাচনী বিধিমালায়। এতে দলের প্রাথমিক মনোনয়নে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন। তবে চূড়ান্তভাবে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বাকিদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। এ বিষয়ে প্রস্তাবিত বিধিমালার ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক দল নির্বাচনী এলাকার মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করলে, উক্ত রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত লিখিত পত্রের মাধ্যমে তিনি নিজে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বা তার পূর্বে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করবেন এবং সেই ক্ষেত্রে উক্ত দলের মেয়র পদে অন্যান্য মনোনীত প্রার্থী আর প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন না’। প্রস্তাবিত বিধিমালায় প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার পর কোনো অবস্থায় তা প্রত্যাহারের বা বাতিল করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত এই মর্মে প্রত্যয়ন থাকতে হবে যে, প্রার্থীকে ওই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক দল মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র প্রদান করতে পারবে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যযনির্বাহকের নাম, পদবী ও নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি তফসিল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবে এবং তার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও দাখিল করতে হবে।
এ নির্বাচনে প্রতি পৌরসভায় সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলো। এক চেকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অনুদান নিতে পারবে দলগুলো। এ ছাড়া দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা তাদের মনোনীত ব্যক্তিকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত করে পরিচালনা বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে।
বিধিতে কোনো রাজনৈতিক দল বিধি ভঙ্গ করলে তার জন্য অনধিক ৫ লাখ টাকা দণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে।
প্রার্থীকে অবশ্যই তার নির্বাচনী এলাকার মধ্য থেকে সমর্থক ঠিক করতে হবে। কারণ যাচাইবাছাই করে যদি দেখা যায় যে, সে সেই এলাকার ভোটার নয়, তাহলে সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে বলে বিধিতে উল্লেখ আছে।
ইসির নিবন্ধনে থাকা ৪০টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য তিন পদে ৩৪টি প্রতীক রাখা হয়েছে।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য জন্য ১২টি প্রতীক হলো- ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারম বোর্ড, চামচ, জগ, টাই, নারিকেল গাছ, বড়শি, মোবাইল ফোন, রেল ইঞ্জিন, হ্যাঙ্গার ও হেলমেট। স্বতন্ত্র সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য জন্য ১০টি প্রতীক হলো- আঙ্গুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম।
স্বতন্ত্র সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য জন্য ১২টি প্রতীক হলো- উটপাখি, গাজর, টিউব লাইট, টেবিল ল্যাম্প, ডালিম, ঢেঁড়শ, পাঞ্জাবি, পানির বোতল, ফাইল কেবিনেট, ব্রিজ, ব্ল্যাক বোর্ড ও স্ক্রু ড্রাইভার।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিধি ভেটিং হয়ে আসলেই এ নির্বাচনের দিন-ক্ষণ ঠিক করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘নতুন নিয়মে হলেও রাজনৈতিকভাবে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আমাদের আগে থেকেই রয়েছে। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয়ভাবেই হয়ে থাকে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান মারা গেছেন। বৃহস্পতিবারবিস্তারিত পড়ুন
৪ বার দেওয়া যাবে বিসিএস পরীক্ষা
একজন চাকরিপ্রার্থী ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪ বার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)বিস্তারিত পড়ুন
ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৭ জন। এইবিস্তারিত পড়ুন