‘যুদ্ধাহত’ স্বীকৃতি চান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর
মুজিবুর রহমান, একজন মুক্তিযোদ্ধা। শ্রদ্ধা আর চিন্তা-চেতনাতে ধারণ করেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। ভালোবাসার জায়গাতেও সেই বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর দ্বিতীয় কেউ নেই। একাত্তরের ৭ মার্চ তার ডাকে তারুণ্যকে পুঁজি করে রণাঙ্গনে গিয়েছিলেন, জীবন বাজি রেখে মরণপণ যুদ্ধ করে মুক্ত করেছেন প্রিয় মাতৃভূমি শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশকে।
সম্মুখ যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছেন অনেক দিন। সেদিন হয়তো স্বাধীন দেশের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্যে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। দেশে ফিরে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও।তবে আপসোস- যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি বলে।
অথচ এখনও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন যুদ্ধের সেই দুঃসহ ক্ষত। তাই একটা চাপা ক্ষোভ রয়ে গেছে মনে। যা প্রতিবছর ডিসেম্বর এলে যেনো আরও প্রকট হয়।
সম্প্রতি প্রিয়.কমের সঙ্গে আলাপকালে এমন আক্ষেপের কথাই জানালেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ৮ নং ওর্য়াডের নির্জন নিরিবিলি বাপতা গ্রামে তার বাড়ি। পুলিশে চাকরি করে রাষ্ট্রের সেবা করেছেন প্রায় ৪ দশক। এখন অবসরে গেছেন, ছেলে-মেয়ে আর নাতি-নাতনিদের নিয়েই কাটে তার সময়।
যুদ্ধের বর্ণনায় তিনি জানালেন, তখন মার্চ মাস, কর্মস্থল চট্টগ্রামে। ২৬শে মার্চ হঠাৎ করেই পাক সেনারা তার কর্মস্থল ঘিরে ফেলে। সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন নিজেকে। পরে কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে ১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের (বীর উত্তম) নেতৃত্বে বেশ ক’টি সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেন তারা। ওই সময় তাদের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন সেকেন্ড লে. মাহবুবুর রহমান।
যুদ্ধদিনের দুঃসহ স্মৃতি আওড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব মুজিবুর রহমান বলেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে নদীর পাড়ের গ্রাম শুভপুরে, সেখানে দিনভর যুদ্ধ হয় পাক সেনাদের বিরুদ্ধে। যা রাত পর্যন্ত চলে। এর নেতৃত্ব দেন মেজর মাহফুজ।
‘পরে ৬ নভেম্বর ভারতের ত্রিপুরার করিমাটুলা অঞ্চলে একটি বাংকারের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম আমি। তখন সেখানে আক্রমণ চালায় হানাদাররা। এ সময় সাহস করে যুদ্ধ চালিয়ে যাই, হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে আমার বাম হাতে,’ বলছিলেন যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা।
পরে সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে ত্রিপুরার হরিনার হাপানিয়া একটি ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় আগরতলার জিপি সামরিক হাসপাতালে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান তখনকার ছাত্রনেত্রী ও বর্তমান কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি।
মুজিবুর রহমান বলেন, সেদিন আমাকে জিরানিয়া সামরিক হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয় হাতে। এজন্যে মতিয়া চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
বেশ আক্ষেপ করে বলেন, সুস্থ হয়ে স্বাধীন দেশে ফিরেছি। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও পেয়েছি।তবে আমি একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রের সে স্বীকৃতি পাইনি। জীবনের শেষ সময়েও যদি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাই সেটা আমার জন্যে সৌভাগ্যের হবে,সম্মানের হবে।
মুজিবুরের মেয়ের জামাই তালুকদার আবুল হোসাইন বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যুদ্ধাহতদের কথা বললে বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। আমরাও চাই তিনি দেশের জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার স্বীকৃতিটুকু পান।
একই কথা কাওরাইদ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজুল হকেরও। তার ভাষায়, মুজিবুর রহমান একজন দুর্দান্ত সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।
এ বিষয়ে কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে গিয়ে যিনি আহত হয়েছেন, আমরাও চাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল আউয়াল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় করে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্য সন্তান, সব স্বীকৃতিই তাদের প্রাপ্য।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন