যেভাবে আপনার কন্যা শিশুটির ক্ষতি করছে এ যুগের খেলনা
বড়দের জন্য খেলা ব্যস্ত সময়ে একটু ব্রেক আনতে পারে। আর শিশুদের জন্য তো খেলা তাদের মনের বিকাশ ঘটায়।
তাদের কাছে খেলনা আর খেলাধুলাই জীবন। ছোটকালে শিক্ষালাভের অন্যতম উপকরণই যেন খেলনা।
খেলানার মাধ্যমে লিঙ্গ বিষয়ক শিক্ষাও পায় শিশুরা। আমেরিকায় খেলনা এবং শিশুদের মানসিক বিকাশ বিষয়ে এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ কথা। বলা হচ্ছে, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে দীর্ঘ দিন ধরে সংগ্রাম করছে আমেরিকান সমাজ। কিন্তু খেলনা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যের বিপরীত স্রোতে চলছে।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী এলিজাবেথ সুইটের মতে, লিঙ্গের ভিত্তিতে খেলনা মার্কেটিংয়ের অনেক পুরনো ইতিহাস রয়েছে। তিনি বিংশ শতাব্দিতে তৈরি ৭৩০০ ধরনের খেলনা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি জানান, ১৯২০ থেকে ১৯৫০ এর দশকে লিঙ্গভিত্তিক খেলনা বিক্রি গতনুগতিক বিষয় ছিল। ১৯২৫ সালের দিকে ছেলে এবং মেয়েদের আলাদা খেলনা হিসাবেই বাজারে বিক্রি হতো।
তবে ১৯৭০ এর দশক থেকে লিঙ্গভিত্তিক খেলনার বিয়ষটিকে নেতিবাচকভাবে দেখা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে ২ শতাংশ খেলনা সরাসরি ছেলেদের বা মেয়েদের বলে বিক্রি হতো। এমনকি তখন বার্বির মতো জনপ্রিয় পুতুলের বাইরের সজ্জাকেছেলে ও মেয়েদের উভয়ের জন্য করার চেষ্টা হয়। তখন বার্বি লাল, হলুদ ও নীল রংয়ের সজ্জায় আসতো।
১৯৮০ এর দশকে লিঙ্গের ভিন্নতার বিষয়টি আবারো স্পষ্ট হতে শুরু করে। প্রযুক্তি উৎকর্ষতায় বাচ্চাদের অন্যান্য জিনিসেও ছেলে-মেয়েকে আলাদা করা হয়। এমনকি বাবা-মায়েরা জন্মের আগেই জানতে পারতেন ছেলে নাকি মেয়ে হবে।
১৯৭০ এর দশকে নিয়ম আসে। পুতুল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো টেলিভিশনে সরাসরি শিশুদের কাছে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারতো না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের আমলে ১৯৮৪ সালে এসব নিয়মের ইতি টানা হয়। তখন শিশুদের খেলনার বিনোদন জগত নতুনভাবে উঠে আসে। অনেকে নির্মাতা টেলিভিশন শো এর ভিত্তিকে খেলনা বানানো শুরু করেন। তার ‘মাই লিটন পনি’ বা ‘ট্রান্সফরসার্স’ এর মতো শো এর চরিত্রকে খেলনায় আনতে শুরু করে। তবে এ ক্ষেত্রে খেলনা তৈরির সময় আলাদাভাবে লিঙ্গ বৈষম্য টেনে আনা হয়নি। সেই সময়টাই ছিল খেলনা ব্যবসার ব্যাপক উত্থানের সময়। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ আমেরিকার সেরা ১০টি খেলনা ছিল টেলিভিশনের শো-কেন্দ্রিক।
কিন্তু লিঙ্গ বৈষম্যহীন খেলনা তৈরির বিষয়টি মুখেই উচ্চারিত করা হয়। ফ্রাঙ্কলিন অ্যান্ড মার্শাল কলেজের সমাজবিজ্ঞানী ক্যারোল অস্টার জানান, বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষমতাবাদ টেলিনির্মাতা ডিজনির খুচরা বিক্রির ওয়েবসাইটে নজর দিলেই অনেক কিছু বোঝা যায়। এখানকার প্রতিটি খেলনা আলাদাভাবে বলে দেওয়া হয়েছে- এগুলো ছেলেদের বা মেয়েদের। আর যে খেলনাগুলো ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে তার বৈশিষ্ট্য দেখলে বোঝা যাবে তা ছেলেদের জন্যই করা হয়েছে।
সমাজে মেয়েদের অবস্থানকে হেয় করে সব সময় দেখা হয়েছে। আর সেই চিহ্ন খেলনাতেও রয়েছে। খেলনা তৈরিতে ছেলে-মেয়েদের আলাদা রাখা সামাজিক প্রক্রিয়ার অংশ। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, ছেলেদের জন্য এমন সব খেলনা তৈরি করা হয় যা বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত। তারা কে’নেক্স, পাজল বা লেগো ব্রিক্স ছেলেদের জন্য তৈরি হয়। কিন্তু এগুলো মেয়েদের বলে তৈরি করা হয়নি। এখানে মার্কেটিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
২০১২ সালের এক গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর মনোবিজ্ঞানী সুসান লিভাইন জানান, ছেলেদের খেলার ভঙ্গীও আলাদা। ছেলেরা আরো অনেক জটিল পাজল নিয়ে খেলে। এগুলো এমনভাবে তৈরি যেন খেলতে গেলে সাহস বাড়ে। বাবা-মায়েরাও এসব খেলনা কিনতে বেশি আগ্রহী থাকেন।
শিশুকালে খেলনার এই বৈষম্য পরবর্তী জীবনেও প্রভাব ফেলে। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে।
কিন্তু আধুনিককালে এ বিয়ষটাকে ঠিকঠাক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওয়ালমার্ট বা আমাজন খেলনা বিক্রিতে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এখনো ছেলে-মেয়েদের আলাদা খেলনার চিহ্নগুলো অনেক স্পষ্ট। তাই বাবা-মায়ের এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। সন্তানের মাঝে খেলনার মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্যের ধারণা প্রবেশ করানো আমাদেরই ভুল। সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কল-কারখানায় কোনো শিশুশ্রম নেই: প্রতিমন্ত্রী
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, প্রতিষ্ঠানিকবিস্তারিত পড়ুন
বেনাপোলের কিশোরী জোনাকির মরদেহ যশোরে উদ্ধার
যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকেবিস্তারিত পড়ুন
শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে
স্কুল থেকে শিশুরা জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিয়মকানুনবিস্তারিত পড়ুন