যেভাবে খুন হয়েছিলেন ঐশীর বাবা-মা
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মা-বাবা খুন হওয়ার পর পালিয়ে যান ঐশী।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেন। ঢাকা মহানগর মুখ্য আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার ছাদাতের খাসকামরায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল দাবি করে ৫ সেপ্টেম্বর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। আদালত তা নথিভূক্ত রাখার নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ডিবির ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেন। একই বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত।
হত্যা মামলার অপর আসামি গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে। গত বছরের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে সুমিকে জামিন দেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। পরে ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে ঐশী জানান, ঘটনার আগের দিন জনি নামের এক বন্ধুর কাছে তিনি বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান। হত্যার পর তাকে আশ্রয় দেওয়ার আশ্বাস দেন জনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঐশী ছয় পাতার ৬০টি ঘুমের ট্যাবলেট কেনেন। ৩০টি করে ট্যাবলেট মা-বাবার কফিতে মেশান। মা-বাবা কফি খাওয়ার পর অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর প্রথমে বাবাকে ছুরিকাঘাত করেন ঐশী। বাবা গোঙাতে থাকলে ওড়না দিয়ে বাবার রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন। বাবার গোঙানির শব্দে মা জেগে ওঠেন। মা পানি চান। পানি খাওয়া শেষ হলে ঐশী মায়ের শরীরে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন। শেষমেশ মায়ের শ্বাসনালীতে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর ঐশী ও গৃহকর্মী মিলে দুজনের লাশ বাথরুমে নিয়ে লুকিয়ে রাখেন। রক্ত পরিষ্কার করে সকালে জনিসহ তিনি বেরিয়ে যান।
ঐশীর মাদকাসক্তির ব্যাপারে কোনো পরীক্ষা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পুলিশের কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সময় সে মাদকাসক্ত ছিল কি না, তা পরীক্ষা করার সুযোগ ছিল না। কারণ ১৪ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর ১৭ আগস্ট সে পল্টন থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে।’
তবে পরে জানা গেছে, ঐশী ছিলেন মাদকাসক্ত। এক সময় ঐশীর বাবা-মা জানতে পারেন মেয়ের মাদকাসক্তির কথা। জানা যায়, ঐশী নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। আর ইয়াবার যোগান দিত বন্ধুরা। আর সেই বন্ধু-বান্ধব ছিল তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। মাদকাসক্ত হয়ে প্রায়ই ঐশী তার বাবা-মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। কোন রকম নিয়ম কানুনের মধ্যে থাকতেন না। বাসায় তো রাত করে ফিরতেনই, সঙ্গে থাকতো ছেলে বন্ধু।
উচ্ছৃঙ্খলতা যখন চরম পর্যায়ে তখন বাবা-মা বোঝাতে চেষ্টা করেন মেয়েকে। কিন্তু ইয়াবার নিকষ কালো অন্ধকারে ততদিনে ডুবে গেছেন ঐশী। বাবা-মা যত বাধা দেন, ইয়াবার ঝাপসা ধোয়ায় ঐশীর কাছে তারা তখন চরম শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হতে থাকেন। ধীরে ধীরে এই শত্রুতা আরো বাড়ে। ঐশী কোনোভাবেই বাবা-মায়ের শাসন মেনে নিতে পারছিলেন না। কিভাবে তাদের শায়েস্তা করা যায় ভাবতে থাকেন। একপর্যায়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেন বাবা-মাকে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপকবিস্তারিত পড়ুন
দুই দফা কমার পর ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
টানা দুই দফা কমার পর দেশের বাজারে ফের স্বর্ণের দামবিস্তারিত পড়ুন
চট্টগ্রামে দুর্ঘটনার কবলে হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে সড়কবিস্তারিত পড়ুন