যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন আলোচিত দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত ও সাকিফ
রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও তার সহযোগী সাদমান সাকিফকে সিলেট শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সদরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেলী ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের নির্দেশে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে সিলেট শহরের জালালাবাদ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
আইজিপি বলেন, সিলেটের জালালাবাদ এলাকার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পাশের একটি বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা থেকে পুলিশ সদর দফতরের বিশেষ একটি টিম সিলেটের স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালায়।
সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, জেলা পুলিশ ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে সাফাত ও সাদমানকে গ্রেফতার করে। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট শহরের একটি বাড়ি থেকে বনানীতে তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাতেই তাদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে আজ রাতের মধ্যেই নাঈমকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম
দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় পলাতক ধর্ষক নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমকে রাতেই গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত নাঈমের বাড়ি সিরাজগঞ্জের গান্ধাইলে জানতে পেরে বৃহস্পতিবার (১১ মে) সিরাজগঞ্জে অবস্থানকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এ সময় আসামিকে পাওয়া না গেলে তার পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে হলেও আসামিকে ধরতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি। ধর্ষককে ধরতে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন বলে সংবাদকর্মীদের জানান তিনি।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের ছেলে নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম নামে ঢাকায় বাস করছিলো।
উল্লেখ্য, কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুনে স্বেচ্ছা সেবকলীগের সহ-সভাপতি পরিচয়ে ধর্ষক ও প্রতারক নাঈম আশরাফ এর নাম শোভা পাচ্ছে।
এর আগে বনানী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন ধর্ষিত দুই ছাত্রী
রাজধানীর বনানীর রেইনটি হোটেলে ধর্ষণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর মধ্যে একজন বলেন, ‘বলতে পারেন থানায় মামলা করতে গিয়ে আমরা পুলিশের হাতে ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছি।’
এভাবেই বনানী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের আচরণের বর্ণনা দেন ধর্ষিতা ছাত্রী।
ওই দুই ছাত্রী বলেন, এতদিন আমরা পুলিশের নেতিবাচক আচরণ সম্পর্কে লোকমুখে শুনতাম এবার আমরা নিজেরাই শিকার। তারা বলেন, ধর্ষকদের অব্যাহত হুমকির মুখে বনানী থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েও আমরা হেনস্থার শিকার হয়েছি।
থানার ওসি (বিএম ফরমান আলী) অযথায় আমাদের ৩ দিন ঘুরিয়েছেন। ধর্ষণের অভিযোগ তিনি নিতে রাজি হননি। আমরা প্রতিদিন সকালে থানায় যেতাম। ডিউটি অফিসারের সামনে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর ওসির রুমে আমাদের ডাক পড়ত। ওসি একা দরজা লাগিয়ে তার কক্ষে বসে আমাদের মুখে ধর্ষণের বর্ণনা শোনেন। ঘটনার বিষয়ে বারবার একই প্রশ্ন করেন। ‘কিভাবে হল’, ‘কেমন করে হল’ এসব অশ্লীল প্রশ্ন করেন তিনি।
আব্দুল মতিন নামের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা প্রতিবাদ করনি কেন? হোটেলে গিয়েছিলে কেন। এর আগে এভাবে কোন কোন হোটেলে গিয়েছিলাম- এ রকম অবান্তর প্রশ্ন করেন তিনি। পুলিশের এসব প্রশ্ন শুনে আমরা লজ্জা ছাড়াও আরেক দফা ধর্ষণের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়েছি।
আমরা অনেক কিছু খোলামেলা বলতে না চাইলে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ধর্ষণের মামলা করতে হলে সব খুলে বলতে হবে। একপর্যায়ে সব শুনে ওসি আমাদের বলেন, ‘তোমরা তো খারাপ মেয়ে। বড় লোকের ছেলেকে ফাঁসাতে ধর্ষণের মামলা করতে চাইছ।’
ধর্ষিত ছাত্রী বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা কতটা নির্লজ্জ হতে পারেন আমরা দেখেছি’ তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশের ভাবটা এমন ছিল যে, আমরা খারাপ মেয়ে, হোটেলে গিয়ে ধর্ষিত হয়েছি তাতে এমন কি ক্ষতি হয়েছে। আর আমরা যেহেতু খারাপ মেয়ে তাই আমাদের এখন পুলিশকেও খুশি করতে হবে। অথচ আমরা যথাসাধ্য প্রমাণ নিয়ে থানায় গেছি।’
এক পর্যায়ে ধর্ষিত দুই ছাত্রীর একজন বলেন, ‘বলতে পারেন থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে আমরা পুলিশের হাতে ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছি।’
তারা বলেন, ‘আমাদের মতো যাতে আর কোনো ধর্ষিতকে থানায় গিয়ে এমন নির্যাতনের শিকার না হতে হয় সেই বিচারও চাই। অন্যথা এ সমাজের নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হবে না।’
প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই শিক্ষার্থীকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়।
এরপর তাদের বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলো- সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন