যেভাবে জেএমবিতে সরকারি কর্মকর্তা প্রকৌশলী নাফিস
আত্মীয়তার সূত্র ধরেই জেএমবিতে যোগদেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাসিফ আহমেদ (নয়ন)। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে নাসিফ হঠাৎ গত ১১ অক্টোবর উধাও হয়ে যান। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডিও করা হয়। জিডিতে অভিযোগ করা হয়, নাফিসকে হয়তো কেউ অপহরণ করেছে। এ নিয়ে মানববন্ধনও করা হয়। অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়েই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে নাফিসের নব্য জেএমবিতে যোগদেয়ার তথ্য বের হয়ে আসে। নাফিসের স্বজনদের মধ্যে অনেকেই ‘জঙ্গি’ তালিকায় নাম লেখিয়েছেন।
তবে শুক্রবার বেলা ১১ টায় র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান, প্রকৌশলী নফিস ও হাসিবুল হাসান নামের দুই ‘জঙ্গি’কে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছে ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। তারা নব্য জেএমবির অর্থদাতা।
কীভাবে নাফিস ‘জঙ্গি’ হলেন- এর জবাব খুঁজতে গিয়ে বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যায় নাফিসের চারপাশে ছিল শিক্ষিত ‘জঙ্গি’দের আনাগোনা। কয়েক মাস আগে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে একটি মুসলিম দেশের কথা বলে মেয়ে- মেয়ে জামাইসহ পরিবারে অন্য সদস্যদের নিয়ে দেশত্যাগী রামপুরায় বাসবাসকারী সেই ডা. রোকনউদ্দিন হচ্ছেন নাসিফের চাচা।
এছাড়া গত ৮ অক্টোবর ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানের সময় পাঁচ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত নব্য জেএমবি প্রধান আবদুর রহমান বা সারোয়ার জাহান ছিলেন প্রকৌশলী নাফিসের চাচাতো ভাই।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ ও রাজশাহীর র্যাব প্রকৌশলী নফিসে আটকের ব্যাপারে তারা অবহতি নন-এমন বক্তব্য দিলেও ঢাকায় আটক ব্যক্তিই যে প্রকৌশলী নাফিস সেটা নিশ্চিত করেছেন রাজশাহীর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, ‘নফিস যেদিন থেকে অফিসে আসেন না, সেদিনই তার বিষয়টি প্রধান কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। এখন তিনি আটক হয়েছেন, এ বিষয়টিও অফিস খোলার দিন রবিবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেয়ার তারা নেবেন।’
পুলিশের ধারণা রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নফিস আহমেদ নয়ন আত্মীয়তার সূত্র ধরেই নব্য জেএমবির ‘আদর্শে’ উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকতে পারেন। প্রকৌশলী নফিসের মতো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল লোকদেরকেই জেএমবি সদস্যরা টার্গেট করেছে। অর্থের যোগান পেতে নানাভাবে তাদের ‘মগজ ধোলাই’ করা হয়। আর এ ফাঁদেই পড়েন প্রকৌশলী নফিস।
শুক্রবার বেলা ১১টায় র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘প্রকৌশলী নফিস নব্য জেএমবির তহবিলে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। আরও পাঁচ লাখ টাকা তার দেয়ার কথা ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে র্যাব।’
নফিসের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, ‘প্রকৌশলী নফিস অপহৃত হয়েছেন-এ অভিযোগে তার থানায় মামলা হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি অনুসন্ধান শুরু করেন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন, নব্য জেএমবির অর্থদাতা নিখোঁজ ডা. রোকনউদ্দিন তার আত্মীয়।’
তিনি বলেন, ‘ডা. রোকন নব্য জেএমবির তহবিলে ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে আছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী নাইমা আক্তার, তাদের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন ও রামিতা রোকন এবং রেজওয়ানার স্বামী সাদ কায়েসও আছেন। রেজওয়ানা ও তার স্বামী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। বড় মেয়ে ও জামাতার মাধ্যমেই ডা. রোকন উগ্রপন্থায় জড়ান বলে ধারণা করা হয়। আর ডা. রোকনের মাধ্যমে প্রকৌশলী নফিস জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।’
আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নাফিসের রাজশাহী মহানগরীর বালিয়াপুকুর ছোট বটতলা এলাকায় দোতলা বাড়ি রয়েছে। লাল রঙা এ বাড়িটির নাম রাখা হয়েছে মায়ের নামে-‘নার্গিস কুঞ্জ’। এই বাড়িতে মা-বাবা ও স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে থাকতেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে শুক্রবার বিকেলে ঐ বাড়িটিতে গেলে বাড়ির কেউ কথা বলতে অস্বীকার করেন।
বাড়ির প্রধান ফটকের কলিংবেলে চাপ দিলে দোতলার বেলকোনিতে প্রায় ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এসে পরিচয় জানতে চান। তাকে পরিচয় দিলে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর প্রায় ৩০ বছর বয়সী একজন নারী এসে ফের পরিচয় জানতে চান। তাকে পরিচয় জানালে তিনি কথা বলতে চাননি।
বলেন, ‘বাসায় কথা বলার মতো কেউ নেই। সবাই নারী। কেউ কথা বলবেন না।’
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নফিসের বাবা আবদুল মান্নানও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের একজন প্রকৌশলী। তিনি বাসায় তেমন একটা থাকেন না। নফিসের একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে সিরাজগঞ্জে। নফিসের স্ত্রীর নাম শামিমা আক্তার এবং তাদের এক সন্তান রয়েছে। মাঝে মাঝেই অচেনা মানুষের যাতায়াত ছিল বাসাটিতে। নফিস ‘অপহৃত’ হওয়ার পর থেকে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিবেশী আইনজীবী নার্গিস আরা জানান, দেড় বছর ধরে তিনি এ এলাকায় ভাড়া আছেন। নফিসের পরিবার কারও সঙ্গে মেশেন না। রাস্তার মোড়ের দোকানদার নাইম ইসলাম বলেন, নফিস তার বাবার একমাত্র সন্তান। দু’বছর ধরে তার দোকানে নফিস যান না। তবে অফিসে যাওয়া-আসা এবং নামাজের সময় মসজিদে যেতে তাকে দেখতেন। সম্প্রতি তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন