যেভাবে তরুণদের আকৃষ্ট করছে আইএস
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ধর্মীয় জিহাদের কথা বলে যুদ্ধ করছে। কিন্তু তাদের সব যোদ্ধাই কি ধর্মীয় আবেগের কারণে এতে যুক্ত হয়েছেন? দেখা গেছে, আইএসের অনেক যোদ্ধারই ধর্মীয় জিহাদ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। ইরাকের সুন্নি তরুণদের অনেকে আইএসে যোগ দিয়েছেন সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে এবং পরিবারকে বাঁচাতে। আবার কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন রোমাঞ্চের আশায়!
কুর্দিদের হাতে আটক আইএস যোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ‘দ্য নেশন’।
দ্য নেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরাকের সামরিক বাহিনী (আইএসএফ) ও কুর্দি বাহিনী (পেশ মেরগা) লড়ছে আইএসের বিরুদ্ধে। এই দুই বাহিনীর একই সাধারণ নীতি, আইএস যোদ্ধা জীবিত রাখার কোনো মানে নেই। আহত আইএস যোদ্ধাও ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আইএস যোদ্ধাকে জীবিত রাখায় তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এই কারণে আইএস যোদ্ধাদের কাছাকাছি যাওয়া ও তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়াটা বেশ কঠিন। আর ইরাকের অভ্যন্তরে আইএসের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে কোনো সাংবাদিকের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। সাক্ষাৎকারের বদলে ধড় থেকে মাথা আলাদা হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা আছে।
কয়েকদিন আগে বিবিসির প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কয়েকজন আইএস যোদ্ধাকে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত ইরাকের কিরকুক শহরে বন্দি রাখা হয়েছে। দ্য নেশনের লিডিয়া উইলসনসহ কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে যান। স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বন্দি কয়েকজন আইএস যোদ্ধার সাক্ষাৎকার নেন তাঁরা।
২৬ বছর বয়সী এক আইএস যোদ্ধার সাক্ষাৎকার নেন সাংবাদিকরা। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া ওই ব্যক্তি জানান, ১৭ ভাইবোনের মধ্যে সেই সবচেয়ে বড়। নিজেও বিয়ে করেছেন এবং দুই সন্তানও আছে, এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় পরিবারকে চালানোর জন্য দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। আইএসের আবির্ভাবের পর চাকরি হারিয়ে বিপদে পড়লেন তিনি। ওই সময় বন্ধুর মাধ্যমে আইএসের জন্য কাজ করার সুযোগ পান। পরিবারের জন্যই আইএসের পক্ষে কাজ শুরু করেন তিনি। ওই ব্যক্তি জানান, শুধুমাত্র ভয় ও পরিবারের জন্য তিনি আইএসে যুক্ত হন। অন্যরা হয়তো বিশ্বাসের জন্য আই্এসে আসতে পারে কিন্তু তিনি নন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হওয়া প্রয়োজন। সন্তান ও পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই আমি।’
পরে সাংবদিকরা জানতে পারেন, ওই ব্যক্তি একজন দক্ষ গাড়িবোমা প্রস্তুতকারী। তাঁরই বানানো বোমায় মারা গেছে অনেক মানুষ। আইএসের অর্থদাতা এক ব্যক্তির মোবাইলের সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন ইরাকের জঙ্গিবাদ আইন অনুযায়ী তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
দ্য নেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইএস ইসলামিক খেলাফত ঘোষণা করেছে। আর এর প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদী উপাধি নিয়েছেন ‘আমির আল-মুমিনিন’। জিহাদের নামে এরা যুদ্ধ করছে। তবে আইএস যোদ্ধাদের অনেকেরই ইসলাম ও জিহাদ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। আর ইসলামিক স্টেটের পক্ষে যুদ্ধের জন্য এমন ধারণার খুব একটা প্রয়োজনও নেই। ব্রিটেন থেকে আইএসের যোগ দেওয়া আগে এক যোদ্ধাকে আমাজন থেকে ‘ইসলাম ফর ডামিস’ বই কিনতে দেখা গেছে।
ইনস্টিটিউট আব স্ট্রাটেজিক ডায়ালাগের জঙ্গিবাদ দমনবিষয়ক গবেষক এরিন সল্টম্যানের মতে, ১০ থেকে ২০ বছর আগেও আফগানিস্তানের যুদ্ধ বা জঙ্গিবাদের জন্য ইসলামিক জ্ঞান প্রয়োজন ছিল। তবে বর্তমানে জঙ্গিবাদে যোগ দিতে ইসলাম সম্পর্কে অনেক জ্ঞান প্রয়োজন হয় না। এতে যুক্ত হতে বিভিন্ন বিষয় কাজ করে। সল্টম্যানের মতে, রোমান্স, ক্ষমতা ও অন্য লোভে আইএসে ভিড়ছে অনেকে।
কুর্দিদের হাতে বন্দি কয়েকজন আইএস যোদ্ধাকে ইসলাম ও জিহাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে দেখা যায়, এসব বিষয় সম্পর্কে তাঁদের কোনো স্পষ্ট ধারণাই নেই। আবার পশ্চিমা দেশ থেকে আইএসে যোগ দেওয়া জঙ্গিরাও নিজেদের মতো করে এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা দেন, যাঁর সঙ্গে প্রকৃত বিষয়ের তেমন কোনো মিল নেই।
কুর্দি বন্দিশিবিরে থাকা বয়সে তরুণ ও সুন্নি কয়েক আইএস যোদ্ধা বলেন, সম্মানের সঙ্গে জীবনধারণের জন্য তাঁরা আইএসে যোগ দেন। এসব তরুণের গড় বয়স ২৭। অর্থাৎ, ২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইরাক আক্রমণ করে তখন তাঁদের বয়স ছিল ১২-১৩। ওই যোদ্ধাদের মতে, সাদ্দাম হোসেনের আমলে মানুষের অবস্থা খারাপ ছিল তবে দেশে যুদ্ধ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরাকে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ক্ষমতায় আসে নুরি আল মালিকির নেতৃত্বাধীন শিয়া সরকার। চাপের মুখে পড়েন সুন্নিরা। অনেক সুন্নি যুবক ওই সময় বাবাকে হারায়। যুদ্ধ অথবা সরকারের হাতে বন্দি অবস্থায় তাঁদের অনেক স্বজনের মৃত্যু হয়। কয়েক তরুণ ওই সময়ের স্মৃতি উল্লেখ করেন, ‘আমরা ঘর থেকে বেরোতে পারতাম না, বাবা ছিল না। জীবনধারণই ছিল কঠিন। পরে আইএসের উত্থানের পর সম্মানের সঙ্গে বাঁচতেই এতে যোগ দেন তাঁরা। পরিবারের নিরাপত্তার জন্যও অনেকে তাঁরা আইএসে যুক্ত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ডাগ স্টোনও পরিবারের জন্য ইরাকি তরুণ সুন্নিদের আইএসে যুক্ত হওয়ার বিষয়টির সমর্থন করেন। তিনি জানান, আল-কায়েদার পর আইএসই একমাত্র জঙ্গিগোষ্ঠী যাঁরা এই তরুণদের পরিবার ও গোত্র নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরাচারী শাসক বললেন ট্রাম্প
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পবিস্তারিত পড়ুন

ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন