যেভাবে শুরু হলো এসআই মাসুদের বেপরোয়া জীবন!!
দেশজুড়ে এখন আলোচনার ঝড়ের নাম এসআই মাসুদ শিকদার। অফিস কিংবা বাসে, চায়ের দোকান এমনকি পথে-ঘাটে যেখানে কান পাতবেন সেখানেই এসআই মাসুদকে নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই সঙ্গে চলছে পুলিশের সেই চির চেনা চরিত্র নিয়ে। ধুধু বালুচরে পুলিশের কেউ কেউ সুনাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও মাঝে মধ্যে মাসুদের মতো এরকম দু-একটা অসাধু পুলিশ সদস্য সবকিছুকে ধূলিস্যাৎ করে দেয়।
মাসুদের জীবনের শুরুটাই যে ছিল একেবারেই অগোছালো। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানা সদর এলাকা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সোয়াইতপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সিরাজ উদ্দিন শিকদার। প্রায় ১০ বছর আগে বাবার মৃত্যু হয়েছে। কৃষক বাবা তিনটি বিয়ে করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় মায়ের কোনো সন্তান না হওয়ায় সিরাজ শিকদার তৃতীয় বিয়ে করেন। সেই তৃতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেন মাসুদ শিকদার। সবার বড় তিনি। তার আরো দুই ভাই রয়েছে। মেজো ভাই স্থানীয় একটি পার্কে চাকরি করেন। আর সবার ছোট ভাই মালদ্বীপে থাকেন। মাসুদই টাকা-পয়সা খরচ করে সেখানে পাঠিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ থেকে ১৫ বছর আগে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় কনস্টেবল পদে চাকরি নেন মাসুদ। ওই সময় পড়াশোনা করতেন ইন্টারমিডিয়েটে। তার আগে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েও কলেজজীবন শেষ করতে পারেননি তিনি। শেষে পুলিশে গতি হয় তার। চাকরি চলাকালীন অবস্থায় মাসুদ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। চাকরির বয়স আট বছর পূর্ণ হলে পরীক্ষা দিয়ে এএসআই পদে প্রমোশন পান। এরপর তিনি ২০১৩ সালের দিকে আরেকটা পরীক্ষার মাধ্যমে এসআই পদে প্রমোশন পান।
এলাকাবাসী জানান, মাসুদ শিকদার এএসআই হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া জীবন শুরু করেন। পুলিশে চাকরি নেওয়ার পরপরই পাশের গ্রামের আনসারের মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। মাসুদের শ্বশুর আনসার আলী নিজেও একজন ডাকাত হিসেবে পরিচিত। আর যে সময় বিয়ে করেন তখন মাসুদের পরিবারে অসচ্ছলতা ছিল। পুলিশের চাকরিটাই তার ঘরে ম্যাজিক হয়ে দেখা দেয়। যেন আলাউদ্দিনের বাতি পেয়ে যায় রাতারাতি।
এলাকাবাসী জানায়, মাসুদ শিকদার যখন বাড়িতে যেতেন তখন এলাকার যুবক ছেলেরা তাকে ঘিরে হইহুল্লোড় করত। আনন্দ করার জন্য পিকনিকের আয়োজন থেকে শুরু করে সব ধরনের আয়োজন করা হতো। মাদকের আড্ডাও জম্পেশভাবে জমে উঠত। এ কারণে এলাকার যুবক ছেলেরা এসআই মাসুদ বলে শ্লোগান দিতো। টাকার প্রভাবের দ্বারাই এলাকার লোকজনের কাছে পুলিশের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন মাসুদ।
এসআই মাসুদ কলাবাগান ও ধানমন্ডি থানায় থাকার সময় গ্রাম থেকে পড়তে আসা অনেক ছাত্রকে ধরে মামলা ও রিমান্ডের নাম করে নিরীহ লোকদের কাছে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে কখনো আদরের সন্তানকে ছেড়ে দিয়েছে আবার কখনো ৫৪ ধারায় চালান করেছে। ২০১৩ সালে চঞ্চল নামে এক ছেলেকে ধরে কলাবাগান থানায় নিয়ে মারধর করে। জোর করে বাড়িতে ফোন করিয়েছে ৫০ হাজার টাকার জন্য। না হলে প্রচণ্ড মারধর এবং শিবির হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হবে এই মর্মে বাবা-মাকে ভয় দেখানো হয়েছে। পরে উপায় না পেয়ে গরু-বাছুর বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগী সেই চঞ্চল ভয়ে কিছু বলেননি কাউকে। তবে এ ঘটনার পর তিনি মুখ খুলেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর আসাদগেট এলাকা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত গোলাম রাব্বিকে আটক করে ইয়াবা ব্যবসায়ী-সেবনকারী বানানোর ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন এসআই মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এরপর তাকে রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে বেড়ান। এমনকি তাকে বেড়িবাঁধে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেন। রোববার সকালে এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রাব্বি। সারা দেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আলোচিত হয় বিষয়টি। এরপর সোমবার সকালে এসআই মাসুদকে প্রত্যাহার করা হয়।
মাসুদকে প্রত্যাহারের বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে নির্যাতনের অভিযোগে এসআই মাসুদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অপরাধ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন