যে কারণে পাকিস্তান ছাড়ছে সংখ্যালঘু হিন্দুরা
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের দেশ ছেড়ে ভারত আশ্রয় নেয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। যদিও ভারতে প্রায়ই হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কথা শোনা যায়। অন্যদিকে পাকিস্তানে এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়না বললেই চলে। তারপরও নানা বৈষম্য আর ধর্মীয় নিষ্পেষণ থেকে বাঁচতে সে দেশের সংখ্যালঘুরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিতে উদগ্রিব হয়ে আছেন।
পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসেছিল ১৬ বছরের মালা দাস। এখন সে তার নাম লিখতে পারে। এ ঘটনাকে সে তার জীবনের সবচাইতে বড় অর্জন মনে করে। তার ভাষায়,‘আমি যখন এখানে এসেছিলাম তখন সম্পূর্ণ নিরক্ষর ছিলাম। আজ আমি আমার নাম লিখতে পারি।’ কিন্তু মালা এখনও সংখ্যা লেখা আয়ত্ত করতে পারেনি। তাই সে কখন ভারতে এসেছে সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেনি। তবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের দিকে তারা পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ শহর থেকে পালিয়ে ভারতে আসে। তাদের পালিয়ে আসার মূল কারণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন এবং সরকারের উদাসীনতা। গত পাঁচ বছরে প্রায় বার’শ সংখ্যালঘু হিন্দু পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা দিল্লিতে পৃথক তিনটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।এখানে তাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এখনো ‘ঘরে ফিরতে’ না পারা। যার কারণে তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারছেন না।
গত তিন সপ্তাহ আগে ৭১ সদস্যের সংখ্যালঘু হিন্দুরা পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে। তাদেরই একজন ভগবান দাস। তার দুটি সন্তান আছে যাদের কারোই কোন আক্ষরিক জ্ঞান নেই। তিনি বলেন,‘পাকিস্তানে আমাদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে দেখা হত। সেখানকার স্কুলগুলোতে আমাদের বাচ্চাদের কখনোই সাদরে গ্রহণ করা হত না। মুসলমানরা আমাদের ধর্ম নিয়ে উপহাস কর। এমনকি যৌন হয়রানির শিকার হতে হত আমাদের মেয়েদেরকেও।’ দিল্লির আশ্রয় শিবিরে এসব হিন্দু অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে যেখানে শরণার্থী শিশুরা লেখাপড়া শিখতে পারছে। অথচ পাকিস্তানের স্কুলগুলোতে এসব ছেলেমেয়েদের কুরআর পড়তে বাধ্য করা হত। সেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীরা তাদের ধর্ম নিয়ে হাসাহাসি করত। কিন্তু ভারতে আসার পর তারা স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করতে পারছেন। এ নিয়ে দারুন খুশী মালা দাস। তিনি বলেন,‘এখানে হিন্দুরা কোন ভয়ভীতি ছাড়াই মন্দিরে যেতে পারে এবং নানা রকম ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে। পাকিস্তানে আমাদের মন্দিরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ঘরে বসেই প্রার্থনা করতাম। আমাদের প্রতিবেশীদের চোখ এড়িয়ে গোপনে মন্দিরে যেতে হত। নইলে ওরা যে আমাদের নিয়ে হাসহাসি শুরু করত।’
১৯৪৭ সালে আজ ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে প্রতিবেশী দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমানে ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলমান হলেও পাকিস্তানে হিন্দু সংখ্যালঘুরা হচ্ছে জনসংখ্রার মাত্র দুই ভাগ। তবে ভারতে বসবাসকারি পাকিস্তানি হিন্দুদের সংখ্যার কোন সরকারি হিসাব নেই। বছরের পর বছর ধরে তারা সীমানা অতিক্রম করে ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশের রাজস্থান ও হারিয়ানায় পৌঁছেছে। প্রথমে তারা শরণার্থীর জন্য আবেদন করলেও অবশেষে তারা ভারতের নাগরিকত্ব লাভ করেছে।
বিবিসি’র অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৪শ’য়ের বেশি পাকিস্তানিকে নাগরিকত্ব দিয়েছে ভারত সরকার যাদের সিংহভাগই হিন্দু। তবে বর্তমানে দিল্লি শিবিরে বসবাসকারীরা কবে নাগাদ নাগরিক অধিকার পাচ্ছেন তা অবশ্য জানা যায়নি। এ সম্পর্কে দিল্লি ক্যাম্পের নেতা অর্জন দাস বিবিসি’কে বলেছেন,‘আমরা ২০১১ সালে আবেদন করেছিলাম। বিজেপি সরকার আমাদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল বলে দাবি করে থাকে। তারপরও আমরা নাগরিকত্ব পাইনি। আমরা এখন পুরোপুরি হতাশ।’
মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ভারত এসেছেন পাহলাজ। এখনো কোনো হিন্দু নেতা বা প্রতিবেশীরা তাদের শিবির পরিদর্শনে না আসার ঘটনা নিয়ে তিনিও বেশ হতাশ। যদিও ভারতে আসতে পেরেই এসব পাকিস্তানি হিন্দুদের অধিকাংশই বেশ খুশী। অনেকের আবার এমন বোধ হচ্ছে যেন দীর্ঘদিন পর ‘ঘরে’ ফিরেছেন। পাহলাজ জানান, পাকিস্তানের বেশিরভাগ হিন্দুই দেশ ছেড়ে আসতে চাইছেন। তার ভাষায়,‘অল্প কিছু হিন্দু কেবল ভারতে এসেছে। এখনো পাকিস্তান ছেড়ে আসার সুযোগ খুঁজছে আরো লাখ লাখ সংখ্যালঘু।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন