যে গ্রামজুড়ে শুধুই নারী, পুরুষ নিষিদ্ধ!
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে নারী পুরুষ সবাই থাকে। হয়তো নারী কম পুরুষ বেশি অথবা পুরুষ বেশি নারী কম। কিন্তু যদি বলি এমন এক গ্রাম আছে যেখানে শুধু নারী, পুরুষ প্রবেশ নিশিদ্ব। কল্পনায় আনতেও ভয় পায় অনেকে কিন্তু এটাও সম্ভব। এটি একটি আজব জায়গা যে গ্রামজুড়ে শুধুই নারী। পুরুষদের মানা গ্রামটিতে।
সভ্যতার শুরু থেকেই কালে কালে দেশে দেশে নারীরাই পুরুষের সহিংসতার প্রধান শিকার হয়েছে। কখনো কখনো নারী ও শিশুদের পুরুষরা বানিয়েছেন যুদ্ধের ঢালও। এই একুশ শতকে এসেও এখনো পৃথিবীতে থেমে নেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যার মতো জঘন্য কাজগুলো। তারপরও অনেক দেশেই নারীরা মুখ বুজে সহ্য করে চলেছেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই অত্যাচার। কিন্তু তাই বলে কেউ কেউ যে বিদ্রোহ করছেন না তা নয়।
ঠিক যেমন বিদ্রোহ করেছেন কেনিয়ার রেবেকা লোলোসোলি। ধর্ষণ, জোরপূর্বক বিয়ে, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার, অঙ্গহানি হওয়া ২৪৭ জন নারী শিশুকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন আস্ত একটি গ্রাম। যেখানে গত ২৫ বছর ধরে পুরুষ প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রেবেকার প্রতিষ্ঠিত এই গ্রামের নাম উমোজা।
কেনিয়ার উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় সামবুরু জেলার কাছাকাছি অবস্থিত এই গ্রামকে এখন বলা হচ্ছে নারীদের অভয়ারণ্য। কারণ এখানে আশ্রয় নেয়া নারী ও শিশুরা থাকতে পারছেন নিজেদের মতো করেই, স্বাধীনভাবে অধিকার নিয়ে।
কিন্তু কেমন করে শুরু এই গ্রামের? এ কথা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৯০ সালে। যৌন সম্পর্ক করতে রাজি না হওয়ায় সে সময় নিজ গ্রামের কিছু ছেলে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে রেবেকাকে। এরপরও তিনি রেহাই পাননি। ব্রিটিশ সেনাদের একটি দল ধর্ষণ করে তাকে। কিছুদিন হাসপাতালে কাটিয়ে ফিরে এসে তখনই রেবেকার এমন একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসে। যেখানে কোনো পুরুষ থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন আশপাশে নির্যাতনের শিকার কিছু নারীর সঙ্গে। তারাও রেবেকার এই উদ্যোগে আগ্রহ দেখান।
সামবারু এলাকায় মূলত প্রাধান্য বেশি যোদ্ধা মাসাই আদিবাসী গোষ্ঠীর। মাসাই সমাজে পুরুষরাই সর্বেসর্বা। গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে মেয়েদের মতামত দেয়ার অধিকার খুব কমই আছে। ফলে সামাজিক ও পারিবারিক নির্যাতনের শিকার মেয়েরা রেবেকার এই প্রস্তাব সানন্দে লুফে নিল। এরপরেই তারা সবাই মিলে ভূমির জন্য আবেদন করে দেশের সরকারের কাছে।
গ্রামের শুরুতে রেবেকার সঙ্গে ছিলেন মাত্র ১৫ নারী। ক্রমেই তাদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে সেখানে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত নিপীড়িত ৪৭ জন নারী ও ২০০ শিশু রয়েছে। তারা গ্রামে নিজেদের জীবন যাপনের জন্য বেছে নিয়েছেন পছন্দমতো পেশা। তবে গ্রামের নারীরা এখন কেনিয়ার ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার বানিয়ে বিক্রি করেন এবং গ্রামের কাছাকাছি একটি ক্যাম্প সাইট পরিচালনা করে নিজেদের খরচ নির্বাহ করেন। শিশুদের লেখাপড়ার জন্যও এখানে রয়েছে স্কুল। আর এই স্কুলের শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়েছেন গ্রামের নারীরাই।
গ্রামে বসবাস করা সেইতা লেঙ্গিমা বলেন, ‘পুরুষবিহীন এই গ্রামের আমরা ২৫ বছরপূর্তি করছি। বাইরের জগতে পুরুষ দ্বারা নারীরা শাসিত হয়, তাই তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু উমোজার নারীরা সবাই স্বাধীন।’
অবশ্য উমোজার নারীরা যে পুরুষবিরোধী এমন কিন্তু নয়। কোনো পুরুষ চাইলে দিনের আলোতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবশ্যই গ্রাম ?ঘুরে দেখতে পারেন। তবে তার জন্য তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ।
কেনিয়ার মতো রক্ষণশীল সমাজে নারীদের এই উত্থান পুরুষরা সহজভাবে নেয়নি। নানাভাবে এখনো তারা উমোজার বিরোধিতা করে আসছে। হুমকি দিয়ে আসছে গ্রামে হামলা চালানোর। কিন্তু উমোজার নারীরা তাতে মোটেও দমে যায়নি। তারা সবাই এগিয়ে চলেছেন তাদের নিজেদের সম্মিলিত শক্তিতেই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন