যৌতুকের আগুনে ঝলসে হাসপাতালে কাতর গৃহবধু রুমি
‘বাবা-মায়ের অমতে যে মানুষটিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম সে যে এতটা পাষণ্ড হবে তা কল্পনাও করিনি। ঝলাসানো শরীর নিয়ে আমার সাত মাসের শিশু সন্তানকে বুকের দুধও খাওয়াতে পারছি না।’
যৌতুকের টাকা না দেয়ায় পাষণ্ড স্বামী আর শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের দেয়া আগুনে মারাত্মক দগ্ধ গৃহবধু রুমি বেগম শনিবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রমেক) বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন আর এসব কথা বলছিলেন।
ঘটনাটি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের। চাহিদামতো যৌতুকের টাকা না দেয়ায় স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এখানেই থেমে থাকেনি বর্বরতা। শরীরের আগুন নিভে যাওয়ার পর তাতে লবন ছিটিয়ে দেয়া হয়!
অগ্নিদগ্ধ গৃহবধুর বাবা রেজাউল করিম জানান, আড়াই বছর আগে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার ৫নং ফরিদপুর ইউনিয়নের চাঁদ করিম গ্রামের তারা মিয়ার পুত্র রায়হান মিয়ার সাথে তার মেয়ে রুমির বিয়ে হয়। বিয়ের আগে ছেলে পক্ষের লোকজন কোনো যৌতুক নেবেনা জানালেও পরে ১ লাখ টাকা দাবি করে মেয়ের শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। টাকা না দেয়ায় রুমির ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন।
এমনকি দাবিকৃত টাকা নিয়ে আসার জন্য একাধিকবার রুমিকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তারা।
রেজাউল করিম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘মেয়ের সুখের কথা ভেবে অনেক কষ্টে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে জামাইয়ের হাতে দিয়েছি। আরো ১০ হাজার টাকা পরে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাষণ্ড মানুষগুলো সেটা মানতে পারেনি। তাই মেয়েটাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে।’
অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু রুমি জানান, গত ১১ ফেব্রয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে তার স্বামী রায়হান তাকে বাবার বাড়ীতে গিয়ে বাকি ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলে। অন্যথায় সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে তার স্বামী সন্ধায় বাড়ীতে এসে তার ওপর চড়াও হয় এবং বলে যে ‘তুই এখনো বাপের বাড়ী যাসনি কেন?’
সে তখন তার স্বামীকে জানায়, তার বাবার কাছে এতো টাকা নেই। সে আর টাকা আনতে পারবেনা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে মারধর শুরু করে দেয় রায়হান। এসময় তার শ্বশুর ও শাশুড়ি এসেও মারতে থাকে। একপর্যায়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এমনকি আগুন নিভে যাওয়ার পর তার গায়ে লবন ডলে দেয়া হয়। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারাই তাকে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।
পরে সেখান থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রমেকের বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, অগ্নিদগ্ধ গৃহবধু শংকামুক্ত নয়। আগুনে শরীরের ৩৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। এছাড়া লবণ দেয়ার কারণে তার থুতনী ও বুকের মাঝখানে তিন চার জায়গায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে তার অপারেশন করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
এদিকে এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ গৃহবধুর বাবা রেজাউল করিম তার মেয়ে জামাই রায়হান, শ্বশুর তারা মিয়া ও শাশুড়ি রিনা বেগমকে আসামী করে সাদুল্লাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই রায়হানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর দু’জন এখনও পলাতক রয়েছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন