যৌনপল্লী থেকে মিতা, পিয়ালীদের তুলে এনে আলো দেখাচ্ছে এসআরবি
গান গাইতে খুব ভালবাসত সে। কিন্তু গান গাইলেই যে বাবা বড্ড মারে। তাই একদিন রাগ করে ক্যানিংয়ের বাড়ি থেকে পালিয়েছিল ১৪ বছরের মিতা। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পথ হারিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়েছিল সোনাগাছিতে। এক যৌনকর্মীর ঘরে আশ্রয় পাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিল, এখান থেকে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু মিতার আশঙ্কাকে মিথ্যে প্রমাণ করে তাকে উদ্ধার করেছিল ‘এসআরবি’ (সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ড)। সেই ঘটনার দশ বছর পর মিতা এখন এক জন পেশাদার গায়িকা।
শহরে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বসিরহাটের পিয়ালীকে সোনাগাছিতে নিয়ে চলে এসেছিল পরিচিত এক যুবক। তারপর সোনাগাছির এক দালালের কাছে পিয়ালীকে বিক্রি করে চম্পট দিয়েছিল সে। কিন্তু ইচ্ছের বিরুদ্ধে দেহব্যবসায় নামতে হয়নি পিয়ালীকে। দালালদের খপ্পর থেকে তাকেও উদ্ধার করেছিল এসআরবি। পিয়ালী এখন বারুইপুরের একটি হোমে যৌনকর্মীদের সন্তানদের পড়ায়।
মিতা বা পিয়ালী কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বহুদিন ধরেই যৌনপল্লীতে চলে আসা কোনও অনিচ্ছুক মেয়ে বা নাবালিকাদের উদ্ধার করে আসছে এসআরবি। তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে অথবা ব্যবস্থা করছে পুর্নবাসনের।
কী এই এসআরবি বা সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ড? এটি পুলিশের কোনও বিশেষ বাহিনী নয়। নেহাৎই যৌনকর্মীদের তৈরি করা একটি স্বনিয়ন্ত্রিত বোর্ড। এসআরবির এক সদস্যা কবিতা রায় জানান, আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০০০ সালে সূচনা হলেও এ রকম কিছু করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক দিন আগেই।
কিন্তু খোদ যৌনকর্মীরাই কেন উদ্যোগী হলেন?
কবিতাদেবী জানাচ্ছেন, মেয়ে বিক্রির একটি বড় চক্র সব সময়ই সক্রিয় ছিল সোনাগাছি এবং কলকাতার অন্য যৌনপল্লীগুলিতে। গ্রাম গঞ্জ থেকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেখিয়ে বা ভুলিয়ে-ভালিয়ে মেয়েদের এখানে নিয়ে আসা হত। তার পর তাদের বাধ্য করা হত যৌন পেশায় নামতে। প্রায়ই ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ত নাবালিকারা। অনিচ্ছুক কেউ কেউ পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যেত দালালদের হাতে। কপালে জুটত অকথ্য অত্যাচার। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই অবাধে চলত এই জুলুম। বাধা দিতে গেলে উড়ে আসত প্রাণনাশের হুমকি। কবিতাদেবী বলেন, ‘‘চোখের সামনে ছোট ছোট মেয়েগুলোকে দেখে খুব কষ্ট হত। আমরা বুঝেছিলাম, পুলিশ দিয়ে আটকানো যাবে না। তাই আমরাই যৌনকর্মীদের তৈরির কথা ভাবি।’’
কেমন ছিল শুরুর দিনগুলো?
এসআরবি-র অন্য এক সদস্যা কল্পনাদেবী জানান, যৌনকর্মীদের সংগঠনের কথা শুনেই আপত্তি এসেছিল নানা মহল থেকে। সেই সময় পাশে এসে দাঁড়ায় দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। তাদেরই হস্তক্ষেপে ২০০০ সালে পাঁচ জন যৌনকর্মী নিয়ে তৈরি হয় সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ড। সেই বোর্ডে চিকিৎসক, শিক্ষক, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়া বিভিন্ন পেশার আরও পাঁচ জন মানুষকেও রাখা হয়।
কী ভাবে কাজ করে এসআরবি?
কল্পনাদেবী জানাচ্ছেন, এসআরবির পক্ষ থেকে প্রতি দিন সোনাগাছির প্রত্যেকটি বাড়ি ঘুরে দেখা হয় নতুন কোনও মেয়ে এসেছে কি না? নতুন কেউ এলেই তাকে সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের সামনে হাজির করানো হয়। দিন কয়েকের জন্য রাখা হয় নিজস্ব হোমে। সেখান থেকেই যারা অনিচ্ছুক, তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। আর ইচ্ছুক হলেও যারা নাবালিকা তাদের দীর্ঘ সময় ধরে কাউন্সেলিং করা হয়। তারপর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় অন্য কোনও কাজের।
দুর্বারের মুখ্য উপদেষ্টা স্মরজিৎ জানা জানান, প্রতি বছর সাড়ে ছ’শো থেকে সাতশো নতুন মেয়ে সোনাগাছিতে আসে। তাদের মধ্যে অনেকেই অনিচ্ছুক এবং নাবালিকা। ২০০১ থেকে শুরু করে ২০১৪ পর্যন্ত এসআরবি ৭৮৪ জন নাবালিকা এবং ২০৯ জন অনিচ্ছুক মহিলাকে উদ্ধার করেছে বলে জানান তিনি।
কিন্তু শুরুর দিনগুলোয় এই উদ্ধার কাজ সহজ ছিল না বলেই জানাচ্ছেন এসআরবির সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, প্রথম প্রথম তাঁদের কেউ ঘরে ঢুকতে দিত না। মেয়েরা ভাবত তাদের বোধহয় ক্ষতি হবে। বিশ্বাস অর্জন করতে সময় লেগেছে অনেকটাই। সাধারণ যৌনকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন। এখন কোনও বাড়িতে নতুন মেয়ে এলে বাড়ির অন্য মেয়েরাই এসআরবিকে খবর দেয়।
কিন্তু এখনও সব সমস্যার সমাধান হয়নি বলেই জানাচ্ছেন কবিতাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েদের বাড়ি পাঠানোই মুশকিল হয়ে যায়। বাড়ির লোকে ফেরৎ নিতে চায় না। অনেক নাবালিকাও যৌন পেশা ছেড়ে অন্য কোনও কাজও করতে চায় না। বরং তাদের পেশা থেকে সরিয়ে আনলে তারা আমাদের গালাগালি করে। অভিশাপ দেয়।’’কাজ করে যাচ্ছেন কবিতাদেবী, কল্পনাদেবী, শেফালীদেবীরা। হোমে বসে নাবালিকাদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝানোর সময় তাঁদের যে মনে পড়ে যায় অনেক দিন আগেকার কথা। যখন অভাবের তাড়নায় চলে আসতে হয়েছিল সোনাগাছি, যখন খুব সংসার করতে ইচ্ছে করত আর যখন কোনও এসআরবি ছিল না!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
প্রকাশ্যে জানালেনঃ দুই পরিচালকের সঙ্গে ‘প্রেম’ ছিল পায়েলের
টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্বনামধন্য দুজন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী ও আবিরবিস্তারিত পড়ুন
প্রথম ‘সন্তানের’ জন্মলগ্নে কেঁদেছিলেন দেব ! দায়িত্ব অনেকটাই একা সামলাচ্ছেন তিনি
শিরোনাম পড়ে ভাবছেন, নায়ক দেব তো বিয়েই করেননি, তাহলে সন্তানবিস্তারিত পড়ুন
আলোচিত বাবা রাম রহিমের আয় কত, অনেকেই জানেনা?
ভারতের বিতর্কীত ধর্মগুরু বাবা রাম রহিমের পঞ্জাব, হরিয়ানায় স্থাবর সম্পত্তিরবিস্তারিত পড়ুন