রহস্যের মতো এসেছিল একদিন, হারিয়েও গেল সেভাবেই…
তা একবার সেই গরিব-রথেই সওয়ার হতে হয়েছিল। কড়া রোদ, ট্যাক্সি অমিল। হাতের কাছে অটো পেয়ে তাতেই চেপে বসেছিলাম। হাজরা মোড়ে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা। সেই বন্ধুটি ছিল অনেকটা দালাল-গোত্রের। তার বাপ ছিল ইনকাম ট্যাক্সের অফিসার।
আমার পার্স সর্বদা স্ফীত থাকত। একেবারে পেটমোটা বেওসায়িদের মতো। এই সব বেওসায়িদের অনেকের সঙ্গেই আমার পরিচিতি ছিল। তাদের কারও কাছে আমি ছিলাম ‘‘রমেশ কি ভাই’’, কারও কাছে ‘‘উমেশ কি ভাতিজা’’। এই রমেশ-উমেশরা কীভাবে যেন একটা সময়ে আমার পরমাত্মীয় হয়ে উঠেছিল। এঁদের জন্যই আমার পার্সে হাজার, দেড় হাজার, দু’হাজার সেঁধিয়ে যেত অনায়াসে। ‘ট্রিংকাজ’, ‘পিটার ক্যাট’ তখন আমার কাছে মামুলি ব্যাপার।
একদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া আর শরীরযাপন, অন্যদিকে কাঁচা টাকা। আমার চলছিল বেশ। চারিদিকে বেশ একটা খুশি খুশি ভাব। একেই বড়লোকের ছেলে। তায় পড়াশোনায় ভাল। বাবা-মা হাতে টাকা দিতেন ঢেলে। সঙ্গে আমার রোজগার। ট্যাক্সি চড়তাম গড়িয়াহাট থেকে রাসবিহারী।
অটো?
‘‘গরিবে চড়ে।’’
তা একবার সেই গরিব-রথেই সওয়ার হতে হয়েছিল। কড়া রোদ, ট্যাক্সি অমিল। হাতের কাছে অটো পেয়ে তাতেই চেপে বসেছিলাম। হাজরা মোড়ে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা। সেই বন্ধুটি ছিল অনেকটা দালাল-গোত্রের। তার বাপ ছিল ইনকাম ট্যাক্সের অফিসার। আর বড়বাজার, মেজোবাজার, সেজোবাজার থেকে ফায়দা তুলত সে। সেই সূত্রেই আমার ক্লায়েন্ট জোগাড় করত।
হাজরা মোড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় সে দাঁড়িয়ে ছিল আগেভাগেই। আমি যেতেই বলল, ‘‘ট্যাক্সি নে।’’ হাত নেড়ে হলদে-কালো (তখনও বেশ কয়েকটা ছিল) ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে তাতে উঠে পড়লাম দু’জন। ফস্ করে সিগারেট ধরিয়ে ড্রাইভারকে বলে দিল, ‘‘বালিগঞ্জ ফাঁড়ি চলুন।’’
জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘ব্যাপারটা কী রে?’’
‘‘চ না। দেখতে পাবি।’’
‘‘হেঁয়ালি ভাল লাগে না। খসাবি আজ, না?’’
‘‘আমি খসাব না। তবে তোর খসবে।’’
ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বটে।
‘‘ক্লায়েন্ট?’’
‘‘হুমমম…’’
‘‘বয়স?’’
‘‘তুই আবার বয়স কবে দেখলি?’’
‘‘না, তবু…’’
‘‘এই ধর চব্বিশ-ছাব্বিশ।’’
‘‘কোমরের মাপ বলছিস্?’’
খ্যাক খ্যাক করে পেটেন্ট নেওয়া বিশ্রী হাসিটা হাসল।
ল’কলেজ পেরিয়েই সে নির্দেশ দিল, ‘‘বাঁয়ে, বাঁয়ে…’’
ট্যাক্সি একটু ধিমে হতেই টুপ করে লাফিয়ে নেমে পড়ল। তার পরে নিজে বসল সামনে, অন্যজনকে বসাল পিছনে। আমার পাশে।
ধাপে ধাপে কাঁধ ছাপিয়ে পিঠে নেমে এসেছে চুল। বেশ একটা ঢেউ খেলানো ব্যাপার।
আড়চোখে দেখার ব্যাপারটা আমার কোনওদিনই ছিল না। তবে কথা বলার আগেই সামনের সিট থেকে ভেসে এল, ‘‘আমি গড়িয়াহাট পর্যন্ত। বাকিটা নিজেরা বুঝে নিস।’’
কথামতো গড়িয়াহাটে সে নেমে গিয়েছিল। ড্রাইভারকে আমি বলেছিলাম, ‘‘নলবন, সল্টলেক।’’ ট্যাক্সির মুখ ঘুরে গিয়েছিল বাইপাসের দিকে।
হাওয়া তো নয়, হলকা যেন। কাচ তোলা। প্রথম প্রশ্ন ছিল অনিবার্য, ‘‘আপনার নাম?’’
জেনেছিলাম।
তার পরে একে একে জানলাম, সে অবিবাহিতা। প্রবল সুন্দরী সে নয়। কিন্তু দেখলে তাকিয়ে থাকতে হবে কিছুক্ষণ। গড়ন আর পাঁচজন বাঙালি মেয়ের মতোই, ঈষৎ মেদ। শরীরে যেন যৌবনের পূর্ণিমা লেগেছে।
নলবনের সামনে নেমে ট্যাক্সির ভাড়াটা আমিই মিটিয়েছিলাম। তার পরে সেখানে ঢোকা, ছেঁড়া পর্দা-ঢাকা নৌকায় চড়া, আইসক্রিম খাওয়া, নিকো-পার্কে ক্ষুদ্র ভ্রমণ। আমি নিজেই পরে বিশ্বাস করতে পারিনি, এ সবের গোটা খরচ করেছি আমিই!
সে একবারও দেওয়ার কথা উচ্চারণ করেনি। শুধু হুকুম করে গিয়েছে, ‘‘এখানে যাব’’, ‘‘এটা খাব’’, ‘‘ওটা কিনে দাও’’ ইত্যাদি।
সন্ধে যখন হয়-হয়, তখনও আমি ভাবছি, ‘‘এ হচ্ছেটা কী?’’
হুকুম এল, ‘‘চায়না টাউন যাব।’’
অকপটে বলে দিলাম, ‘‘আর টাকা নেই। বাড়ি ফিরতে হবে।’’
যেন কথাটা শুনলই না। এগিয়ে গেল আর একটা ট্যাক্সির দিকে। পিছনে তাকানোর নাম নেই, আমি আসছি কি না, তার তোয়াক্কা যেন সে করেই না।
দরজা খুলে ঢুকে পড়ল, বন্ধ করল না। যে জানে, আমি যাবই। পিছনে পিছনে আমিও ঢুকেছি ট্যাক্সিতে। হুকুম হল, ‘‘চায়না টাউন।’’
ততক্ষণে আমি চুপ। এ কেমন ব্যক্তিত্ব! খেতে চায়, ঘুরতে চায়, দৌড়য়। কিন্তু এর থেকে বেশি আর একটাও কথা বলে না।
সে দিন চায়না টাউনের সব খরচ সে মিটিয়েছিল। আমার চার, তার তিন। মোট সাত পেগ ভদকা। ফ্রায়েড ক্রিসপি চিকেন, রাইস, ফিশ্। এই ছিল ‘মেনু’।
তার পরে ট্যাক্সি নিয়ে আমাকে বাড়ির কাছে নামিয়ে দিয়ে সে চলে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে অবশ্য আমার বাড়ির ফোন নম্বরটা চেয়ে নিয়েছিল (মোবাইল তখন কোথায়?)।
‘‘তোমার নম্বরটা?’’
‘‘দরকার নেই। প্রয়োজন বোধ করলে আমিই যোগাযোগ করে নেব।’’
সুগঠিত বাংলা, স্পষ্ট নিখুঁত উচ্চারণ মিলিয়ে গেল ট্যাক্সির বিকট শব্দে।
আমি বোকার মতো রাস্তায় দাঁড়়িয়ে রইলাম।
এ আবার কী! হিসেব করলে খরচ হয়েছে ফিফ্টি-ফিফ্টি। ঘুরলাম, ফিরলাম, খেলাম।
সেক্স!
সে তো অনেক দূরের কথা। হাতটুকু ধরিনি।
স্বীকার করে নিই, ধরার সাহস পর্যন্ত হয়নি। কারণ, একবারের জন্যও মনে হয়নি, ও ‘ক্লায়েন্ট’। এমন প্রখর ব্যক্তিত্ব আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি।
সে দিন ভেবেছিলাম, ‘‘যাক গে…মিটল এক পর্ব।’’
তখনও বুঝিনি, জীবনের সবথেকে বড় পর্বটার সূত্রপাত হল সবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন