রাজন ও মিলন হত্যার বিচার নজরদারিতে: মিজানুর
সিলেটে সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে নির্মম, অমানবিক, অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান । তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে রাজন হত্যার বিচার যেন দ্রুত হয়। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের ফৌজদারি আইনে বিচার হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
আজ মঙ্গলবার সিলেটে সামিউলের বাড়িতে যান মিজানুর রহমান। সেখানে তিনি নিহত সামিউলের মা, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নোয়াখালীর কিশোর মিলন হত্যার বিচার নিয়ে মানবাধিকার কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কড়া চিঠি দিয়েছে। কমিশন বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে।
মিজানুর বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, সামিউল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে। এই আশ্বাস কেবল আশ্বাস থাকলেই হবে না। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রকৃত অর্থেই এর দ্রুত বিচার হবে। যদি এই মামলা নিয়ে কোনো টালবাহানা চলে, তাহলে কমিশন চুপচাপ বসে থাকবে না।
দায়িত্বে অবহেলার জন্য যে তিনজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাঁদের অপরাধ ফৌজদারি অপরাধের সমতুল্য বলে মন্তব্য করেন মিজানুর। তিনি বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তো হবেই, এর বাইরে তাঁদের অপরাধ ফৌজদারির সমতুল্য। তাই ফৌজদারি আইনেও তাঁদের বিচার করা উচিত।
মিজানুর বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত পুলিশ সদস্যদের আচরণগত ত্রুটি নিয়ে কাজ করা। আইনি সহায়তার জন্য মানুষ থানায় যান। পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা এ রকম আচরণ প্রত্যাশা করেন না।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, রাষ্ট্রের উচিত সব ধরনের ফাঁকফোকর দূর করে তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। দ্রুত সময়ে যেন এই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। এই চার্জশিটে যেন কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটি না থাকে। আসামিরা যেন কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। যতক্ষণ না এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের নজরদারি থাকবে।
সামিউল হত্যা মামলায় সৌদি আরবে পালিয়ে থাকা আসামি কামরুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে তাঁকে ফিরিয়ে আনা কষ্টকর নয়। কামরুলকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র যে ধরনের আশ্বাস দিয়েছে সেটা যেন কেবল কথায় সীমাবদ্ধ না থাকে। আমরা দেখতে চাই কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় মুখোমুখি করা হয়েছে।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কিশোর শামছুদ্দিন মিলন হত্যার বিচার সম্পর্কে মিজানুর বলেন, এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো দফারফা হতে পারে না। এটি আইনের লঙ্ঘন। মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কড়া চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
সামিউলের ভাইয়ের সঙ্গে মিজানুর রহমান। ছবি: আনিস মাহমুদ৮ জুলাই সকালে সিলেট মহানগরের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে জনা চারেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, একজনের বয়স ৪৫ বছর, বড় রাস্তার ধারে দোকানঘরের খুঁটিতে বেঁধে লোহার রোলার দিয়ে পিটিয়ে রাজনকে হত্যা করেন। অভিযোগ, শিশুটি তাঁদের ওয়ার্কশপ থেকে একটি রিকশাভ্যান চুরি করছিল।
২০১১ সালের ২৭ জুলাই কোম্পানীগঞ্জের চর কাঁকড়া ইউনিয়নের নিরীহ কিশোর মিলনকে (১৬) ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ গাড়িতে করে এনে উন্মত্ত জনতার হাতে ছোট্ট এই কিশোরকে ছেড়ে দেয়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পুলিশের গাড়ি থেকে তাকে নামিয়ে দেওয়াসহ পুরো ঘটনাটির ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হলে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষ।
১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, মিলনের ছোট ভাইকে পুলিশে চাকরি দেওয়া এবং বাবাকে বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কিশোর শামছুদ্দিন মিলন হত্যা মামলা চালানো থেকে তাঁর পরিবারকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে স্থানীয় পুলিশ। তাদের পরামর্শে গত ২৪ ডিসেম্বর মিলনের মা মামলার বাদী কোহিনুর বেগম আদালতে ‘এজাহারনামীয় ও সন্দিগ্ধ ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নাই; আসামিরা অভিযোগের দায় হইতে মুক্তি পাইতে ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে কোনো আপত্তি নাই ও থাকিবে না’ মর্মে আবেদন করেন। এরপর মিলনের বাবাকে দেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। তারপর দ্রুতই মামলা ‘গুছিয়ে ফেলে’ পুলিশ। এ নিয়ে ২৭ জুলাই ‘বিচার মাটিচাপা দিল পুলিশ’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন