রাতে ঘুম আসছে না ? জেনে নিন কি করবেন
সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সকাল হলেই আবার ছুটতে হবে কাজে। বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করছেন, কিছুতেই ঘুম আসছে না। আমাদের সবারই কম-বেশি এ সমস্যায় পড়তে হয়। সাধারণত সমস্যাটি সাময়িক হয়ে থাকে। তবে দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত পার হলে বুঝতে হবে এর পেছনে কোনো না কোনো কারণ আছে।
নিয়মশৃঙ্খলা জীবনের সব কিছু পাল্টে দিতে পারে। ঘুমের ক্ষেত্রেও এটা অনেকটাই জরুরি। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। অধিক রাত অবধি কাজ করলে ঘুমের সমস্যা করতে পারে।
কিছু কিছু অভ্যাস আপনার এই সমস্যা দূর করতে পারে—
—বাইরে থেকে ফিরে প্রথমেই গোসল সেরে নিন। সারা দিনের ক্লান্তি এক নিমিষে চলে যাবে।
—সন্ধ্যার পরই চা-কফি খাওয়া বন্ধ করে দিন।
—ঘুমোতে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে টিভি, কম্পিউটার বন্ধ করুন।
—পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা আগেই করে ফেলুন, টেনশনে ঘুম নষ্ট হবে না।
—ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন।
—বেশি খেলে ঘুমোতে অসুবিধা হতে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খান।
—রাত ১০-১১টার মধ্যেই ঘুমোতে যান। এ সময় বিছানায় গেলে ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
—বিছানা আর শোবার ঘর যেন আরামদায়ক হয়। বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা যেন না হয় এবং সেখানে যেন বেশি আওয়াজ না হয়।
—নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। হাঁটা বা সাঁতার কাটা শরীরের জন্য ভালো। তবে ঘুমানোর আগে ভারী ব্যায়াম করলে ঘুম আসে না।
—রাতে ঘুমানোর আগে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে গা, হাত ও পা মুছে নিন।
—২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়ার সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় ছাড়া কখনোই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়া ঠিক নয়।
—প্রিয় জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখুন, সারা দিনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করুন।
—চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তা না করার।
—ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো লাগা যেকোনো বিষয়ে ভাবুন।
—সব ধরনের মাদক থেকে দূরে থাকুন।
—বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খাবেন না।
—যদি ঘুম না আসে, জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা না করে উঠে বই পড়ুন, টিভি দেখুন অথবা পছন্দের গান শুনুন।
—ঘরে বেশি আলো ঢুকে যেন ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটায় তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে ভারী পর্দা ব্যবহার করুন।
—শোবার ঘরটি অযথা একগাদা জিনিস দিয়ে ভরে রাখবেন না।
—রাতে ঘুম না হলে,পরদিন দিনের বেলা ঘুমোবেন না। তাহলে ফের সেদিন রাতে ঘুম আসতে অসুবিধা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন অন্তত ছয় ঘণ্টা গভীর ঘুম হতে হবে। বন্ধুরা এতকিছু করার পরও যদি ঘুমের সমস্যা না যায়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এবার জেনে নিন রাতে ঘুম না আসার বেশ করেকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ, মিলিয়ে নিন এগুলির কোনোটি আপনার হচ্ছে কিনা:
নারকোলেপ্সি:
এটি সচরাচর ঘটে না, এবং অনেক সময় ডাক্তাররা এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। এর দুটি প্রধান উপসর্গ হলঃ
১। দিনের বেলায় ঘুম পায় এবং হঠাৎ হঠাৎ সাংঘাতিক ঘুম পেয়ে যায় (এমনকি আপনি অন্য লোকের সঙ্গে থাকলেও)।
২। আপনি হঠাৎ হাসলে, রাগলে বা উত্তেজিত হলে আপনার মাংসপেশির উপর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এবং আপনি পড়ে যান। একে বলে ক্যাটাপ্লেক্সি।
এছারাও এই রোগের কারনে আোনেক সময় ঘুমিয়ে পড়ার আগে বা ঘুম থেকে উঠে আপনি কথা বলতে বা নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়। আবার অনেক সময় স্বপ্নের মত ছবি বা উল্টোপাল্টা কথাবার্তা শুনতে পঅয়া যায়।
স্লিপ অ্যাপ্নিয়া:
১। আপনি রাতে নাক ডাকিয়ে ঘুমোন এবং থেকে থেকে আপনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় (অল্প সময়ের জন্য)।এর কারণ ক্ষণিকের জন্য আপনার শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যায়।
২। নিশ্বাস বন্ধ হলে আপনি হঠাৎ জেগে যান এবং আপনার হাতপা বা পুরো শরীর কেঁপে ওঠে।
৩। জেগে উঠেই আপনি ফের ঘুমিয়ে পড়েন।
৪। এটা রাতে অনেক বার হতে পারে। আপনার পরদিন ক্লান্ত লাগবে, কখনো কখনো মুখ শুকিয়ে যেতে পারে বা মাথা ধরতে পারে। দিনের বেলা হঠাৎ হঠাৎ ভীষণ ঘুম পাবে।
এটি বেশি হয়
-বয়স্কদের
-যাঁদের ওজন বেশি
-যাঁরা ধূমপান করেন
-যাঁরা অত্যধিক মদ্যপান করেন
কখনো কখনো রোগীর বদলে রোগীর বাড়ির লোকে আগে সমস্যাটা লক্ষ্য করেন। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা শুরু হয় আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে।
নাইট টেরর:
নাইট টেরর এমনিই হতে পারে অথবা এর সঙ্গে লোকে ঘুমের মধ্যে হাঁটতে পারে। নাইট টেররেও মনে হয় যে গভীর ঘুম থেকে মানুষ জেগে গেল। তারপর আধোঘুমে আধো জাগরণে তাঁরা থাকেন এবং খুব ভয় পান। সাধারণতঃ তাঁরা আর পুরোপুরি জাগেন না, ফের ঘুমিয়ে পড়েন। সে ফের ঘুমিয়ে পড়া অবধি বসে থাকা ছাড়া আপনার আর বিশেষ কিছু করার নেই।
নাইট টেরর এবং দুঃস্বপ্ন এক জিনিষ নয়। নাইট টেররের কথা পরদিন আর কিছু মনে থাকে না।
রেস্টলেস লেগস সিন্ড্রোম:
১। আপনার সবসময় পা নড়বে (কখনো কখনো শরীরের অন্যান্য অংশও)
২। পায়ে ব্যথা বা জ্বলুনি হতে পারে
৩। শুধু যখন রেস্ট নিচ্ছেন তখন এইসব অসুবিধা হয়
৪। রাতে কষ্ট বাড়ে
৫। হাঁটলে বা নড়াচড়া করলে কষ্ট কমে
আপনি হয়ত দিনের বেলা বসে ঠিকমত কাজ করতে পারবেন না, এবং রাতে ঠিকমত ঘুম হবে না।
রোগীরা সাধারণতঃ মধ্যবয়সে চিকিৎসা করাতে আসেন, যদিও তাঁরা ছোটোবেলা থেকে এতে ভুগছেন। অসুখটি বংশগত, পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এই অসুবিধা থাকতে পারে। এছাড়া প্রেগন্যান্সিতে,ডায়াবেটিস বা কিডনির অসুখে অথবা আয়রন বা ভিটামিনের অভাবে এই ওসুখ হতে পারে।
যদি অন্য কারণ না থাকে তবে রেস্টলেস লেগস সিন্ড্রোমের চিকিৎসা নির্ভর করে অসুখের তীব্রতার উপর। অল্প স্বল্প অসুবিধা হলে ভালো ঘুমানোর সহজ টিপস অনুযায়ী চললে সুরাহা হয়।
অটিজম:
এই অসুখে রাতে ঘুমোতে হয় এই বোধই থাকে না। সবাই যখন ঘুমোয় তখন এরা জেগে থাকে। এক্ষেত্রে স্পেসালিষ্টের কাছে যাওয়াই শ্রেয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন