রামপাল ঘিরে আরেক আশঙ্কা
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে নতুন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটার এলাকার ভিতরে শিল্প কারাখানা নির্মানের অনুমতি না থাকলেও সেখানে এখন নানা শিল্প কারাখানা স্থাপনের জন্য অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানই জমি কিনছে৷
স্থানীয় এক সাংবাদিক সরেজমিনে পরিদর্শন জানান, ওই এলকায়, বিশেষ করে পশুর নদীর তীরে এখন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা যায়৷ দু’একটি প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজও শেষ করেছে৷ আরো অনেকেই শিল্প কারাখানা করার জন্য প্লট কিনছেন৷
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষা ২০১১ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত যে উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছে তাতে সুন্দরবনের আশপাশের ১০ কি.মি. এলাকাকে কৃষি জমি হিসেবে দেখিয়েছে৷ আর সুন্দরবন সংলগ্ন ১৮ কি.মি. এলাকা বাফার জোন৷ এখানে কোনো শিল্প কারখানা নির্মানের আইনগত সুযোগ নেই৷তারপরও তা কেউ মানছেনা৷
জানা গেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুবিধা নিতে সুন্দরবনের আশপাশে এরই মধ্যে ৩০০ শিল্পগোষ্ঠী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আশপাশের গ্রামগুলোয় প্রায় ১০ হাজার একর জমি কিনেছেন৷ আর এর মালিক প্রভাবশালী, বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা৷ তারা পরিবেশের ছাড়পত্রও নিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
ছাড়পত্র পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫০টি চালকল, ১৯টি করাতকল, সিমেন্ট কারখানা ৯টি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরন প্রতিষ্ঠান ১৩টি, ৬টি অটো মিল, ৪টি লবণ-পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্প, দু’টি জাহাজ নির্মান প্রকল্প ও অন্যান্য ৩৮ টি প্রকল্প রয়েছে৷
পরিবেশ অধিদপ্তর সুন্দরবনের ১০ কি.মি. এলাকায় এরইমধ্যে ১৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পকে অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছে, যদিও সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কি. মি. এলাকা ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’৷
২০১০ সালে সুন্দরবন এলাকার পশুর নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে নদী ও খালের বেশ কিছু জলাভূমি জলজ প্রাণী সংরক্ষণের স্বার্থে ‘বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে৷ তেলবাহী ট্যাংকার ও মালবাহী কার্গো চলাচল অভয়ারণ্যের প্রাণিকুলের জন্য বিপজ্জনক হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তখন সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেন৷
বাগেরহাটের স্থানীয় সাংবাদিক আবুল হাসান জানান,‘‘অনেকেই মনে করছেন রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হলে শিল্পে সুবিধা পাওয়া যাবে৷ এ কারণে বড় বড় শিল্পগ্রুপ সুন্দরবন এবং রামপালের আশপাশে শিল্প কারাখানা স্থাপনের জন্য প্লট কিনেছে৷ আর জমির দাম বেশি দেওয়ায় স্থানীয়রা জমি বিক্রি করতে বেশ আগ্রহী৷”
তিনি জানান, ‘‘সুন্দরবনের পশুর নদীর তীরে এখন সাইনবোর্ডের হাট বসেছে৷ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের প্রস্তাবিত শিল্প কারাখানার সাইনবোর্ড৷ কেউ দেয়াল তুলে জায়গা ঘিরে ফেলেছেন, আবার কেউবা নির্মান কাজ শেষ করেছেন৷ স্থানীয় প্রশাসন কথা বলছেনা৷ তারা শুধু বলছে বড় বড় শিল্প গ্রুপ নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়া কাজ করছেনা৷”
এদিকে সুন্দরবনের এক চতুর্থাংশ এলাকা দখল হয়ে গেছে৷ রামাপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লা লাগবে৷ আরো অনেক শিল্প কারখানার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে জাহাজ চলাচল অনেক বেড়ে যাবে, যা সুন্দরবনের প্রাণ ও পরিবেশ বৈচিত্রকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে বলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মুখপাত্র ইকবাল হাবিব মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছেও তথ্য আছে যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবিধা নিতে ওই এলাকায় এখন জমি কিনে শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে৷ এটা সুন্দরবনকে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷ ওই সব শিল্প কারখানার বর্জ্য নতুন আরেক সঙ্কটের সৃষ্টি করবে৷ আমরা ভাবতে পারিনা যে তারা কিভাবে পরিবেশের ছাড়পত্র পায়, কিভাবে শিল্প স্থাপনের অনুমতি পায়৷”
তবে এ ব্যাপারে শিল্প ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি৷ আর সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘বনের বাইরে কী হলো সেটা দেখার এখতিয়ার আমাদের নাই৷ এটা পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের কাজ৷ তারাই সুন্দরবনের আশপাশের ১০-১৪ কি.মি এলাকাকে ক্রিটিক্যাল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷”
তারপরও বনের রক্ষনাবেক্ষনের স্বার্থে কোনো অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে৷”
প্রসঙ্গত, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাগেরহাটের রামপালে ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে তা বালু দিয়ে এরইমধ্যে ভরাট করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মাত্র ৯ থেকে ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে৷ তবে সরকার দাবি করছে, সুন্দরবনের বাফারজোনের ১৪ কিলোমিটার দূরে৷
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-র সঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)-এর সঙ্গে দু’টি চুক্তি সই হয়েছে৷ আর এই বিদ্যুৎ উদপাদনে ব্যবহার করা হবে কয়লা৷ রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র৷ এই কয়লা ভারত থেকে আমাদানি করা হবে বলে জানা গেছে৷ প্রকল্পে অর্থের যোগান দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক৷ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে৷ এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা৷
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে৷ ভারত এবং বাংলাদেশ প্রকল্পটিতে ৩০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে৷ বাকি ৭০ ভাগ অর্থ ঋণ নেওয়া হবে৷ ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে৷ সূত্র : ডয়েচে ভেলে
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন