শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম: একটি মতলবি বিতর্ক

মাসুদ কামাল:
গত ২৮ মার্চ সোমবার দুপুরের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আমি কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। অফিসে যাচ্ছিলাম, ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার আজ কোনো সরকারি ছুটি আছে নাকি? রাস্তায় গাড়ি এত কম কেন? ড্রাইভার বললেন, আজ হুজুরদের হরতাল, জানেন না? আমি জানতাম কিছুটা। তারপরও জানতে চাইলাম কেন হরতাল? জানেন কিছু? উনি বললেন, তা বলতে পারব না। তবে হুজুরদের হরতাল মানেই তো আগুন, ভাংচুর। তাই ভয়ে প্রাইভেট গাড়ি তেমন বের হয়নি।

অফিসে পৌঁছার আগেই জেনে গেলাম, রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। না করে দিলে কি হতো? আবার কি শুরু হতো ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও? আদালতের রায়ের আগেই সম্ভাব্য রায় নিয়ে যদি হরতাল ডাকা যায়, তাহলে রায় পছন্দ না হলে যে কি তা-ব চলত অথবা তারা চালাতে চাইতেন তা নিয়ে আশঙ্কা করাই যায়। আচ্ছা, রায়ের আগে হরতাল আহ্বান কি প্রকারান্তরে বিচারকের ওপর প্রভাব বিস্তারেরই নামান্তর নয়?

রিট খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ফেসবুকে দেখলাম স্ট্যাটাসের ঝড়। একজন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ, ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে ইসলাম রক্ষা পেল। বুঝলাম না, রিট বাতিল না হলে ইসলামের কি ক্ষতি হতো? মানুষের কোনো আদালত, রাষ্ট্রের কোনো আইন বা সংবিধানের কোন ধারায় কি আছে তার ওপর কি ইসলামের অস্তিত্ব নির্ভর করে? পৃথিবীর অনেক দেশের আদালতেই ইসলামবিরোধী রায় দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ দেশের সংবিধানে ইসলাম শব্দটি পর্যন্ত নেই। তাতে কি ওইসব দেশ থেকে ইসলাম উঠে গেছে?

রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ এর উপস্থিতি একমাত্র আমাদের সংবিধানেই আছে। সাংবিধানিক এই স্বীকৃতি কি ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ? ইসলাম তো দুর্নীতি কিংবা ব্যভিচারকে সমর্থন করে না। বরং এ দুটিকে একেবারে নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য করে। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে যিনি বলতে গেলে প্রায় একক সিদ্ধান্তে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তিনি হচ্ছেন সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ। এই ব্যক্তিটি কেবল এই কারণেই ইতিহাসের পাতায় থাকবেন তা নয়, বরং কোন দেশের রাষ্ট্রনায়ক কতটা দুর্নীতিবাজ ও ব্যভিচারী হতে পারে তার উদাহরণ হিসেবেও তার নাম উচ্চারিত হবে অনেক বছর।

দুর্নীতি ও ব্যভিচারের সঙ্গে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মে পরিণত করাকে কীভাবে মেলানো যায় তা নিয়েও হয়ত অনেক গবেষণা হবে। তারপর হয়ত প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে যে, সংবিধানে এই রাষ্ট্রধর্ম বিষয়টাকে ঢুকিয়ে দেওয়া মোটেই ইসলামের প্রতি ভালোবাসা থেকে নয়, বরং পুরোটাই একজন স্বৈরাচারীর মতলবি কূটচাল। তারও চেয়ে বড় কথা, এই সময়ে এসে এই যে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের অন্তর্ভুক্তির রিট নিয়ে শুনানি, রায়, বিতর্ক, প্রতিবাদ, হুঙ্কারÑ এর কোনো কিছুকেই যেন ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।

এই যে রিটটি খারিজ করে দেওয়া হলো, এটা ঠিক কোন গ্রাউন্ডে খারিজ হলো, তা নিয়ে কি খুব একটা আলোচনা হয়েছে? শুনানিতে কি সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা না থাকা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বিতর্ক হয়েছে? না, তার কিছুই হয়নি। আদালতে আসল বিষয়টি নিয়ে কোনো শুনানিই হয়নি। উচিত-অনুচিত নিয়ে কোনোই আলোচনা হয়নি। কোনো শুনানি ছাড়াই ভিন্ন একটি কারণে আদালত রিটটি খারিজ করে দিয়েছে।

এই রিট আবেদনটি হয়েছিল আজ থেকে ২৮ বছর আগে। ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদনটি করেছিলেন। এদের মধ্যে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, দুইজন বিচারপতিও ছিলেন। ১৫ জনের মধ্যে ১০-১১ জন ইতিমধ্যে মারাও গেছেন। রিটটি করেছিলেন তারা ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে। সেই সংগঠনটিও এখন বিলুপ্ত। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করতেও এই সংগঠনের জন্ম। এরশাদের পতনের পর স্বভাবতই এর বিলুপ্তি ঘটেছে। ২৮ বছর ধরে এই রিট আবেদনটি পড়ে ছিল। এতদিন পর শুনানির জন্য উঠলে আদালত প্রথমেই জানতে চান সংগঠনটির অস্তিত্ব সম্পর্কে, এই রিট করার এখতিয়ার এমন একটি সংগঠনের আছে কি না সেটাও জানতে চান। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত দেনÑ এই কমিটির পক্ষে এ ধরনের রিট আবেদনের কোনো এখতিয়ারই নেই। তাই রিট খারিজ।

আসলে দুনিয়াতে সব ঘটনাকেই তার সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে বিচার করা দরকার। ২৮ বছর আগে যারা এই রিট আবেদনটি করেছিলেন, তারা সবাই সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি, মুক্তবুদ্ধির মানুষ হিসেবে তাদের একটা পরিচিতিও ছিল। সেই সময়ে অন্য একটা বাস্তবতাও ছিল। স্বৈরাচারী এরশাদের প্রতি একটা সার্বজনীন ঘৃণা ছিল। এখন তা নেই। এরশাদকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার মানুষের অভাব নেই। যারা ক্ষমতায় আছেন, ছিলেন এবং আগামীতে আসতে চানÑ তাদের সবার কাছেই এরশাদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। এরশাদ প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেন, তারপরও তারা এরশাদকে ভালোবেসে নিজের দলে বা জোটে টানতে চান। কাজেই এত বছর পর নিশ্চয়ই তারা চাইবেন না তাদের প্রিয় ভৃত্যের কোনো অপমান হোক।

রিট আবেদনের সময়টিকে যেমন স্মরণে রাখা দরকার, তেমনি জরুরি এই রিট খারিজের সময়টিকেও বিবেচনায় নেওয়া। এমনিতে বাঙালি খুবই ভুলো মনের। দ্রুত তার ভুলে যায় অতীতকে। গুরুত্বপূর্ণ নিকট অতীতকে ভুলে গিয়ে প্রায়ই তারা গুরুত্বহীন দূরবর্তী অতীত নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয়। গত কয়েক সপ্তাহে ঘটনা কিন্তু কম ঘটেনি এই ভূখ-ে। খুন-খারাবি-গুম তো ঘটেই চলেছে একের পর এক। এসবের বাইরে সবচেয়ে বড় একটা ঘটনা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়ে যাওয়া। এর পরপরই প্রধান বিচারপতির সততা নিয়ে দুই মন্ত্রীর বালসুলভ মন্তব্য।

এসব নিয়ে যখন দেশ উত্তাল, ঠিক তখনই উঠে এলো ২৮ বছরের পুরনো একটা রিট আবেদন। আইন সম্পর্কে যাদের কিছুমাত্র পড়াশোনা আছে, তারাও জানেন এত পুরনো একটা রিট, যার আবেদনকারীরই এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই, সেটি টিকতে পারে না। তারপরও একে নিয়ে আগে থেকেই এমন একটা আওয়াজ তোলা হলো, যেন এই এক রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম চলেই গেল! আর যায় কোথায়, কাছা বেঁধে নেমে পড়লেন বীর পুঙ্গবেরা। বিশেষ গোষ্ঠীর মতলবি বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন সবাই। ঢাকা টাইমস

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

আহা চিকুনগুনিয়া !

ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমিবিস্তারিত পড়ুন

‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’

চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়েরবিস্তারিত পড়ুন

ধর্ষিতা মেয়েটির গল্প

পারিনি সেদিন নিজেকে শোষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে, পারিনি সেদিনবিস্তারিত পড়ুন

  • যা হবে কবিতা লিখে…!
  • কাটাপ্পা বাহুবলির পর এইবার হিরো আলম ড্রেস?
  • দর্শক যেভাবে বুঝলেন যে মাশরাফির স্ত্রী ক্রিকেট খেলেন না!
  • ‘‘আজকাল আইসিসির সহযোগিতা ছাড়া মাশরাফি-তামিমদের বিপক্ষে জেতা যায় নাকি’’
  • গরু খোঁজা (একটি গল্প)
  • যেসব খাতে ভ্যাট বসানো অতি জরুরি
  • ভাড়া ১০০ টাকা, ভ্যাট-ট্যাক্স মিলে ২৪০!
  • দুদকের হয়ে কেস লড়তে চান কেডি পাঠক
  • শততম টেস্টে আম্পায়ার কেন ওই রকম করলেন?
  • রিক্সা চালাই বিয়ে করেছিলাম, আমার মতই এক গরীবের মেয়েকে বউ করে এনেছিলাম —
  • নারীর দাস জীবন এবং একজন সাদিয়া নাসরিন
  • আজকের এ দিনে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো ঢাকার রাজপথ