রাষ্ট্রপতির মনোভাব দেখে আলোচ্য ঠিক করবে বিএনপি
নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে একেবারে নিঃশঙ্ক নয় বিএনপি। কেননা দিনশেষে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই সিদ্ধান্ত টানবেন রাষ্ট্রপতি, এটা অজানা নয় তাদের। তাই ইসি গঠন নিয়ে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করা, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখাসহ যেসব বিষয় আলোচনা করতে চায় বিএনপি, তার সবকিছুই নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতির মনোভাবের ওপর। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে বঙ্গভবনে যাবেন দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে বিএনপির এমন চিন্তাভাবনার কথা জানা যায়।
তবে রাষ্ট্রপতির সংলাপ আহ্বানকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে দলটি। তাই নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনার মাধ্যমে বৈঠকের আলো্চ্য বিষয় ঠিক করেছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে রবিবার বিকালে বিএনপির সঙ্গে বসবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বঙ্গভবনে যাবেন দলের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নামের তালিকা বঙ্গভবনে জমা দেয়া হয়েছে।
তবে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ওই ১০ সদস্য ছাড়াও আরো কয়েকজনকে প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত করতে রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন জানিয়েছে দলটি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, রবিবার বেলা তিনটায় গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে বের হয়ে প্রথমে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন খালেদা জিয়া। সেখান থেকে প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের নিয়ে একত্রে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
জানা গেছে, প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
ইসি গঠনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সংলাপ শুরু হচ্ছে বিএনপিকে দিয়ে। ২০১২ সালেও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে ইসি গঠন করেছিলেন, যদিও পরে বিএনপি অভিযোগ করে- মতামত নেয়া হলেও সরকারের পছন্দ অনুযায়ী সে সময় নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি।
তবে এবার দলটির নেতারা সভা-সমাবেশের বক্তব্যে প্রত্যাশা করছেন, একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ অবশ্যই ফলপ্রস হবে।
প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে এমন বক্তব্য দিলেও ভেতরে ভেতরে দলটির নেতারা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা মনে করছেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের বাইরে তার যাওয়ার সুযোগ কম। তবু শেষ পর্যন্ত কী হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখার কথা বলছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
জানা গেছে, নির্বা্চন কমিশন গঠন নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, তার আলোকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করবে দলটি। বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের আলোচনার মূল ভিত্তি হবে ১৩ দফা।
তবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সার্চ কমিটির জন্য ১০ জনের নাম দিতে পারে বিএনপি। সার্চ কমিটির তালিকায় সাবেক চার প্রধান বিচারপতির নাম থাকতে পারে। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর নাম ও বৈঠকের আলোচনার বিষয় চূড়ান্ত করেছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদসহ আরো দু-একজন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সার্চ কমিটি গঠনে খালেদা জিয়া সাবেক চার প্রধান বিচারপতির নাম প্রস্তাব করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছে মাহমুদুল আমিন চৌধুরী, সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের নাম। অবশ্য এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা। তবে তারা মনে করছেন, আলোচনার পর বিএনপির প্রস্তাব আমলে নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিএনপির যে প্রতিনিধিদল, তার একজন সম্ভাব্য সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাবের বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে চাচ্ছি না। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যা সবচেয়ে ভালো হবে সেটাই প্রত্যাশা করব। আমাদের দাবিও তাই হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির মনোভাব ও বৈঠকের পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে তাদের আলোচনা। রাষ্ট্রপতি চাইলে নাম প্রস্তাব করা হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়েও কথা হবে। এ ছাড়া সুযোগ হলে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বৈঠকের পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ না হলে এসব বিষয়ে আলোচনা নাও বাড়তে পারে ।’
বিএনপি রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ নিয়ে কতটা আশাবাদী- জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘আগে সবার সঙ্গে আলোচনা হোক। বৈঠকের সময় পরিবেশ দেখলেই বোঝা যাবে রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ লোক দেখানো, না সত্যিই আন্তরিক। তবে আমরা আশা করি, তার এই্ উদ্যোগ যেন কিছুটা হলেও ফলপ্রসূ হয়। তাহলে এই পদটি আরো উজ্জ্বল হবে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন