রিশা হত্যার সবই ‘জানা’, পুলিশের তদন্তে তবু ‘বিলম্ব’
পুলিশের তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা আর ‘যুক্তিহীন বিলম্বের’ আরেক উদাহরণ রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা মামলা। এই মামলার প্রধান সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেন, কখন আর কীভাবে রিশার ওপর আক্রমণ করেছেন, তার সবই আদালতে বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। তবু পুলিশ কেন প্রতিবেদন দিচ্ছে না সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহত কিশোরীর বাবা।
কেবল এই হত্যা মামলা নয়, সিলেটের আলোচিত কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলাতে ভিডিওচিত্র থাকার পরও পুলিশ এই মামলার প্রতিবেদন দিতে পারেনি প্রায় চার সপ্তাহেও।
গত ২৪ আগস্ট রিশাকে স্কুলের পাশে ছুরিকাঘাত করার এক সপ্তাহের মধ্যে ৩১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সন্দেহভাজন ওবায়দুল হককে নীলফামারী থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এর তিন দিন আগেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় রিশা।
এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল রাজধানীতে। খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম যোগ দিয়েছিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের কর্মসূটিতে। দিয়েছিলেন দ্রুত বিচারের আশ্বাস।
কিন্তু এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে, দুই মাস। পুলিশ প্রতিবেদনই জমা দিতে পারেনি। এই অবস্থায় সন্দেহ দানা বাঁধছে রিশার বাবা রমজান হোসেনের মনে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘তিন-চারদিন আগেও ফোন দিয়েছিলাম তদন্ত কর্মকর্তাকে। তিনি আমাকে বলেছেন, বিষয়টি জটিল।’
রমজান হোসেন বলেন, ‘আমার এখন সন্দেহ হয়, ওপর মহল থেকে কোনো চাপ আছে কি না, নইলে এতো সময় কেন লাগবে?’
তবে নিজের মেয়ে হত্যায় সন্দেহভাজন ওবায়দুলকে সহজে পার পেতে দেবেন না বলে জানান রিশার বাবা। বলেন, ‘চার্জশিট ঠিক মত না দিলে আমি আবার সাংবাদিকদের ডাকবো।’
এই হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে রাজধানীর রমনা থানা পুলিশ। কেন এখনও প্রতিবেদন দেয়া হয়নি- জানতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে এই মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হতে পারে।’
পুলিশ সব কিছুই ‘জেনেছে’ দেড় মাস আগে
পুলিশ জানিয়েছে, রিশাকে হত্যার অভিযোগে আটক ওবায়দুল তাদেরকে জানায়, প্রেমের আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় রিশাকে খুন করেছে সে। এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পাওয়ার দাবিও করেছে বাহিনীটি। কর্মকর্তারা জানান, ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছে, গত ২৪ অক্টোবর হাতিরপুল বাজার থেকে ১৩০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কিনে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে যায় সে। ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে রিশা সড়ক পার হওয়ার সময় তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যা ওবায়দুল। এ সময় কাকরাইলের রাজস্ব ভবনের পাশে ছুরিটি ফেলে দেয়া হয়।
৩১ আগস্ট আটকের পর ৬ সেপ্টম্বর বৃহস্পতিবার ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় ওবায়দুলকে। কিন্তু রিমান্ড শেষ হওয়ার একদিন আগে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবিব তার নিজের কক্ষে ওবায়দুলের জবানবন্দি দেয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন বিচারক।
পুলিশ জানায়, রিশার মৃত্যুর প্রায় পাঁচ-ছয় মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলে বৈশাখী টেইলার্স নামে একটি টেইলার দোকানে জামা বানাতে দেয় রিশা। ওই সময় তার মোবাইল নম্বরটিও দেয়া হয়। এরপর থেকে ওই টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল রিশাকে প্রায়ই ফোন করে উত্ত্যক্ত করতো। পরে বাধ্য হয়ে ফোনের ওই সিমটি বন্ধ করে দেয় রিশা। এরপর স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই রিশাকে বিরক্ত করত ওবায়দুল। সে স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত।
পুলিশের দাবি মতে, সব কিছুই পরিষ্কার তাদের কাছে। মামলায় আর কোনো আসমিও নেই। দেড় মাস আগে সব যদি জানাই যায়, তাহলে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কেন দুই মাস সময় লাগবে- সে বিষয়টি বুঝতেও পারছেন রিশার বাবা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক সময়ে আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও তা যাচাই বাছাই করতে হয়। দ্রুত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে তা ভুল হতে পারে এই কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার প্রতিবেদন দেওয়ার আগে সঠিক তথ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ করেন।’
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা সরমিন বলেন, ‘নারী শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় ১২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দেবেন। অন্যথায় মামলায় হেরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে সিটি কলেজ সরিয়ে নেওয়ার দাবি ঢাকা কলেজের
ঢাকার সায়েন্সল্যাব মোড় এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদেরবিস্তারিত পড়ুন
ড. ইউনূস: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে, এটি ত্রুটিপূর্ণ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “মানুষ জন্মগতভাবে উদ্যোক্তা।বিস্তারিত পড়ুন
আইসিটি অধ্যাদেশ অনুমোদন, ধারণ করা যাবে বিচার প্রক্রিয়ার অডিও-ভিডিও
‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনবিস্তারিত পড়ুন